শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিন্তু কান্তবাবু নিজের পরিবর্তে তাহা স্বীয় পুত্র লোকনাথকে প্রদান করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। লোকনাথ পরে নবাব নাজিমের নিকট হইতে মহারাজ উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৭৮৫ খৃঃ অব্দের প্রথমে হেষ্টিংস সাহেব ইংলণ্ডে গমন করিলে, কান্ত বাবু কাশীমবাজারে আসিয়া বাস করেন। তিনি কলিকাতায় থাকিতে ভাল বাসিতেন না; হেষ্টিংস সাহেবের সময়েই তিনি মধ্যে মধ্যে কাশীম-বাজারে আসিতেন। কলিকাতায় তাঁহার বাসভবন থাকিলেও কাশীম- বাজার হইতে তাঁহার ভাগ্যোন্নতির সূচনা হওয়ায়, তিনি ঐ স্থানটিকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন।
কিন্তু এই সময় হইতে কাশীমবাজারেরও শ্রীবৃদ্ধির হ্রাস হইতে আরম্ভ হয়। ১৭৮৮ খৃঃ অব্দে লালবাগ ও সৈয়দা-বাদের মধ্যে একটি খাল কাটা হইয়া ভাগীরথীর উভয় মুখ সংযুক্ত হওয়ায়, কাশীমবাজারের নিম্নস্থ ভাগীরথী ক্রমে বদ্ধ বিলে পরিণত হইতে আরম্ভ হয়। সেই জন্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে এখানে মহামারী উপস্থিত করিয়া ইহাকে অরণ্যতুল্য করিয়া তুলে। তথাপি কান্তবাবু জন্মভূমি বলিয়া তথায় বাস করিতে ভাল বাসিতেন। হেষ্টিংস সাহেব ভারত পরিত্যাগ করার পর কান্ত বাবু অধিক দিন জীবিত ছিলেন না। স্বয়ং রাজোপাধি গ্রহণ না করায়, সাধারণ লোকে হেষ্টিংসের দেওয়ান বলিয়া তাঁহাকে দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে অভিহিত করিত। দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে আর এক জন কৃতী পুরুষও মুর্শিদাবাদে ভাগ্যলক্ষ্মীর কৃপা লাভ করেন।
ইনি বহরমপুরের সুপ্রসিদ্ধ জমিদার সেনবংশীয়গণের আদিপুরুষ। কলিকাতার দুর্গাচরণ মিত্র-স্ট্রীটস্থ তাঁহার বাসভবন অদ্যাপি দেওয়ানবাটী বলিয়া প্রসিদ্ধ।। সেন কৃষ্ণকান্ত কোম্পানীর নিমকমহালের দেওয়ান ছিলেন। উভয়েই দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে অভিহিত হওয়ায় তাঁহাদের প্রসঙ্গ লইয়া পূর্ব্বকালে এতদ্দেশীয় প্রাচীনেরা অনেক সময় গোলযোগ করিতেন। কান্তবাবু অনেকবার দার পরিগ্রহ করেন; শেষ পত্নীর গর্ভেই লোকনাথের জন্ম হয়। লোকনাথের মাতার নাম ক্ষুদুমণি। বর্তমান জেলার কুড়ম্ব নামক গ্রাম লোকনাথের মাতুলালয়। কাশীমবাজার রাজবংশের আদিপুরুষ ও হেষ্টিংসের প্রিয়পাত্র কান্তবাবু আপনার একমাত্র পুত্র লোকনাথকে রাখিয়া বাঙ্গলা ১২০০ সালের পৌষ মাসে জাহ্নবীতীরে জীবন বিসর্জন করেন।
তাঁহার অর্জিত বিশাল সম্পত্তি আজিও তাঁহার পরিচয় দিতেছে। কান্তনগর নামে একটি পরগণা তাঁহার নামানুসারে হইয়াছে বলিয়া কথিত আছে। বহরমপুরের পূর্ব্বভাগে ঐ নামের একটি ক্ষুদ্র গ্রামও রহিয়াছে। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, অর্থলোভে কান্তবাবু কোন কোন অসৎকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিলেও, তাঁহার হৃদয় হইতে একেবারে হিন্দুজনোচিত ধৰ্ম্মভাবের লোপ হয় নাই। তিনি অনেক স্থলে তাহার পরিচয় দিয়াছেন। তাঁহার সম্বন্ধে অনেক গল্প প্রচলিত আছে, আমরা দুই একটির উল্লেখ করিতেছি। কান্তবাবু যখন কাশীমবাজার ইংরেজ কুঠীতে মুহুরীর পদে নিযুক্ত ছিলেন, সেই সময় হইতে একজন কলু তাঁহার বাটীর নিকট বাস করিত। কান্তবাবুকে প্রতিদিনই তাহার মুখ দর্শন করিয়া কার্য্যস্থানে যাইতে হইত।