কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা—যা শুধু ধর্ষণ নয়, তার চেয়েও বড় সামাজিক অপরাধের উদাহরণ।
গত ২৬ জুন ২০২৫ রাত ১০টার দিকে এক নারী (যার বয়স বিভিন্ন সূত্রে ২১ থেকে ২৫ বছর বলা হচ্ছে) স্বামীর বাড়ি থেকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় বিএনপি নেতা ফজর আলী (৩৬–৩৮ বছর) রাতের আঁধারে তার ঘরের দরজা ভেঙে জোরপূর্বক শারীরিক ও শ্লীলতাহানিমূলক হামলা চালায়।
এই ঘটনায় পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে শুধু ধর্ষণ নয়, এর পরের ঘটনাপ্রবাহ আরও নৃশংস। ঘটনার সময় উপস্থিত কিছু স্থানীয় ব্যক্তি আক্রান্ত নারীর ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে ক্ষোভের স্রোত তৈরি হয়। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মশাল মিছিল হয়, বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ হয়। জনরোষের মুখে পুলিশ অভিযুক্ত ফজর আলীকে ধরতে তৎপর হয় এবং ভিডিও ছড়ানো অভিযোগে আরও চারজন—আনিক, সুমন, রমজান ও বাবু—গ্রেপ্তার হয়।
এ ঘটনায় আদালত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ভিডিও ও ছবি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মামলা থানা ও উচ্চ আদালত দুই পর্যায়েই চলছে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ঘটনার পরপরই কিছু গোষ্ঠী কৌশলে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা এটিকে “পরকীয়া” হিসেবে চিত্রিত করে ধর্ষণের অভিযোগকে হালকা করার অপচেষ্টা চালায়। কুমিল্লার পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন—এমন কোনো প্রমাণ পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মেলেনি।
এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচার শুধু অপরাধীর পক্ষ নেওয়া নয়; এটি ভুক্তভোগীর ওপর নতুন করে মানসিক অত্যাচার। মিডিয়াতে “খারাপ চরিত্র” বা “ড্রামা” আখ্যা দিয়ে দায় চাপানোর প্রচেষ্টা চলে, সামাজিক প্রচারণায় বলা হয়—ইতিপূর্বে সম্পর্ক ছিল, তাই ধর্ষণ নয়! অথচ এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার কাউকে দায়ী করা মানেই তাকে দ্বিতীয়বার নিপীড়ন করা। এ ধরনের নীরবতা বা বিভ্রান্তি ছড়ানোকে আরেকটি ধর্ষণ হিসেবে দেখা উচিত—যা সমানভাবে অপরাধ।

সাম্প্রতিক ঘটনাটি বাংলাদেশের বিচার, সমাজ ও গণমাধ্যমের জন্য সতর্কবার্তা।
দ্রুত, স্বচ্ছ ও সহানুভূতিশীল তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে।
ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
এবং সর্বোপরি—দোষ চাপানোর সামাজিক সংস্কৃতি নির্মূল করতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না—ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি সমাজের কাঠামোগত একটি রোগ। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, পুলিশ, প্রতিবেশী এবং রাজনৈতিক দল—সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















