১২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল

প্রথমবারের মতো শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনা মডেল

ঢাকা, বাংলাদেশ, ১ জুলাই ২০২৫ – শিশুদের মধ্যে অ-সংক্রামক রোগ (NCD) মোকাবিলায় বাংলাদেশ এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় শিশুদের জন্য প্রথম প্রমাণ-ভিত্তিক সেবা মডেল তৈরি ও পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি (icddr,b) এই উদ্যোগ পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায়। এর লক্ষ্য জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোয় শিশুদের NCD সেবা একীভূত করা।

গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী ২০১৭ সালে দুই কোটিরও বেশি শিশু NCD তে আক্রান্ত ছিল এবং প্রায় ১০ লাখ শিশু এ ধরনের রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে এই রোগগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান নেই, ফলে নীতি-পরিকল্পনা ও চিকিৎসায় বড় শূন্যতা ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী শিশুদের অ-সংক্রামক রোগকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রোগগুলো নিয়মিত নজরদারির আওতায় ছিল না।

কোন কোন রোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে

গবেষণার আওতায় শিশুদের প্রধান ছয়টি অ-সংক্রামক রোগ নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। রোগগুলো হলো:

  • ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা
  • জন্মগত হৃদরোগ
  • মৃগী রোগ (এপিলেপসি)
  • থ্যালাসেমিয়া
  • কিডনি রোগ
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস

এই মডেলটি রোগ নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একীভূত সেবা প্রদানকে সহজতর করবে।

পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন এবং ফলাফল

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কিশোরগঞ্জের ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বগুড়ার ৮টি উপজেলা এবং দুইটি জেলা হাসপাতালে এ মডেল চালু করা হয়েছে।

গবেষণার আওতায় ৩৮৫ জন শিশু শনাক্ত ও নথিভুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে –

  • ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা: ৩৬.৬%
  • থ্যালাসেমিয়া ও আয়রন রিফ্র্যাক্টরি অ্যানিমিয়া: ২৭.৫%
  • জন্মগত হৃদরোগ: ১৯.১%
  • মৃগী: ১৩.৬%
  • নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার: ২.২%
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস: ১%

প্রায় ৮% শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত কেন্দ্রে রেফার করা হয়েছে।

চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা

প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা গাইডলাইন, এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

একইসাথে, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেবার মানোন্নয়ন, রোগীর তথ্য নথিভুক্তি, এবং রিপোর্টিংয়ের জন্য একটি ডিজিটাল হেলথ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে।

নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের তথ্য-উপাত্ত জাতীয় নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করবে। সরকারের পরিকল্পনা হলো পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায়ও এই সেবা সম্প্রসারণ করা।

এই উদ্যোগ বাংলাদেশের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (UHC) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি এক নতুন অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে বক্তাদের বার্তা

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক ড. মো. আলী আকবর আখন্দ, যিনি বলেন—কমিউনিটি পর্যায়ে সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

আইসিডিডিআরবি’র প্রোগ্রাম পরিচালক ড. তামান্না জামান শিশুদের রোগপ্রতিরোধে এই গবেষণার ফলাফলকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এহতেশামুল হক জানান—শিশুদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ আরও জোরদার করা হবে।

গবেষণার প্রধান গবেষক ড. আমলিয়া নাহার বলেন—“এই মডেল শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি টেকসই রূপরেখা তৈরি করেছে যা তাদের ভবিষ্যৎকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।”

শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল

০৬:৩৪:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

প্রথমবারের মতো শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনা মডেল

ঢাকা, বাংলাদেশ, ১ জুলাই ২০২৫ – শিশুদের মধ্যে অ-সংক্রামক রোগ (NCD) মোকাবিলায় বাংলাদেশ এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় শিশুদের জন্য প্রথম প্রমাণ-ভিত্তিক সেবা মডেল তৈরি ও পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি (icddr,b) এই উদ্যোগ পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায়। এর লক্ষ্য জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোয় শিশুদের NCD সেবা একীভূত করা।

গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী ২০১৭ সালে দুই কোটিরও বেশি শিশু NCD তে আক্রান্ত ছিল এবং প্রায় ১০ লাখ শিশু এ ধরনের রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে এই রোগগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান নেই, ফলে নীতি-পরিকল্পনা ও চিকিৎসায় বড় শূন্যতা ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী শিশুদের অ-সংক্রামক রোগকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রোগগুলো নিয়মিত নজরদারির আওতায় ছিল না।

কোন কোন রোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে

গবেষণার আওতায় শিশুদের প্রধান ছয়টি অ-সংক্রামক রোগ নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। রোগগুলো হলো:

  • ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা
  • জন্মগত হৃদরোগ
  • মৃগী রোগ (এপিলেপসি)
  • থ্যালাসেমিয়া
  • কিডনি রোগ
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস

এই মডেলটি রোগ নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একীভূত সেবা প্রদানকে সহজতর করবে।

পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন এবং ফলাফল

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কিশোরগঞ্জের ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বগুড়ার ৮টি উপজেলা এবং দুইটি জেলা হাসপাতালে এ মডেল চালু করা হয়েছে।

গবেষণার আওতায় ৩৮৫ জন শিশু শনাক্ত ও নথিভুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে –

  • ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা: ৩৬.৬%
  • থ্যালাসেমিয়া ও আয়রন রিফ্র্যাক্টরি অ্যানিমিয়া: ২৭.৫%
  • জন্মগত হৃদরোগ: ১৯.১%
  • মৃগী: ১৩.৬%
  • নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার: ২.২%
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস: ১%

প্রায় ৮% শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত কেন্দ্রে রেফার করা হয়েছে।

চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা

প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা গাইডলাইন, এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

একইসাথে, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেবার মানোন্নয়ন, রোগীর তথ্য নথিভুক্তি, এবং রিপোর্টিংয়ের জন্য একটি ডিজিটাল হেলথ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে।

নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের তথ্য-উপাত্ত জাতীয় নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করবে। সরকারের পরিকল্পনা হলো পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায়ও এই সেবা সম্প্রসারণ করা।

এই উদ্যোগ বাংলাদেশের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (UHC) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি এক নতুন অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে বক্তাদের বার্তা

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক ড. মো. আলী আকবর আখন্দ, যিনি বলেন—কমিউনিটি পর্যায়ে সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

আইসিডিডিআরবি’র প্রোগ্রাম পরিচালক ড. তামান্না জামান শিশুদের রোগপ্রতিরোধে এই গবেষণার ফলাফলকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এহতেশামুল হক জানান—শিশুদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ আরও জোরদার করা হবে।

গবেষণার প্রধান গবেষক ড. আমলিয়া নাহার বলেন—“এই মডেল শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি টেকসই রূপরেখা তৈরি করেছে যা তাদের ভবিষ্যৎকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।”