১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ঈদের ছুটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজ দায়িত্বের নিরাপত্তা

  • Sarakhon Report
  • ০২:৪২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • 33

ঈদে এবার ৯ দিনের ছুটি। এ সময়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বাড়তে পারে – এমন আশঙ্কায় সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ৷

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পুলিশের একার পক্ষে তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই আমরা বারবার বলছি, কমিউনিটিকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। যেসব সোসাইটি আছে, তাদেরও এই কাজে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

শঙ্কা বেশি রাজধানী ঘিরে

ঈদকে সামনে রেখে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। ফলে অপরাধ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নগর বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এবার লম্বা ছুটিতে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা ঢাকা মহানগরীকে নিয়ে। কারণ, এবার অনেকই ঢাকা ছাড়বেন। তাই বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকবে। আর এই ফাঁকা শহরে অপরাধ, বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যেতে পারে। কারণ, এবার পুলিশের অবস্থাও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকটাই নড়বড়ে। ফলে কমিউনিটির তরুণদের এই কাজে যুক্ত করতে হবে। সারা বিশ্বেই সেটা হয়। ৫ আগস্টের পরপর আমরা দেখেছি, তরুণরা কিভাবে মহল্লা পাহাড়া দিয়েছে। ফলে তাদের যুক্ত করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।”

এলাকাকেন্দ্রিক সোসাইটিগুলো কী করছে জানতে চাইলে মিরপুরের শেওড়াপাড়া আদর্শ বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা আমাদের সমিতির আওতায় থাকা বাড়ি মালিকদের সতর্ক করেছি। পাশাপাশি নাইট গার্ড হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের ডিউটি টাইম বাড়ানো হয়েছে। এখন তারা রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের কাছে বাঁশি ও হ্যান্ড মাইক দেওয়া হয়েছে। কোনো বাড়ি আক্রান্ত হলে তারা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করবেন। যদি তাদের হ্যান্ড মাইক কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে তারা বাঁশিতে ফু দিতে থাকবেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো কিছু একটা হয়েছে। তখন বাড়ির মালিকরা বেরিয়ে পড়বেন। এই ধরনের কিছু প্রস্তুতি আমাদের আছে।”

মাঠে থাকছে ৪৩১ জন অক্সিলারি পুলিশ

এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকছে ৪৩১ জন অক্সিলারি পুলিশ। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারে ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে তাদের। তবে তারা কোন তদন্ত করতে পারবেন না। কাউকে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন।

ইতিমধ্যে রাজধানীতে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরে ধানমন্ডিতে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতিতে ব্যবহার করা হয়েছে র‌্যাবের পোশাক, পরিচয় দেওয়া হয়েছে ছাত্র ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের। এ ঘটনায় জনতার সহায়তায় পুলিশ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবার ভোরের দিকে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি ডাকাত দল ডাকাতি করতে যায়। তারা নিজেদের র‌্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। ডাকাত দলের ১০ জনের মতো র‌্যাবের পোশাকে ছিলেন। ডাকাতি চলাকালে বাসার মালিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশেই একটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানকার শ্রমিকদের সহায়তায় পুলিশ চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।

ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে আটকের পুরস্কার পাচ্ছেন পাঁচ শ্রমিক। সাহসিকতার জন্য সেই পাঁচ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ডিএমপি। একই সঙ্গে এই পাঁচ শ্রমিককে পুলিশের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের ধরতে সহায়তা করায় পাঁচজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পাঁচ শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া এই পাঁচজনকে অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।”

জনাব রহমান বলেন, “অক্সিলারি পুলিশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা পুলিশের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে, তথ্য দেবে এবং অপরাধীদের আটকে সহায়তা করবে। এরা মূলত ঈদের সময় বাসা-বাড়ি, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় কাজ করবে।”

পুলিশের আশ্বাস

ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি- এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।

নগরবাসীকে উদ্দেশ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, “পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করবো।”

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সোনার মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি করেছে। ঈদের সময় রাজধানীতে দিনে-রাতে ৬০০টি পুলিশ দল টহল দেবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হবে।”

র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ঈদে মানুষের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‌্যাব গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর থাকবেন। র‌্যাব জানিয়েছে, ঈদে নিরাপত্তায় গোয়েন্দা, ফুট পেট্রল, মোবাইল পেট্রল, সাইবার ওয়ার্ল্ডের নজরদারি থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশকে বিশেষভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। সারাদেশেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কে ডাকাতি রোধে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। আর চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রী ও জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সময়ে প্রতারক চক্র অনেক বেশি সক্রিয় হয়। সেদিকেও বিশেষ নজর রয়েছে পুলিশের।”

ডয়চে ভেলে বাংলা

ঈদের ছুটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজ দায়িত্বের নিরাপত্তা

০২:৪২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

ঈদে এবার ৯ দিনের ছুটি। এ সময়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বাড়তে পারে – এমন আশঙ্কায় সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ৷

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পুলিশের একার পক্ষে তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই আমরা বারবার বলছি, কমিউনিটিকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। যেসব সোসাইটি আছে, তাদেরও এই কাজে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

শঙ্কা বেশি রাজধানী ঘিরে

ঈদকে সামনে রেখে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। ফলে অপরাধ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নগর বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এবার লম্বা ছুটিতে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা ঢাকা মহানগরীকে নিয়ে। কারণ, এবার অনেকই ঢাকা ছাড়বেন। তাই বাসা-বাড়ি ফাঁকা থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকবে। আর এই ফাঁকা শহরে অপরাধ, বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যেতে পারে। কারণ, এবার পুলিশের অবস্থাও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকটাই নড়বড়ে। ফলে কমিউনিটির তরুণদের এই কাজে যুক্ত করতে হবে। সারা বিশ্বেই সেটা হয়। ৫ আগস্টের পরপর আমরা দেখেছি, তরুণরা কিভাবে মহল্লা পাহাড়া দিয়েছে। ফলে তাদের যুক্ত করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।”

এলাকাকেন্দ্রিক সোসাইটিগুলো কী করছে জানতে চাইলে মিরপুরের শেওড়াপাড়া আদর্শ বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা আমাদের সমিতির আওতায় থাকা বাড়ি মালিকদের সতর্ক করেছি। পাশাপাশি নাইট গার্ড হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের ডিউটি টাইম বাড়ানো হয়েছে। এখন তারা রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের কাছে বাঁশি ও হ্যান্ড মাইক দেওয়া হয়েছে। কোনো বাড়ি আক্রান্ত হলে তারা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করবেন। যদি তাদের হ্যান্ড মাইক কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে তারা বাঁশিতে ফু দিতে থাকবেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো কিছু একটা হয়েছে। তখন বাড়ির মালিকরা বেরিয়ে পড়বেন। এই ধরনের কিছু প্রস্তুতি আমাদের আছে।”

মাঠে থাকছে ৪৩১ জন অক্সিলারি পুলিশ

এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকছে ৪৩১ জন অক্সিলারি পুলিশ। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারে ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে তাদের। তবে তারা কোন তদন্ত করতে পারবেন না। কাউকে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন।

ইতিমধ্যে রাজধানীতে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরে ধানমন্ডিতে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতিতে ব্যবহার করা হয়েছে র‌্যাবের পোশাক, পরিচয় দেওয়া হয়েছে ছাত্র ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের। এ ঘটনায় জনতার সহায়তায় পুলিশ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবার ভোরের দিকে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি ডাকাত দল ডাকাতি করতে যায়। তারা নিজেদের র‌্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন। ডাকাত দলের ১০ জনের মতো র‌্যাবের পোশাকে ছিলেন। ডাকাতি চলাকালে বাসার মালিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশেই একটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানকার শ্রমিকদের সহায়তায় পুলিশ চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।

ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে আটকের পুরস্কার পাচ্ছেন পাঁচ শ্রমিক। সাহসিকতার জন্য সেই পাঁচ শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে ডিএমপি। একই সঙ্গে এই পাঁচ শ্রমিককে পুলিশের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের ধরতে সহায়তা করায় পাঁচজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পাঁচ শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া এই পাঁচজনকে অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।”

জনাব রহমান বলেন, “অক্সিলারি পুলিশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা পুলিশের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে, তথ্য দেবে এবং অপরাধীদের আটকে সহায়তা করবে। এরা মূলত ঈদের সময় বাসা-বাড়ি, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় কাজ করবে।”

পুলিশের আশ্বাস

ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি- এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।

নগরবাসীকে উদ্দেশ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, “পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করবো।”

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সোনার মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।

উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি করেছে। ঈদের সময় রাজধানীতে দিনে-রাতে ৬০০টি পুলিশ দল টহল দেবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হবে।”

র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ঈদে মানুষের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‌্যাব গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর থাকবেন। র‌্যাব জানিয়েছে, ঈদে নিরাপত্তায় গোয়েন্দা, ফুট পেট্রল, মোবাইল পেট্রল, সাইবার ওয়ার্ল্ডের নজরদারি থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশকে বিশেষভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। সারাদেশেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মহাসড়কে ডাকাতি রোধে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। আর চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রী ও জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সময়ে প্রতারক চক্র অনেক বেশি সক্রিয় হয়। সেদিকেও বিশেষ নজর রয়েছে পুলিশের।”

ডয়চে ভেলে বাংলা