১০:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকার রাস্তায় চলতে যাচ্ছে ব্যাটারি রিকশা

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৫১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • 113

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও তিন চাকার যানবাহন চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে।
  • আদালত আগেই ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
  • এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান।
  • এখন সরকার আইন সংশোধন করে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
  • দায়িত্বশীলদের প্রত্যাশা, লাইসেন্স পেলে এসব যানবাহন নিয়মের আওতায় আসবে।
  • তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, এর ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট আরও বেড়ে যেতে পারে।

ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক, পাখিসহ তিন চাকার বিভিন্ন বাহন বহুদিন ধরেই চলছে। এদের নির্দিষ্ট কোনো নিবন্ধন বা অনুমোদন না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গবেষণা ও সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৮ থেকে ৫০ লাখের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অনুরূপ যানবাহন চলছে।

হাইকোর্টের নির্দেশ ও চালকদের প্রতিবাদ

  • হাইকোর্টের নির্দেশ: গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
  • প্রতিবাদ: এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর রিকশাচালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
  • স্থিতাবস্থা: পরে ২৫ নভেম্বর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে, ফলে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত থাকে।

আইনি সংশোধন ও সরকারের উদ্যোগ

  • আইন সংশোধনের প্রস্তাব: স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর তফসিলের একটি অংশ সংশোধন করে সিটি করপোরেশনকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
  • নতুন খসড়া: স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে আইন সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠিয়েছে। পরবর্তী ধাপে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হবে

  • সংশোধিত আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করবে।
  • ওই সময়ের মধ্যে যদি কেউ লাইসেন্স না নেয়, তবে তার ব্যাটারিচালিত রিকশা বা যানবাহন মহানগরীতে চলাচল করতে পারবে না।
  • সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, আইনিভাবে রেজিস্ট্রেশন হলে এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও উদ্বেগ

  • রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন চাকার এসব বাহনের দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৪২২ জন নিহত হয়েছেন।
  • অনেকের আশঙ্কা, লাইসেন্স পেলে এ ধরনের যানের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, যা যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে।
  • এ ছাড়া অননুমোদিত রিকশাগুলো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বাড়তি চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

  • কমিটি গঠন: আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে।
  • আলোচনা: পুলিশ, বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
  • আইনি জটিলতা: মোটরযানের লাইসেন্স সাধারণত বিআরটিএ-ই দিয়ে থাকে। তবে সংশোধিত আইনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মোটরযানের মধ্যে পড়বে কি না, তা আইন বাস্তবায়নের পরই স্পষ্ট হবে।

উপসংহার

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হলে এসব যানবাহন বৈধভাবে চলাচল করতে পারবে। এতে রিকশাচালক ও যাত্রী—উভয়েরই সুবিধা বাড়তে পারে। তবে দুর্ঘটনা ও যানজটের ঝুঁকি মাথায় রেখে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও কঠোর নজরদারি দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাস্তবভিত্তিক নিয়মকানুন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগই এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘জীবন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং শক্তির বিষয় নয়’

ঢাকার রাস্তায় চলতে যাচ্ছে ব্যাটারি রিকশা

০৫:৫১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও তিন চাকার যানবাহন চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে।
  • আদালত আগেই ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
  • এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান।
  • এখন সরকার আইন সংশোধন করে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
  • দায়িত্বশীলদের প্রত্যাশা, লাইসেন্স পেলে এসব যানবাহন নিয়মের আওতায় আসবে।
  • তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, এর ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট আরও বেড়ে যেতে পারে।

ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক, পাখিসহ তিন চাকার বিভিন্ন বাহন বহুদিন ধরেই চলছে। এদের নির্দিষ্ট কোনো নিবন্ধন বা অনুমোদন না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গবেষণা ও সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৮ থেকে ৫০ লাখের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অনুরূপ যানবাহন চলছে।

হাইকোর্টের নির্দেশ ও চালকদের প্রতিবাদ

  • হাইকোর্টের নির্দেশ: গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
  • প্রতিবাদ: এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর রিকশাচালকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
  • স্থিতাবস্থা: পরে ২৫ নভেম্বর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে, ফলে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত থাকে।

আইনি সংশোধন ও সরকারের উদ্যোগ

  • আইন সংশোধনের প্রস্তাব: স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর তফসিলের একটি অংশ সংশোধন করে সিটি করপোরেশনকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
  • নতুন খসড়া: স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে আইন সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠিয়েছে। পরবর্তী ধাপে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হবে

  • সংশোধিত আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করবে।
  • ওই সময়ের মধ্যে যদি কেউ লাইসেন্স না নেয়, তবে তার ব্যাটারিচালিত রিকশা বা যানবাহন মহানগরীতে চলাচল করতে পারবে না।
  • সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, আইনিভাবে রেজিস্ট্রেশন হলে এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও উদ্বেগ

  • রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন চাকার এসব বাহনের দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৪২২ জন নিহত হয়েছেন।
  • অনেকের আশঙ্কা, লাইসেন্স পেলে এ ধরনের যানের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, যা যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে।
  • এ ছাড়া অননুমোদিত রিকশাগুলো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বাড়তি চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

  • কমিটি গঠন: আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে।
  • আলোচনা: পুলিশ, বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
  • আইনি জটিলতা: মোটরযানের লাইসেন্স সাধারণত বিআরটিএ-ই দিয়ে থাকে। তবে সংশোধিত আইনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মোটরযানের মধ্যে পড়বে কি না, তা আইন বাস্তবায়নের পরই স্পষ্ট হবে।

উপসংহার

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হলে এসব যানবাহন বৈধভাবে চলাচল করতে পারবে। এতে রিকশাচালক ও যাত্রী—উভয়েরই সুবিধা বাড়তে পারে। তবে দুর্ঘটনা ও যানজটের ঝুঁকি মাথায় রেখে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও কঠোর নজরদারি দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাস্তবভিত্তিক নিয়মকানুন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগই এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে পারে।