০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৫) তিন বছরের বিরতি শেষে মামামুর গ্রুপ প্রত্যাবর্তন, আসছে বিশ্ব ট্যুর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ঢেউ, হাসপাতালে চাপ বাড়ছে স্ট্রেঞ্জার থিংস থেকে সেভেন্টিন: নভেম্বরে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে কী আসছে বাংলা সাহিত্য অবলম্বিত চলচ্চিত্র, সাইবারক্রাইম থ্রিলার ও আন্তর্জাতিক কনটেন্টে জমজমাট সপ্তাহ ক্যাটসআই: আধুনিক গার্ল গ্রুপের নতুন নকশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ১০টার পর সব অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে:রাজধানীর জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ— আগুনে মোটরসাইকেল পুড়ে গেল গাজীপুরে চলন্ত বাসে হঠাৎ আগুন: অল্পের জন্য রক্ষা পেল যাত্রীরা গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা ইসলামী উগ্রপন্থীদের জন্যে সুযোগ তৈরি করছে

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৫৩:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
  • 50

বায়তুল মোকাররম মসজিদ

মুজিব মাশাল ও সাইফ হাসনাত, তারাগঞ্জ ও ঢাকার থেকে ১ এপ্রিল, ২০২৫ (দি নিউ ইয়র্ক টাইমসসকাল ২:২২, পূর্ব আমেরিকান সময় অনুযায়ী আপডেট)

উগ্রপন্থীরা শুরু করেছিলেন নারীদের দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

বাংলাদেশের অথোরেটিয়ান নেতার পতনের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক শূন্যতায়এক শহরে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ঘোষণা করেছিলেন যে তরুণ নারীরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। অন্য একটি স্থানেতারা পুলিশের পর চাপ সৃষ্টি করে এমন এক পুরুষকে মুক্ত করিয়ে দিয়েছিলযে একজন মহিলাকে তার চুল ঢাকা না থাকার কারণে নাজেহাল করেছিলে। আর ওই নাজেহালকারীকে মুক্ত করে  তার তাকে ফুলের মালা পরে দিয়েছিলেন।

এরপর আরও স্পষ্ট দাবি উঠলো। ঢাকার র‌্যালিতে বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে দিলেনযদি সরকার ইসলামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারীদের মৃত্যুদণ্ড না দেয়তবে তারা নিজ হাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। কয়েকদিন পরনিষিদ্ধ একটি দল ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে বড় এক মার্চ অনুষ্ঠিত করলো।

বাংলাদেশ যখন তার ১৭৫ মিলিয়ন জনগণের জন্য গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ ও নতুন ভবিষ্যৎ নির্ধারণের চেষ্টা করছেতখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের নিচে দীর্ঘদিন থেকে লুকিয়ে থাকা ইসলামী উগ্রপন্থীরা ক্রমেই সামনে চলে আসছে

যারা কিছু পূর্বে নিষিদ্ধ ছিলএমন কয়েকটি ইসলামী দল ও সংগঠনের প্রতিনিধি সাক্ষাৎকারে  স্পষ্ট করে জানিয়েছেনতারা বাংলাদেশকে আরও মৌলবাদীতার দিক ঠেলে দিতে কাজ করছেনএই পরিবর্তন দেশের বাইরে ততটা এখনও নজরে পড়েনি।

ইসলামী নেতারা জোর দিয়ে দাবী করছেন যেবাংলাদেশে একটি ইসলামী সরকার” গড়ে তোলা উচিতযা ইসলামের প্রতি অসম্মান দেখানো ব্যক্তিদের শাস্তি দিবে এবং শালীনতা” বজায় রাখবে – এমন অস্পষ্ট ধারণাযা অন্যত্র স্ব-রক্ষামূলক বা ধর্মনির্মিত শাসনে পরিণত হয়েছে।

নতুন সংবিধান তৈরির দায়িত্বে নিযুক্ত রাজনৈতিক পক্ষের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেনতারা তাদের সুপারিশ নথিতে উল্লেখ করেছেনদেশের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে পরিবর্তে বহুত্ববাদ প্রবর্তন করা হবে এবং দেশটিকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

ছবি: পুরুষ প্রতিবাদকারীরা এক রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেকারো কারো হাতে বড় কমলা ব্যানারযার একটি ব্যানারে লেখা খিলাফতের জন্য মার্চ

মৌলবাদী মোড় বিশেষ করে সেই মহিলা ছাত্রছাত্রীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়যারা দেশের দমনাত্মক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদচ্যুত করতে সহায়তা করেছিলেন।

তারা প্রত্যাশা করেছিল যেতার একদলীয় শাসনের পরিবর্তে দেশের বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে এমন একটি গণতান্ত্রিক উন্মুক্ততা আসবে। কিন্তু এখন তারা দেখতে পাচ্ছেন,  উম্মুক্ত গনতান্ত্রিক বৈচিত্রের বদলে এমন একটি ধর্মীয় পপুলিজমকে তাদের  মোকাবেলা করতে হচ্ছে যা হচ্ছে যা নারীদের ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরযার মধ্যে হিন্দু ও ইসলামের ছোট উপসমাজের অনুসারীরাও আছেন তাদের জীবনকে ভালনারেবল বা অসহায়ত্ব মধ্যে ফেলে দিয়েছে

আমরা বিক্ষোভের অগ্রভাগে ছিলাম। আমরা রাস্তায় আমাদের ভাইদের রক্ষা করেছি,” বলেছেন ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান স্নাতক২৯ বছর বয়সী শেখ তাসনিম আফরোজ এমি। এখন পাঁচ-ছয় মাস পরসবকিছুই পালটে গেছে।

সমালোচকরা বলছেন৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উগ্রপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাঁকে অনেক নরমগণতান্ত্রিক সংস্কারের জটে আটকে থাকাদ্বন্দ্ব থেকে বিরত এবং স্পষ্ট কোনো দর্শন ব্যাখ্যা করতে অক্ষম বলে অভিযোগ করা হচ্ছেআর এ সময়ে উগ্রপন্থীরা আরও পাবলিক স্থান দখল করছে।

ছবি: বেগুনি ও খাকি পোশাকে সজ্জিত ধূসর চুলের মুহাম্মদ ইউনুসযিনি একটি রুমে প্রবেশ করছেনপাশে একজন সুরক্ষা কর্মী ও একজন ব্যবসায়িক পোশাক পরিহিত ব্যক্তি রয়েছেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী নেতা মুহাম্মদ ইউনুসকে কিছু লোক অত্যন্ত নরম হওয়ার জন্য ইসলামী কঠোরপন্থীদের প্রতি অতিক্রম করার অভিযোগ করেছে। 

তার সহকর্মীরা একটি সূক্ষ্ম সমন্বয়ের কথা বলছেন: বহু বছরের অথোরেটিয়ান শাসনের পর মত প্রকাশের অবাধ অবস্থা বিক্ষোভের অধিকার রক্ষা করা প্রয়োজনের যুক্তি দেখাচ্ছেনতবে তা করলে বাস্তবে উগ্রপন্থী দাবির পথ মুক্ত হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পতনের পর পুলিশের অধিকাংশই পালিয়ে গেছে ও হতাশ অবস্থায় রয়েছে – আর তারা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না। সেনাবাহিনীযারা কিছু পুলিশি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেতা অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের সাথে ক্রমশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছেওই ছাত্র ও সরকার অতীতের অত্যাচারের জন্য কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহি করতে চায়।

বাংলাদেশে যা ঘটতে শুরু করেছেতা সমগ্র অঞ্চলে দখল করে নেওয়া মৌলবাদী ঢেউয়ের প্রতিচ্ছবি।

আফগানিস্তান আজ একটি চরম নৃ-ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণতযা নারীদের মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করছে। পাকিস্তানেইসলামী উগ্রপন্থীরা বহু বছর ধরে সহিংসতার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতেএকটি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু দক্ষিণপন্থী দল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে দুর্বল করছে। মায়ানমার বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের দখলেযারা জাতিগত পরিষ্কারপথের অভিযানের তদারকি করছে।

নাহিদ ইসলামএকজন ছাত্র নেতাযিনি অন্তর্বর্তী প্রশাসনে মন্ত্রী ছিলেন এবং সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিতে সরে গেছেনস্বীকার করেছেন ভয় আছে” যে দেশটি উগ্রপন্থার দিকে সরে যাবে।

ছবি: ইসলাম একটি পতাকায় আচ্ছন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়েউচ্চ হাত করে মাইক্রোফোনে কথা বলছেন।

ছাত্রবিক্ষোভ আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম বলছেনতিনি আশা করেন গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মত মূল্যবোধ বজায় থাকবে।

তবুও তিনি আশাবাদীসংবিধানে পরিবর্তন সত্ত্বেও গণতন্ত্রসাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা বিরোধী মূল্যবোধ টিকে থাকবে। আমি মনে করি নাএমন কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে বাংলাদেশে যা এই মৌলিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে যাবে,” তিনি বললেন।

কেউ কেউ বলছেনগভীর শিল্প ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের ঐতিহ্যযুক্ত বাংলা সংস্কৃতিই আছেঅন্যরা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় আশার কণা খুঁজে পাচ্ছে।

নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এতটাই অন্তর্ভুক্ত – ৩৭ শতাংশ আনুষ্ঠানিক কর্মশক্তিতে রয়েছেনযা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ হারগুলোর মধ্যে একটি – যে কোনো প্রচেষ্টা তাদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

১৫ বছরের ধরে  যখন হাসিনা উগ্রপন্থীদের দমিয়ে একটি স্থিতি রক্ষা করেছিলেনতার পতনের পর উগ্রপন্থী শক্তিগুলো আবার নিজেদেরকে দৃশ্যমান করতে চাচ্ছে।

তিনি এমন একটি পুলিশি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন যা ইসলামী উপাদানগুলোর উপর কঠোর ছিলো এমনকি মূলধারার কাছাকাছি থাকা যারা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারতো তাদেরও লক্ষ্য করে। একই সাথেতিনি ইসলামি দলগুলির ধর্মীয় রক্ষণশীল ভক্তবৃন্দকে সন্তুষ্ট করতে হাজার হাজার অনিয়ন্ত্রিত ইসলামী মাদ্রাসার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং শত শত মসজিদ নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন।

হাসিনা চলে যাওয়ার পরপুরো ব্যবস্থাকে উল্টে দেওয়ার জন্য ছোট উগ্রপন্থী গোষ্ঠী এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতরে কাজ করতে চাওয়া আরও মূলধারার ইসলামী দলগুলোমিলিতভাবে আরও রক্ষণশীল বাংলাদেশের লক্ষ্যবস্তুতে সমবেত হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় ইসলামী দলজামায়াত-ই-ইসলামীএকটি বড় সুযোগ দেখছে। বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা জানানদলের উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগ রয়েছে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। বছরের শেষে প্রত্যাশিত নির্বাচনে বিজয় লাভ করা সম্ভব না হলেওদলটি মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ দলের বিশ্বাসযোগ্যতা কমানোর সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।

ছবি: ঢাকার উপশহরে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মীরা একসাথে জিনস সেলাই করছেন।

নারীদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা বিপর্যয় আনতে পারে। 

জামায়াতের মহাসচিব মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেনদলটি একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র চায়। ধর্ম ও রাজনীতির সমন্বয়ে সবচেয়ে নিকটতম মডেলতার মতেতুরস্ক।

ইসলাম পুরুষ ও নারীদের আচরণ ও নীতিশাস্ত্রের দিক থেকে নৈতিক নির্দেশনা প্রদান করে,” তিনি বললেন। এই নির্দেশনার মধ্যে নারীরা যে কোনো পেশায় অংশ নিতে পারে – খেলাধুলাগাননাট্যবিচারব্যবস্থাসামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে।

বর্তমান শূন্যতার মধ্যেস্থানীয় পর্যায়ে পুরুষরা নিজেদের ইসলামী শাসনের ব্যাখ্যা নিয়ে আসছে।

তারাগঞ্জের এক কৃষি শহরেগত মাসে কিছু সংগঠক তরুণ গোষ্টি নারীদের দুই দলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেনযার উদ্দেশ্য ছিল বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় মেয়েদের অনুপ্রাণিত করা।

কিন্তু প্রস্তুতি চলাকালীনশহরের এক মসজিদের নেতাআশরাফ আলী ঘোষণা করলেন যে নারীদের ও মেয়েদের ফুটবল খেলা করতে দেওয়া উচিত নয়।

খেলাধুলার আয়োজনকারীরা সাধারণত রিকশার সাথে বাঁধা লাউডস্পীকার পাঠিয়ে ম্যাচের বিবরণ প্রচার করে। আলী সাহেবও তার নিজস্ব লাউডস্পীকার পাঠিয়ে সতর্ক করলেনমানুষকে ম্যাচে অংশগ্রহণ না করার জন্য।

ছবি: তিনজন রেফারি নারীদের ফুটবল দলের দুইটি দলকে মাঠে নিয়ে যাচ্ছেনপাশে দর্শকদের এক গুচ্ছ বসে আছে।

৬ ফেব্রুয়ারিযখন খেলোয়াড়রা ক্লাসরুমকে পোশাক পরিবর্তনের ঘরে রূপান্তরিত করে জার্সি পরছিলতখন স্থানীয় কর্মকর্তারা ম্যাচ সম্পর্কিত বৈঠক করছিলেন। সংগঠক সিরাজুল ইসলামের মতেআলী সাহেব ঘোষণা করলেন, “আমি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে দেওয়ার পরিবর্তে নিজে শহীদ হতে চাই।

স্থানীয় প্রশাসন সম্মত হয়েম্যাচ বাতিলের ঘোষণা করে এলাকার ওপর কারফিউ আরোপ করে।

বাসে করে চার ঘণ্টা ভ্রমণের পর ম্যাচে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আসা ২২ বছর বয়সী তসলিমা আক্তার জানানতিনি অনেক গাড়িসেনাবাহিনী ও পুলিশ দেখেছেনযারা খেলোয়াড়দের বলেছিল যে ম্যাচ বাতিল।

মিসেস আক্তার বললেনতার দশ বছরের ফুটবল খেলার মধ্যেএটি প্রথমবারের মতো এমন প্রতিবন্ধকের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি জানান, “এখন আমি একটু ভয় পাচ্ছি যেকী হতে পারে।

সংগঠকরা কয়েক সপ্তাহ পরবহু সুরক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিতেএকটি মহিলা ম্যাচ পরিচালনা করতে সমর্থ হন। তবে সতর্কতা স্বরূপতরুণ নারীদের শর্টসের নিচে স্টকিং পরার পরামর্শ দেন।

প্রচারকের অবিচল হুমকির কারণেসংগঠকরা জানান যেভবিষ্যতে আবার সেই ঝুঁকি নিতে সক্ষম হবেন কিনাতা নিয়ে নিশ্চিত নন।

এক সাক্ষাৎকারের সময়মসজিদের নেতা আলী গর্বিত হাসি ছড়িয়ে বললেন – তিনি এক সাধারণ বিষয়কে বিতর্কিত কিছুতে পরিণত করে দিয়েছেন। তিনি বললেনতারাগঞ্জের মতো গ্রাম্য এলাকায়নারীদের ফুটবল খেলা অশালীনতার” কারণ হিসেবে দেখা হয়।

নারীদের খেলার বিষয়টি তাঁর সাম্প্রতিকতম আন্দোলন ছিল। বহু বছর ধরে তিনি নিপীড়িত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় আহমাদিয়া বিরুদ্ধে প্রচার ও আবেদন চালিয়ে যাচ্ছেনতাদের ৫০০ সদস্যকে তার এলাকার বাইরে সরানোর চেষ্টা করছেন।

ছবি: ভাঙ্গা কংক্রিটের বেড়ার মধ্য দিয়ে নির্মাণের ধ্বংসাবশেষের একটি স্তূপ দেখা যাচ্ছে।

মিসেস হাসিনার সরকারের পতনের রাতেআহমাদিয়ার ধর্মপালনের স্থান এক দলের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তাছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় স্থানবিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের কাজটি হয়েছিলো জাতীয় বিশৃঙ্খলার ঢেউয়ের অংশ হিসেবে । আহমাদিয়া সম্প্রদায় এখনও ভয়ের মধ্যে বাঁচছেতাদের প্রার্থনালয়ে হাজিরা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

তাদেরকে প্রার্থনালয়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত বোর্ড পুনর্নির্মাণ বা লাউডস্পীকার থেকে আবাজ প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয় না। আলী সাহেব সহিংসতার জন্য কোনো দায়িত্ব স্বীকার করেননিতবে তাঁর মতো প্রচারকদের ধর্মোপদেশ – যাঁরা আহমাদিয়াকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ঘোরাফেরা করছেন – তা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় আহমাদিয়া শাখার সভাপতি এ.কে.এম. শফিকুল ইসলাম বলেন সাধারণ মানুষের মনে কোন বিরোধ নেই ” । কিন্তু এই ধর্মীয় নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে।

(মুজিব মাশাল দি টাইমস’-এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধানভারতে এবং এর আশপাশের অঞ্চল – যার মধ্যে বাংলাদেশশ্রীলঙ্কানেপাল ও ভূটান রয়েছে – এই এলাকাগুলোর  সংবাদ কাভারেজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।)

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৫)

বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা ইসলামী উগ্রপন্থীদের জন্যে সুযোগ তৈরি করছে

০৬:৫৩:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫

মুজিব মাশাল ও সাইফ হাসনাত, তারাগঞ্জ ও ঢাকার থেকে ১ এপ্রিল, ২০২৫ (দি নিউ ইয়র্ক টাইমসসকাল ২:২২, পূর্ব আমেরিকান সময় অনুযায়ী আপডেট)

উগ্রপন্থীরা শুরু করেছিলেন নারীদের দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

বাংলাদেশের অথোরেটিয়ান নেতার পতনের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক শূন্যতায়এক শহরে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ঘোষণা করেছিলেন যে তরুণ নারীরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। অন্য একটি স্থানেতারা পুলিশের পর চাপ সৃষ্টি করে এমন এক পুরুষকে মুক্ত করিয়ে দিয়েছিলযে একজন মহিলাকে তার চুল ঢাকা না থাকার কারণে নাজেহাল করেছিলে। আর ওই নাজেহালকারীকে মুক্ত করে  তার তাকে ফুলের মালা পরে দিয়েছিলেন।

এরপর আরও স্পষ্ট দাবি উঠলো। ঢাকার র‌্যালিতে বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে দিলেনযদি সরকার ইসলামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারীদের মৃত্যুদণ্ড না দেয়তবে তারা নিজ হাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। কয়েকদিন পরনিষিদ্ধ একটি দল ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে বড় এক মার্চ অনুষ্ঠিত করলো।

বাংলাদেশ যখন তার ১৭৫ মিলিয়ন জনগণের জন্য গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ ও নতুন ভবিষ্যৎ নির্ধারণের চেষ্টা করছেতখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের নিচে দীর্ঘদিন থেকে লুকিয়ে থাকা ইসলামী উগ্রপন্থীরা ক্রমেই সামনে চলে আসছে

যারা কিছু পূর্বে নিষিদ্ধ ছিলএমন কয়েকটি ইসলামী দল ও সংগঠনের প্রতিনিধি সাক্ষাৎকারে  স্পষ্ট করে জানিয়েছেনতারা বাংলাদেশকে আরও মৌলবাদীতার দিক ঠেলে দিতে কাজ করছেনএই পরিবর্তন দেশের বাইরে ততটা এখনও নজরে পড়েনি।

ইসলামী নেতারা জোর দিয়ে দাবী করছেন যেবাংলাদেশে একটি ইসলামী সরকার” গড়ে তোলা উচিতযা ইসলামের প্রতি অসম্মান দেখানো ব্যক্তিদের শাস্তি দিবে এবং শালীনতা” বজায় রাখবে – এমন অস্পষ্ট ধারণাযা অন্যত্র স্ব-রক্ষামূলক বা ধর্মনির্মিত শাসনে পরিণত হয়েছে।

নতুন সংবিধান তৈরির দায়িত্বে নিযুক্ত রাজনৈতিক পক্ষের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেনতারা তাদের সুপারিশ নথিতে উল্লেখ করেছেনদেশের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে পরিবর্তে বহুত্ববাদ প্রবর্তন করা হবে এবং দেশটিকে আরও ধর্মীয় ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

ছবি: পুরুষ প্রতিবাদকারীরা এক রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেকারো কারো হাতে বড় কমলা ব্যানারযার একটি ব্যানারে লেখা খিলাফতের জন্য মার্চ

মৌলবাদী মোড় বিশেষ করে সেই মহিলা ছাত্রছাত্রীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়যারা দেশের দমনাত্মক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদচ্যুত করতে সহায়তা করেছিলেন।

তারা প্রত্যাশা করেছিল যেতার একদলীয় শাসনের পরিবর্তে দেশের বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে এমন একটি গণতান্ত্রিক উন্মুক্ততা আসবে। কিন্তু এখন তারা দেখতে পাচ্ছেন,  উম্মুক্ত গনতান্ত্রিক বৈচিত্রের বদলে এমন একটি ধর্মীয় পপুলিজমকে তাদের  মোকাবেলা করতে হচ্ছে যা হচ্ছে যা নারীদের ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরযার মধ্যে হিন্দু ও ইসলামের ছোট উপসমাজের অনুসারীরাও আছেন তাদের জীবনকে ভালনারেবল বা অসহায়ত্ব মধ্যে ফেলে দিয়েছে

আমরা বিক্ষোভের অগ্রভাগে ছিলাম। আমরা রাস্তায় আমাদের ভাইদের রক্ষা করেছি,” বলেছেন ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান স্নাতক২৯ বছর বয়সী শেখ তাসনিম আফরোজ এমি। এখন পাঁচ-ছয় মাস পরসবকিছুই পালটে গেছে।

সমালোচকরা বলছেন৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উগ্রপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাঁকে অনেক নরমগণতান্ত্রিক সংস্কারের জটে আটকে থাকাদ্বন্দ্ব থেকে বিরত এবং স্পষ্ট কোনো দর্শন ব্যাখ্যা করতে অক্ষম বলে অভিযোগ করা হচ্ছেআর এ সময়ে উগ্রপন্থীরা আরও পাবলিক স্থান দখল করছে।

ছবি: বেগুনি ও খাকি পোশাকে সজ্জিত ধূসর চুলের মুহাম্মদ ইউনুসযিনি একটি রুমে প্রবেশ করছেনপাশে একজন সুরক্ষা কর্মী ও একজন ব্যবসায়িক পোশাক পরিহিত ব্যক্তি রয়েছেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী নেতা মুহাম্মদ ইউনুসকে কিছু লোক অত্যন্ত নরম হওয়ার জন্য ইসলামী কঠোরপন্থীদের প্রতি অতিক্রম করার অভিযোগ করেছে। 

তার সহকর্মীরা একটি সূক্ষ্ম সমন্বয়ের কথা বলছেন: বহু বছরের অথোরেটিয়ান শাসনের পর মত প্রকাশের অবাধ অবস্থা বিক্ষোভের অধিকার রক্ষা করা প্রয়োজনের যুক্তি দেখাচ্ছেনতবে তা করলে বাস্তবে উগ্রপন্থী দাবির পথ মুক্ত হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পতনের পর পুলিশের অধিকাংশই পালিয়ে গেছে ও হতাশ অবস্থায় রয়েছে – আর তারা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না। সেনাবাহিনীযারা কিছু পুলিশি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেতা অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের সাথে ক্রমশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছেওই ছাত্র ও সরকার অতীতের অত্যাচারের জন্য কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহি করতে চায়।

বাংলাদেশে যা ঘটতে শুরু করেছেতা সমগ্র অঞ্চলে দখল করে নেওয়া মৌলবাদী ঢেউয়ের প্রতিচ্ছবি।

আফগানিস্তান আজ একটি চরম নৃ-ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণতযা নারীদের মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করছে। পাকিস্তানেইসলামী উগ্রপন্থীরা বহু বছর ধরে সহিংসতার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতেএকটি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু দক্ষিণপন্থী দল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে দুর্বল করছে। মায়ানমার বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের দখলেযারা জাতিগত পরিষ্কারপথের অভিযানের তদারকি করছে।

নাহিদ ইসলামএকজন ছাত্র নেতাযিনি অন্তর্বর্তী প্রশাসনে মন্ত্রী ছিলেন এবং সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিতে সরে গেছেনস্বীকার করেছেন ভয় আছে” যে দেশটি উগ্রপন্থার দিকে সরে যাবে।

ছবি: ইসলাম একটি পতাকায় আচ্ছন্ন মঞ্চে দাঁড়িয়েউচ্চ হাত করে মাইক্রোফোনে কথা বলছেন।

ছাত্রবিক্ষোভ আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম বলছেনতিনি আশা করেন গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মত মূল্যবোধ বজায় থাকবে।

তবুও তিনি আশাবাদীসংবিধানে পরিবর্তন সত্ত্বেও গণতন্ত্রসাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা বিরোধী মূল্যবোধ টিকে থাকবে। আমি মনে করি নাএমন কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে বাংলাদেশে যা এই মৌলিক মূল্যবোধগুলোর বিরুদ্ধে যাবে,” তিনি বললেন।

কেউ কেউ বলছেনগভীর শিল্প ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের ঐতিহ্যযুক্ত বাংলা সংস্কৃতিই আছেঅন্যরা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় আশার কণা খুঁজে পাচ্ছে।

নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এতটাই অন্তর্ভুক্ত – ৩৭ শতাংশ আনুষ্ঠানিক কর্মশক্তিতে রয়েছেনযা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ হারগুলোর মধ্যে একটি – যে কোনো প্রচেষ্টা তাদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

১৫ বছরের ধরে  যখন হাসিনা উগ্রপন্থীদের দমিয়ে একটি স্থিতি রক্ষা করেছিলেনতার পতনের পর উগ্রপন্থী শক্তিগুলো আবার নিজেদেরকে দৃশ্যমান করতে চাচ্ছে।

তিনি এমন একটি পুলিশি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন যা ইসলামী উপাদানগুলোর উপর কঠোর ছিলো এমনকি মূলধারার কাছাকাছি থাকা যারা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারতো তাদেরও লক্ষ্য করে। একই সাথেতিনি ইসলামি দলগুলির ধর্মীয় রক্ষণশীল ভক্তবৃন্দকে সন্তুষ্ট করতে হাজার হাজার অনিয়ন্ত্রিত ইসলামী মাদ্রাসার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং শত শত মসজিদ নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন।

হাসিনা চলে যাওয়ার পরপুরো ব্যবস্থাকে উল্টে দেওয়ার জন্য ছোট উগ্রপন্থী গোষ্ঠী এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতরে কাজ করতে চাওয়া আরও মূলধারার ইসলামী দলগুলোমিলিতভাবে আরও রক্ষণশীল বাংলাদেশের লক্ষ্যবস্তুতে সমবেত হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় ইসলামী দলজামায়াত-ই-ইসলামীএকটি বড় সুযোগ দেখছে। বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা জানানদলের উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগ রয়েছে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। বছরের শেষে প্রত্যাশিত নির্বাচনে বিজয় লাভ করা সম্ভব না হলেওদলটি মূলধারার ধর্মনিরপেক্ষ দলের বিশ্বাসযোগ্যতা কমানোর সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।

ছবি: ঢাকার উপশহরে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মীরা একসাথে জিনস সেলাই করছেন।

নারীদের ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা বিপর্যয় আনতে পারে। 

জামায়াতের মহাসচিব মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেনদলটি একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র চায়। ধর্ম ও রাজনীতির সমন্বয়ে সবচেয়ে নিকটতম মডেলতার মতেতুরস্ক।

ইসলাম পুরুষ ও নারীদের আচরণ ও নীতিশাস্ত্রের দিক থেকে নৈতিক নির্দেশনা প্রদান করে,” তিনি বললেন। এই নির্দেশনার মধ্যে নারীরা যে কোনো পেশায় অংশ নিতে পারে – খেলাধুলাগাননাট্যবিচারব্যবস্থাসামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে।

বর্তমান শূন্যতার মধ্যেস্থানীয় পর্যায়ে পুরুষরা নিজেদের ইসলামী শাসনের ব্যাখ্যা নিয়ে আসছে।

তারাগঞ্জের এক কৃষি শহরেগত মাসে কিছু সংগঠক তরুণ গোষ্টি নারীদের দুই দলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেনযার উদ্দেশ্য ছিল বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় মেয়েদের অনুপ্রাণিত করা।

কিন্তু প্রস্তুতি চলাকালীনশহরের এক মসজিদের নেতাআশরাফ আলী ঘোষণা করলেন যে নারীদের ও মেয়েদের ফুটবল খেলা করতে দেওয়া উচিত নয়।

খেলাধুলার আয়োজনকারীরা সাধারণত রিকশার সাথে বাঁধা লাউডস্পীকার পাঠিয়ে ম্যাচের বিবরণ প্রচার করে। আলী সাহেবও তার নিজস্ব লাউডস্পীকার পাঠিয়ে সতর্ক করলেনমানুষকে ম্যাচে অংশগ্রহণ না করার জন্য।

ছবি: তিনজন রেফারি নারীদের ফুটবল দলের দুইটি দলকে মাঠে নিয়ে যাচ্ছেনপাশে দর্শকদের এক গুচ্ছ বসে আছে।

৬ ফেব্রুয়ারিযখন খেলোয়াড়রা ক্লাসরুমকে পোশাক পরিবর্তনের ঘরে রূপান্তরিত করে জার্সি পরছিলতখন স্থানীয় কর্মকর্তারা ম্যাচ সম্পর্কিত বৈঠক করছিলেন। সংগঠক সিরাজুল ইসলামের মতেআলী সাহেব ঘোষণা করলেন, “আমি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে দেওয়ার পরিবর্তে নিজে শহীদ হতে চাই।

স্থানীয় প্রশাসন সম্মত হয়েম্যাচ বাতিলের ঘোষণা করে এলাকার ওপর কারফিউ আরোপ করে।

বাসে করে চার ঘণ্টা ভ্রমণের পর ম্যাচে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আসা ২২ বছর বয়সী তসলিমা আক্তার জানানতিনি অনেক গাড়িসেনাবাহিনী ও পুলিশ দেখেছেনযারা খেলোয়াড়দের বলেছিল যে ম্যাচ বাতিল।

মিসেস আক্তার বললেনতার দশ বছরের ফুটবল খেলার মধ্যেএটি প্রথমবারের মতো এমন প্রতিবন্ধকের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি জানান, “এখন আমি একটু ভয় পাচ্ছি যেকী হতে পারে।

সংগঠকরা কয়েক সপ্তাহ পরবহু সুরক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিতেএকটি মহিলা ম্যাচ পরিচালনা করতে সমর্থ হন। তবে সতর্কতা স্বরূপতরুণ নারীদের শর্টসের নিচে স্টকিং পরার পরামর্শ দেন।

প্রচারকের অবিচল হুমকির কারণেসংগঠকরা জানান যেভবিষ্যতে আবার সেই ঝুঁকি নিতে সক্ষম হবেন কিনাতা নিয়ে নিশ্চিত নন।

এক সাক্ষাৎকারের সময়মসজিদের নেতা আলী গর্বিত হাসি ছড়িয়ে বললেন – তিনি এক সাধারণ বিষয়কে বিতর্কিত কিছুতে পরিণত করে দিয়েছেন। তিনি বললেনতারাগঞ্জের মতো গ্রাম্য এলাকায়নারীদের ফুটবল খেলা অশালীনতার” কারণ হিসেবে দেখা হয়।

নারীদের খেলার বিষয়টি তাঁর সাম্প্রতিকতম আন্দোলন ছিল। বহু বছর ধরে তিনি নিপীড়িত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় আহমাদিয়া বিরুদ্ধে প্রচার ও আবেদন চালিয়ে যাচ্ছেনতাদের ৫০০ সদস্যকে তার এলাকার বাইরে সরানোর চেষ্টা করছেন।

ছবি: ভাঙ্গা কংক্রিটের বেড়ার মধ্য দিয়ে নির্মাণের ধ্বংসাবশেষের একটি স্তূপ দেখা যাচ্ছে।

মিসেস হাসিনার সরকারের পতনের রাতেআহমাদিয়ার ধর্মপালনের স্থান এক দলের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তাছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় স্থানবিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের কাজটি হয়েছিলো জাতীয় বিশৃঙ্খলার ঢেউয়ের অংশ হিসেবে । আহমাদিয়া সম্প্রদায় এখনও ভয়ের মধ্যে বাঁচছেতাদের প্রার্থনালয়ে হাজিরা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

তাদেরকে প্রার্থনালয়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত বোর্ড পুনর্নির্মাণ বা লাউডস্পীকার থেকে আবাজ প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয় না। আলী সাহেব সহিংসতার জন্য কোনো দায়িত্ব স্বীকার করেননিতবে তাঁর মতো প্রচারকদের ধর্মোপদেশ – যাঁরা আহমাদিয়াকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ঘোরাফেরা করছেন – তা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় আহমাদিয়া শাখার সভাপতি এ.কে.এম. শফিকুল ইসলাম বলেন সাধারণ মানুষের মনে কোন বিরোধ নেই ” । কিন্তু এই ধর্মীয় নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে।

(মুজিব মাশাল দি টাইমস’-এর দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো প্রধানভারতে এবং এর আশপাশের অঞ্চল – যার মধ্যে বাংলাদেশশ্রীলঙ্কানেপাল ও ভূটান রয়েছে – এই এলাকাগুলোর  সংবাদ কাভারেজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।)