সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- সাম্প্রতিক নির্বাচনে ডিসিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
- বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন, তাই ভবিষ্যৎ সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে
- মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতাদের চাপের মুখে কাজ করতে হয়
- ডিসি পদে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও বাড়তি জবাবদিহির কারণে অনেকে ঝুঁকি নিতে চান না
জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদটি একসময় প্রশাসন ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় পদ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, এই পদে নিয়োগের জন্য আমন্ত্রিত অনেক কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে অংশ নিচ্ছেন না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকলেও মাত্র ১৩৬ জন অংশ নিয়েছেন।
এটি প্রশাসনিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় যে পদ ক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার প্রতীক ছিল, সেটি আকর্ষণ হারাচ্ছে কেন?
ডিসি পদের আকর্ষণীয় দিক
সাংগঠনিক ভূমিকা ও ক্ষমতা
- জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন।
- নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।

সুবিধা ও প্রভাব
- সরকারি বাসভবন, যানবাহন, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া।
- স্থানীয় প্রশাসনের তহবিল ব্যবহারের ক্ষমতা, যা অনেকের কাছে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে।
ডিসি পদের প্রতি আগ্রহ কমার কারণ
নির্বাচনী বিতর্ক ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনে ডিসিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁদের সম্পদের অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং অনেকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে—এমন আশঙ্কায় অনেকে ডিসি হতে চান না।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীনতার সংকট
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতাদের চাপের মুখে কাজ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়, যা স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ সীমিত করে দেয়।
ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা

বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন, ফলে ভবিষ্যতে নতুন সরকার ডিসিদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা অনিশ্চিত। এটি কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি করছে।
পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যারা বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন, তাঁরা নতুন করে ডিসি হতে চাইছেন না, কারণ বর্তমান প্রশাসনে তাঁদের সুযোগ কমে যেতে পারে।
প্রশাসনিক অনিয়ম ও কঠোর শাস্তির ভয়
বর্তমানে প্রশাসন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ডিসি পদে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও বাড়তি জবাবদিহির কারণে অনেকে ঝুঁকি নিতে চান না।
সাক্ষাৎকারে অনুপস্থিতির পরিসংখ্যান
- ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছিল।
- অংশ নিয়েছেন মাত্র ১৩৬ জন (প্রায় ৫১% অনুপস্থিতি)।
- ২৫তম ব্যাচে ১১৫ জনের মধ্যে ৬১ জন উপস্থিত ছিলেন।
- ২৭তম ব্যাচে ১৫৪ জনের মধ্যে ৭৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
- ২৮তম ব্যাচের সাক্ষাৎকার এখনো বাকি, তবে অনুপস্থিতির হার আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিসি নিয়োগ নীতিমালা ও সাম্প্রতিক পরিবর্তন

নিয়োগ নীতিমালা ২০২২ অনুযায়ী
- উপসচিব হওয়ার এক বছর পর ডিসি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়।
- ন্যূনতম দুই বছরের মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
- গত পাঁচ বছরের গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) সন্তোষজনক হতে হবে।
সাম্প্রতিক পরিবর্তন
- পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তাদের সুযোগ দিতে কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।
- সাধারণত একজন ডিসি তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন, তবে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সময়ের সীমা পরিবর্তন হতে পারে।
উপসংহার
জেলা প্রশাসক পদটি একসময় প্রশাসন ক্যাডারের অন্যতম আকর্ষণীয় পদ ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই অবস্থান বদলে দিয়েছে।
নির্বাচনী বিতর্ক, রাজনৈতিক চাপ, ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা কর্মকর্তাদের ডিসি হতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে প্রশাসনে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মাঠ প্রশাসনের দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
Sarakhon Report 



















