০৪:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩২১)

একদা সন্ধ্যার প্রাক্কালে তাঁহার একজন পরিচারিকা বলিয়া উঠে,-“সন্ধ্যা হইল, বাস্স্নায় আগুন দিতে হইবে।” লালবাবু বুঝিলেন যে, জীবনেরও সন্ধ্যা উপস্থিত; অতএবা বাসনা জ্বালাইবার সময় হইয়াছে। অতঃপর তিনি সংসারপরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যান! লালাবাবু লক্ষ টাকা লইয়া প্রথমে বৃন্দাবনে উপস্থিত হন। তথায় দস্যুগণ তাঁহার বাটী লুণ্ঠন করিয়া প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লইয়া যায়।

বৃন্দাবনধামে লালাবাবু কঠোর ব্রত অবলম্বন করিয়া সময় অতিবাহিত করিতেন। দেবসেবা ও অতিথিসেবা তাঁহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তাঁহার ন্যায় ধৰ্ম্মপ্রাণ পুরুষ বাঙ্গালী জাতির মধ্যে দুর্লভ। আজিও সমগ্র উত্তর ভারতবর্ষের অধিবাসিগণ প্রতিনিয়ত লালাবাবুর জয়। কীর্ত্তন করিয়া থাকে। উত্তর ভারতবর্ষে এমন কেহই নাই যে, লালা-বাবুর সদনুষ্ঠানের বিষয় অবগত নহে।

এই সমস্ত সদনুষ্ঠানের জন্য তিনিউত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পরগণা অনুপসহর ও মথুরার কিয়দংশ ক্রয় করিয়াছিলেন। এই সময়ে বৃন্দাবনে কৃষ্ণদাস বাবাজী নামে এক পরম সন্ন্যাসী বাস করিতেন। তিনি লালা বাবুর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন।

লালা বাবু বৃন্দাবনধামে কৃষ্ণচন্দ্রমাজীর মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত করিয়া মর্ম্মর প্রস্তরে তাঁহার এক বিশাল মন্দির নির্মাণ করিয়া দেন। রাজপুতানা হইতে সেই সকল প্রস্তর আনীত হয়। রাজপুতানার কোন রাজা তাঁহাকে বিনামূল্যে মর্ম্মর প্রস্তর সকল প্রদান করেন।

সেই সময় উক্ত রাজার সহিত ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টের সন্ধির প্রস্তাব হইতেছিল। রাজা সম্মতিদানে বিলম্ব করায়, দিল্লীর রেসিডেন্ট, মেটকাফ সাহেব লালাবাবুর পরামর্শে এইরূপ হইতেছে সন্দেহ করিয়া, তাঁহাকে দিল্লীতে ধৃত করিয়া লইয়া যান পরে তাঁহার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকায় এবং তাঁহার সংসারত্যাগের কথা শুনিয়া তাঁহাকে বিষয়-নিলিপ্ত জানিয়া, মুক্তিদান করিতে বাধ্য হন। গোবর্দ্ধনের ছায়াময় সানুপ্রদেশে অশ্বপদাঘাতে লালাবাবুর প্রাণবায়ুর অবসান হয়।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩২১)

১১:০০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

একদা সন্ধ্যার প্রাক্কালে তাঁহার একজন পরিচারিকা বলিয়া উঠে,-“সন্ধ্যা হইল, বাস্স্নায় আগুন দিতে হইবে।” লালবাবু বুঝিলেন যে, জীবনেরও সন্ধ্যা উপস্থিত; অতএবা বাসনা জ্বালাইবার সময় হইয়াছে। অতঃপর তিনি সংসারপরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যান! লালাবাবু লক্ষ টাকা লইয়া প্রথমে বৃন্দাবনে উপস্থিত হন। তথায় দস্যুগণ তাঁহার বাটী লুণ্ঠন করিয়া প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লইয়া যায়।

বৃন্দাবনধামে লালাবাবু কঠোর ব্রত অবলম্বন করিয়া সময় অতিবাহিত করিতেন। দেবসেবা ও অতিথিসেবা তাঁহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তাঁহার ন্যায় ধৰ্ম্মপ্রাণ পুরুষ বাঙ্গালী জাতির মধ্যে দুর্লভ। আজিও সমগ্র উত্তর ভারতবর্ষের অধিবাসিগণ প্রতিনিয়ত লালাবাবুর জয়। কীর্ত্তন করিয়া থাকে। উত্তর ভারতবর্ষে এমন কেহই নাই যে, লালা-বাবুর সদনুষ্ঠানের বিষয় অবগত নহে।

এই সমস্ত সদনুষ্ঠানের জন্য তিনিউত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পরগণা অনুপসহর ও মথুরার কিয়দংশ ক্রয় করিয়াছিলেন। এই সময়ে বৃন্দাবনে কৃষ্ণদাস বাবাজী নামে এক পরম সন্ন্যাসী বাস করিতেন। তিনি লালা বাবুর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন।

লালা বাবু বৃন্দাবনধামে কৃষ্ণচন্দ্রমাজীর মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত করিয়া মর্ম্মর প্রস্তরে তাঁহার এক বিশাল মন্দির নির্মাণ করিয়া দেন। রাজপুতানা হইতে সেই সকল প্রস্তর আনীত হয়। রাজপুতানার কোন রাজা তাঁহাকে বিনামূল্যে মর্ম্মর প্রস্তর সকল প্রদান করেন।

সেই সময় উক্ত রাজার সহিত ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টের সন্ধির প্রস্তাব হইতেছিল। রাজা সম্মতিদানে বিলম্ব করায়, দিল্লীর রেসিডেন্ট, মেটকাফ সাহেব লালাবাবুর পরামর্শে এইরূপ হইতেছে সন্দেহ করিয়া, তাঁহাকে দিল্লীতে ধৃত করিয়া লইয়া যান পরে তাঁহার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকায় এবং তাঁহার সংসারত্যাগের কথা শুনিয়া তাঁহাকে বিষয়-নিলিপ্ত জানিয়া, মুক্তিদান করিতে বাধ্য হন। গোবর্দ্ধনের ছায়াময় সানুপ্রদেশে অশ্বপদাঘাতে লালাবাবুর প্রাণবায়ুর অবসান হয়।