০৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
ব্রিকসে শি এবং পুতিন না গেলেও যাচ্ছেন মোদি, নতুন মেম্বর ইরানও যোগ দেবে রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮০) শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি থামছেই না: গরিবের হাঁড়িতে সঙ্কট আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুক কটুক্তির জেরে স্কুল ছাত্র গ্রেফতার, তিনদিন পর জামিন বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ ঢাকায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর  সংকেত জুলাই হলি আর্টিজান হামলা: বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মৌলবাদী মানসিকতার বীজ আন্তর্জাতিক বই আমদানিতে শুল্কারোপ: জ্ঞানের দরজায় দেয়াল, খুলছে কি? গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিক কমে যাচ্ছে

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ

বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপএকতৃতীয়াংশ রোগী সেখানকার

বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর এক-তৃতীয়াংশই বরগুনা জেলার। এই সংখ্যা জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে বড় বিপদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মে ও জুন মাসে বরগুনায় ২,৮৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টি, বেশি তাপমাত্রা, অপরিকল্পিত পানি জমা ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে এডিস মশার বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। এর ফলে বরগুনা হয়ে উঠেছে দেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের বড় কেন্দ্রবিন্দু। বরিশাল বিভাগকেও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্র্যাকের জরুরি সেবা কার্যক্রম

ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে জাতীয় প্রতিরোধ কর্মসূচিকে সহায়তা করতে ব্র্যাক বরগুনায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছে। বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ব্র্যাকের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন।

তারা উৎসস্থলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিলিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছেন।

মশার প্রজননস্থল ধ্বংস অভিযান

ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৬,৫১০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২,১৪১টি সক্রিয় প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়েছে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. শায়লা ইসলাম বলেন—

“জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন রোগের ধরন এবং মৌসুম পাল্টে যাচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টি, বেশি তাপমাত্রা ও অপরিকল্পিত পানি জমা—সবই মশার বংশবৃদ্ধিকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। শুধু মশা নিয়ন্ত্রণ নয়, ভবিষ্যতের জলবায়ু-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

সচেতনতামূলক প্রচারণা

ব্র্যাকের উদ্যোগে সন্ধ্যায় মাইকিং করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ, প্রতিরোধের উপায় এবং চিকিৎসাসেবা নেওয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

মসজিদ, মন্দির, স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়মিত সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

স্থানীয় স্কুলগুলোতেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু আছে। বরগুনা জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর, পৌরসভা, রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারদের সমন্বয়ে এই উদ্যোগগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

মসজিদের উঠোন, স্কুল প্রাঙ্গণ ও বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা এবং লার্ভিসাইড প্রয়োগের কাজ চলছে।

রোগী সুস্থ হওয়ার হার এবং চ্যালেঞ্জ

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ জানিয়েছেন—

“এখন পর্যন্ত শনাক্ত ২,৮৫৫ জন আক্রান্তের মধ্যে ২,৭০১ জন বাড়ি ফিরে সুস্থ হয়েছেন। এতে আমরা আশাবাদী হলেও, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম থামলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বড় চাপে পড়বে।”

জলবায়ু সহনশীল স্বাস্থ্য উদ্যোগ

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট হেলথ’ প্রকল্প জলবায়ু সংবেদনশীল রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে। এর মাধ্যমে—

মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ

ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর কন্ট্রোল

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা

এই সব কিছুই চলমান আছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় নিজস্ব উদ্যোগে সমস্যার সমাধানে প্রস্তুত করা। বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।

ব্রিকসে শি এবং পুতিন না গেলেও যাচ্ছেন মোদি, নতুন মেম্বর ইরানও যোগ দেবে

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ

০৫:৪৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপএকতৃতীয়াংশ রোগী সেখানকার

বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর এক-তৃতীয়াংশই বরগুনা জেলার। এই সংখ্যা জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে বড় বিপদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মে ও জুন মাসে বরগুনায় ২,৮৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টি, বেশি তাপমাত্রা, অপরিকল্পিত পানি জমা ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে এডিস মশার বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। এর ফলে বরগুনা হয়ে উঠেছে দেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের বড় কেন্দ্রবিন্দু। বরিশাল বিভাগকেও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্র্যাকের জরুরি সেবা কার্যক্রম

ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে জাতীয় প্রতিরোধ কর্মসূচিকে সহায়তা করতে ব্র্যাক বরগুনায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছে। বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ব্র্যাকের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন।

তারা উৎসস্থলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মিলিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছেন।

মশার প্রজননস্থল ধ্বংস অভিযান

ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৬,৫১০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২,১৪১টি সক্রিয় প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়েছে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. শায়লা ইসলাম বলেন—

“জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন রোগের ধরন এবং মৌসুম পাল্টে যাচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টি, বেশি তাপমাত্রা ও অপরিকল্পিত পানি জমা—সবই মশার বংশবৃদ্ধিকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। শুধু মশা নিয়ন্ত্রণ নয়, ভবিষ্যতের জলবায়ু-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

সচেতনতামূলক প্রচারণা

ব্র্যাকের উদ্যোগে সন্ধ্যায় মাইকিং করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ, প্রতিরোধের উপায় এবং চিকিৎসাসেবা নেওয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

মসজিদ, মন্দির, স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়মিত সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

স্থানীয় স্কুলগুলোতেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু আছে। বরগুনা জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর, পৌরসভা, রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারদের সমন্বয়ে এই উদ্যোগগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

মসজিদের উঠোন, স্কুল প্রাঙ্গণ ও বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা এবং লার্ভিসাইড প্রয়োগের কাজ চলছে।

রোগী সুস্থ হওয়ার হার এবং চ্যালেঞ্জ

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ জানিয়েছেন—

“এখন পর্যন্ত শনাক্ত ২,৮৫৫ জন আক্রান্তের মধ্যে ২,৭০১ জন বাড়ি ফিরে সুস্থ হয়েছেন। এতে আমরা আশাবাদী হলেও, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম থামলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বড় চাপে পড়বে।”

জলবায়ু সহনশীল স্বাস্থ্য উদ্যোগ

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট হেলথ’ প্রকল্প জলবায়ু সংবেদনশীল রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে। এর মাধ্যমে—

মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ

ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর কন্ট্রোল

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা

এই সব কিছুই চলমান আছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় নিজস্ব উদ্যোগে সমস্যার সমাধানে প্রস্তুত করা। বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।