সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ট্রাম্প প্রশাসনের হঠাৎ অর্থায়ন বন্ধ করা এবং গর্ভপাত নীতির কারণে এই কর্মসূচির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে
- পেপফার আমেরিকার সবচেয়ে প্রশংসিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, যা প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে
- রিপাবলিকানদের দাবি, পেপফারের তহবিল গর্ভপাত সমর্থনকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়া হচ্ছে, যা প্রোগ্রামের নবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে
আমেরিকার সবচেয়ে প্রশংসিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উদ্যোগটি এখন সংকটের মুখে পড়েছে। প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী ও মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশী সাহায্য হঠাৎ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এবং গণপ্রজাতন্ত্রী দলের উদ্বেগ – বিশেষ করে সেই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে, যাদের বিরুদ্ধে গর্ভপাতের অভিযোগ রয়েছে – এই প্রোগ্রামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। একসময় অনভিজ্ঞ মনে হলেও, জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন দ্বারা চালু করা পেপফার (প্রেসিডেন্টের জরুরী এইডস সহায়তা পরিকল্পনা) এখন বিপদে পড়ে গেছে।
পেপফারের গুরুত্ব
- জীবন রক্ষার মিশন:
পেপফারকে বুশ প্রশাসনের “সহানুভূতিশীল রক্ষণনীতি” বলা হয়, যা এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ মিলিয়ন জীবন বাঁচিয়েছে। - ন্যাশনাল নিরাপত্তা:
বুশ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ম্যানেজার হান্না জনসনের মতে, পেপফার আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তায় একটি কৌশলগত বিনিয়োগ, যা রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বিস্তারের সময় আমাদের জন্য ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে।
- স্মার্ট বিনিয়োগ:
প্রোগ্রামটি কেবল মানুষের জীবন রক্ষা করে না, বরং আমেরিকার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
প্রশাসনিক পরিবর্তন ও অর্থায়ন কাটা
- হঠাৎ পরিবর্তন:
ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসন পেপফারের জন্য শত মিলিয়নেরও বেশি ডলারের অনুদান ও চুক্তি বাতিল করেছে। - আইনের মেয়াদ উত্তীর্ণ:
২০০৩ সালে প্রণীত আইনের মেয়াদ ২৫ মার্চে শেষ হতে যাচ্ছে এবং নবায়নের কোন ইঙ্গিত নেই। - বাজেট সংকট:
যদিও পেপফারের বার্ষিক বাজেট ৬-৭ বিলিয়ন ডলার হলেও, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গর্ভপাত নীতি ও রাজনৈতিক বিতর্ক
- আলোচনার সূচনা:
দুই বছর আগে, রিপাবলিকান সদস্যরা দাবি করেছিলেন যে, পেপফারের তহবিল সরাসরি গর্ভপাত সমর্থনকারী সংস্থাগুলিকে প্রদান করা হচ্ছে। - নবায়নের মেয়াদ হ্রাস:
এই অভিযোগের কারণে প্রোগ্রামের নবায়ন এক বছরের জন্য করা হয়েছিল, যা পূর্বে পাঁচ বছরের ছিল।
- নিয়মিত তদারকি:
মোজাম্বিকে পরিচালিত তদারকিতে প্রকাশ পেয়েছে, কিছু নার্স পেপফারের অর্থায়নে গর্ভপাত পরিচালনা করেছেন – যা দেশের আইন অনুযায়ী বৈধ হলেও প্রোগ্রামের ভবিষ্যতের ওপর প্রশ্ন তোলে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও উদ্বেগ
- নীতিগত বিতর্ক:
প্রধান রিপাবলিকানরা পেপফারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তর্কে লিপ্ত। তারা মনে করেন, যদি আমেরিকা আফ্রিকার ২০ মিলিয়ন মানুষের জন্য হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে, তাহলে দেশের নিজস্ব দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। - জীবন হারানোর আশঙ্কা:
কিছু আইনপ্রণেতা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, হঠাৎ পেপফার বন্ধ হলে আগামী চার বছরে ছয় মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী এইডস সংক্রমণের হার বাড়তে পারে। - সরবরাহে ব্যাঘাত:
প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে অনেক দেশে এইডস ওষুধের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গভীর আলোচনা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন নির্দেশ করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত
- ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি:
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশী সাহায্যে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় অনেক প্রোগ্রাম কেটে দিয়েছে। - USAID-এর প্রোগ্রাম বন্ধ:
পেপফারের জন্য পরিচালিত USAID-এর প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করে বিলিয়ন ডলারের বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছে। - কার্যক্রমে মন্থরতা:
যদিও কিছু কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও, এইডস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাজগুলো ধীরগতিতে চলছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ও আইনপ্রণেতা বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতিতে পেপফারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার
পেপফার কেবল ওষুধ বিতরণ নয়; এটি পরীক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগের মতো বিস্তৃত সেবা প্রদান করে। তবে প্রশাসনের ধীরে ধীরে অংশীদারিত্ব ও তহবিল কেটে নেওয়ার ফলে প্রোগ্রামটি আগের মতো কার্যকর থাকতে পারছে না। অনেক নেতা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই অবস্থা আমাদের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে প্রোগ্রামটি দীর্ঘমেয়াদে চালু রাখা যায় এবং প্রভাবিত দেশগুলো নিজেদের দায়িত্ব আরও বাড়াতে পারে। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, পেপফারের বর্তমান সংকট আমেরিকার বিদেশী সাহায্য ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।