০৭:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

আসিয়ান সদস্যপদ হারাতে পারে পূর্ব তিমুর

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • 39

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ফিলিপাইন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সাবেক ফিলিপাইন রাজনীতিবিদ আরনলফো টেভেস জুনিয়রকে ফেরত না পাঠালে পূর্ব তিমুর আসিয়ান সদস্যপদ পাওয়ার সুযোগ হারাতে পারে।ফিলিপাইনের বিচারমন্ত্রী জেসুস ক্রিসপিন রেমুল্লা বলেন, “এটা পূর্ব তিমুরের জন্য সুখকর হবে না,” কারণ ফিলিপাইন আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলোর একটি।

আরনলফো টেভেস: মামলার কেন্দ্রবিন্দু

আরনলফো টেভেস জুনিয়র, যিনি ফিলিপাইনের সাবেক সংসদ সদস্য, ২০২৩ সালে গভর্নর রুয়েল ডেগামোসহ ৮ জনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে আশ্রয় চান পূর্ব তিমুরে। তবে সে দেশের আদালত তাকে ফিলিপাইনে ফেরত না পাঠানোর পক্ষে রায় দেয়।

আসিয়ানের ইতিহাস ও পূর্ব তিমুরের অবস্থান

আসিয়ান গঠিত হয় ১৯৬৭ সালে—সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের অংশগ্রহণে। পরে যুক্ত হয় ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, লাওস ও কম্বোডিয়া।

পূর্ব তিমুর ২০০২ সালে স্বাধীনতার পর আসিয়ানে পর্যবেক্ষক সদস্যের মর্যাদা পায়। ২০২২ সালে তাদের সদস্যপদ নিয়ে নীতিগত সম্মতি দেয়া হয়।

টেভেস প্রত্যর্পণ নিয়ে উত্তেজনা

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেভেস যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং মে মাসে আশ্রয়ের জন্য পূর্ব তিমুরে আবেদন করেন, যা প্রত্যাখ্যাত হয়।

পরে ইন্টারপোল ও তিমুরী পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০২৪ সালে পূর্ব তিমুর দুইবার তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিলেও সর্বশেষ রায়ে সেই সিদ্ধান্ত উল্টে যায়।

ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মা. টেরেসিতা দাজা বলেন, “আমরা হতাশ। পূর্ব তিমুর যদি ফিলিপাইনের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা না রাখে, তাহলে সদস্যপদ পাওয়ার নৈতিক ভিত্তি কোথায়?”

তিনি আরও বলেন, সদস্য হওয়ার জন্য শুধু নিয়ম মানলেই হবে না—বিশ্বাস ও সহযোগিতার মনোভাবও জরুরি।

পূর্ব তিমুরের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা বলেন, তারা আদালতের রায়কে সম্মান করে এবং এটি আসিয়ানে যোগদানের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে না।

বিশ্লেষকদের মত: কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে ফিলিপাইন

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিপাইন আসিয়ানের অন্য সদস্যদের সাহায্যে পূর্ব তিমুরের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ডি লা সাল – সেন্ট বেনিল্ড কলেজের ডিন গ্যারি অ্যাডর দিয়োনিসিও বলেন, “২০২৫ সালে ফিলিপাইন আসিয়ান সম্মেলনের আয়োজক, যা তারা কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে পারে।”

তিনি জানান, আসিয়ানে যোগ দিলে পূর্ব তিমুর বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় অনেক সুবিধা পাবে।

চেস্টার কাবালজা, ম্যানিলা-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি কোঅপারেশন-এর সভাপতি বলেন, আসিয়ানে যুক্ত হওয়া পূর্ব তিমুরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে ফিলিপাইনের কূটনৈতিক দক্ষতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে—বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কাজে লাগাতে পারলে।

তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়া আসিয়ানের নেতা এবং ফিলিপাইনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তারা ফিলিপাইনের পক্ষেও অবস্থান নিতে পারে।”

তবে দিয়োনিসিও সতর্ক করে বলেন, ফিলিপাইনের এই চাপ প্রয়োগ তাদের আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ করে। তার মতে, “আসিয়ানে যাওয়ার আগে পূর্ব তিমুরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরালো করা উচিত ছিল।”

জনপ্রিয় সংবাদ

আসিয়ান সদস্যপদ হারাতে পারে পূর্ব তিমুর

০৬:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ফিলিপাইন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সাবেক ফিলিপাইন রাজনীতিবিদ আরনলফো টেভেস জুনিয়রকে ফেরত না পাঠালে পূর্ব তিমুর আসিয়ান সদস্যপদ পাওয়ার সুযোগ হারাতে পারে।ফিলিপাইনের বিচারমন্ত্রী জেসুস ক্রিসপিন রেমুল্লা বলেন, “এটা পূর্ব তিমুরের জন্য সুখকর হবে না,” কারণ ফিলিপাইন আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলোর একটি।

আরনলফো টেভেস: মামলার কেন্দ্রবিন্দু

আরনলফো টেভেস জুনিয়র, যিনি ফিলিপাইনের সাবেক সংসদ সদস্য, ২০২৩ সালে গভর্নর রুয়েল ডেগামোসহ ৮ জনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে আশ্রয় চান পূর্ব তিমুরে। তবে সে দেশের আদালত তাকে ফিলিপাইনে ফেরত না পাঠানোর পক্ষে রায় দেয়।

আসিয়ানের ইতিহাস ও পূর্ব তিমুরের অবস্থান

আসিয়ান গঠিত হয় ১৯৬৭ সালে—সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের অংশগ্রহণে। পরে যুক্ত হয় ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, লাওস ও কম্বোডিয়া।

পূর্ব তিমুর ২০০২ সালে স্বাধীনতার পর আসিয়ানে পর্যবেক্ষক সদস্যের মর্যাদা পায়। ২০২২ সালে তাদের সদস্যপদ নিয়ে নীতিগত সম্মতি দেয়া হয়।

টেভেস প্রত্যর্পণ নিয়ে উত্তেজনা

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেভেস যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং মে মাসে আশ্রয়ের জন্য পূর্ব তিমুরে আবেদন করেন, যা প্রত্যাখ্যাত হয়।

পরে ইন্টারপোল ও তিমুরী পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ২০২৪ সালে পূর্ব তিমুর দুইবার তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিলেও সর্বশেষ রায়ে সেই সিদ্ধান্ত উল্টে যায়।

ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মা. টেরেসিতা দাজা বলেন, “আমরা হতাশ। পূর্ব তিমুর যদি ফিলিপাইনের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা না রাখে, তাহলে সদস্যপদ পাওয়ার নৈতিক ভিত্তি কোথায়?”

তিনি আরও বলেন, সদস্য হওয়ার জন্য শুধু নিয়ম মানলেই হবে না—বিশ্বাস ও সহযোগিতার মনোভাবও জরুরি।

পূর্ব তিমুরের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা বলেন, তারা আদালতের রায়কে সম্মান করে এবং এটি আসিয়ানে যোগদানের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে না।

বিশ্লেষকদের মত: কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে ফিলিপাইন

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিপাইন আসিয়ানের অন্য সদস্যদের সাহায্যে পূর্ব তিমুরের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ডি লা সাল – সেন্ট বেনিল্ড কলেজের ডিন গ্যারি অ্যাডর দিয়োনিসিও বলেন, “২০২৫ সালে ফিলিপাইন আসিয়ান সম্মেলনের আয়োজক, যা তারা কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে পারে।”

তিনি জানান, আসিয়ানে যোগ দিলে পূর্ব তিমুর বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় অনেক সুবিধা পাবে।

চেস্টার কাবালজা, ম্যানিলা-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি কোঅপারেশন-এর সভাপতি বলেন, আসিয়ানে যুক্ত হওয়া পূর্ব তিমুরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে ফিলিপাইনের কূটনৈতিক দক্ষতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে—বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কাজে লাগাতে পারলে।

তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়া আসিয়ানের নেতা এবং ফিলিপাইনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তারা ফিলিপাইনের পক্ষেও অবস্থান নিতে পারে।”

তবে দিয়োনিসিও সতর্ক করে বলেন, ফিলিপাইনের এই চাপ প্রয়োগ তাদের আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ করে। তার মতে, “আসিয়ানে যাওয়ার আগে পূর্ব তিমুরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরালো করা উচিত ছিল।”