ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরে ৬–৭ জুলাই বসছে ১৭তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। এবারের বৈঠক গ্লোবাল সাউথের স্বার্থ রক্ষাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চায়। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই গ্লোবাল সাউথ’—এবারের মূল প্রতিপাদ্য।
সম্প্রসারিত সদস্য সংখ্যা, গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি
ব্রিকস এখন আর কেবল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট নয়। সম্প্রতি মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়া যোগ দেওয়ায় জোটটি গ্লোবাল সাউথের বড় অংশকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার নেতৃত্বে এবারের সম্মেলন অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো, প্রযুক্তি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করছে।
আলোচ্য বিষয়: অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক শাসন সংস্কার
সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে—
• সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একত্রীত নিন্দা: ভারতের পাহলগাম হামলার প্রসঙ্গ টেনে জোটের যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• ডলার নির্ভরতা কমানো: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজস্ব মুদ্রা বা জাতীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়ানোর চেষ্টা চলবে। তবে ব্রিকস মুদ্রা নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এবারও হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
• বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার: বিশ্বব্যাংক–আইএমএফ–জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানে গ্লোবাল সাউথের প্রভাব বাড়ানোই ব্রিকসের দীর্ঘদিনের দাবি।
ব্রাজিলের কূটনৈতিক অবস্থান
ব্রাজিল চাইছে এবারের সম্মেলন থেকে বাস্তবসম্মত রূপরেখা আসুক।
• দক্ষিণ–দক্ষিণ বাণিজ্য সহজ করা
• আর্থিক সহায়তার জন্য ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’কে আরও সক্রিয় করা
• উন্নয়নশীল দেশের জন্য ন্যায্য শর্তে ঋণ
এগুলো ব্রাজিলের প্রস্তাবিত অগ্রাধিকার।
নেতাদের উপস্থিতি
সম্মেলনে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবে আহমেদ, ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেস্কিয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও ভিডিও লিঙ্কে অংশ নেবেন।
বৈপরীত্য ও চ্যালেঞ্জ
ব্রিকস সম্প্রসারিত হলেও অভ্যন্তরীণ বিভাজন স্পষ্ট।
• ভারত–চীনের সীমান্ত বিরোধ
• অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত
• আস্থার ঘাটতি
এসব কারণে ‘সম্মিলিত গ্লোবাল সাউথ’ গড়ার চেষ্টা কিছুটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একক কণ্ঠস্বর গড়ে তোলা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন—দুটিই ব্রিকসের জন্য বড় পরীক্ষা।
বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো
ব্রিকস জোটের বড় অর্জন ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’। এর মাধ্যমে পশ্চিমা প্রভাবিত আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ঋণ ও উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এবার এই ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করা এবং নতুন সদস্য দেশগুলোর প্রকল্পে অর্থায়ন বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
রিও সম্মেলন ব্রিকসের জন্য এক ধরনের লিটমাস-টেস্ট
- গ্লোবাল সাউথের স্বার্থে কি সত্যিই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি হবে?
•প্রভাবশালী দেশগুলো কি পরস্পরের প্রতিযোগিতা সরিয়ে রেখে সমাধানমুখী উদ্যোগ নেবে?
• আর্থিক ও বাণিজ্যিক কাঠামো কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই নির্ভর করছে—ব্রিকস ভবিষ্যতে গ্লোবাল সাউথের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে কিনা।