সারাক্ষণ রিপোর্ট
সম্প্রতি ধনী দেশগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে সহায়তা বরাদ্দ করত, তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ কাজ করছে:
- প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ব্যয়
- বৈদেশিক সহায়তার ফল পর্যাপ্ত না হওয়ার ধারণা
এর ফলে দাতব্য সংস্থা ও অনুদান গ্রহণকারী দেশ উভয়েই নতুন করে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে বেশি গুরুত্ব
সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতে গণস্বাস্থ্য ও টেকসই অর্থায়নের মতো খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। অনেক দরিদ্র দেশে এখনো মৌলিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া কঠিন, অথচ টিকা এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তুলনামূলক কম খরচে পাওয়া সম্ভব।
- গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাদানে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আনুমানিক ৫৪ ডলারের সমমূল্যের সুফল পাওয়া যায়।
- ১৯৭৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যখাতে বৈদেশিক সহায়তার কারণে উন্নয়নশীল দেশের গড় আয়ু বেড়েছে এবং বহু শিশুর অকালমৃত্যু রোধ হয়েছে।
সুস্থ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি সুফল
স্বল্পমেয়াদে জীবন বাঁচানোই শুধু নয়, দীর্ঘমেয়াদে একটি সুস্থ জনগোষ্ঠী দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক।
- সাম্প্রতিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে, তুলনামূলকভাবে কম খরচে তৈরি দুটি নতুন ম্যালেরিয়া টিকা এসেছে।
- এসব টিকা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এখনো নিশ্চিত হয়নি।
- সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য স্থানীয় নয়, বিশ্বব্যাপী সুফল বয়ে আনে, কারণ রোগের সংক্রমণ সীমান্ত মানে না।
স্বাস্থ্য সহায়তার কিছু চ্যালেঞ্জ
অনেক সময় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় না:
- স্থানীয় সরকারের নিজস্ব বাজেটের বিকল্প হিসেবে এসব সহায়তা ব্যবহার হয় বা নির্ভরশীলতা বাড়ায়।
- বিভিন্ন দাতার ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের কারণে কোনো দেশের স্বাস্থ্যনীতিতে অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে।
- অনিয়মিত সহায়তার ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি হয়।
তবে সাম্প্রতিককালে কিছু দাতা সংস্থা আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্রদানে সচেষ্ট হয়েছে। তারা কম খরচের কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় এবং সরকারকে উৎসাহ দেয় নিজস্ব বাজেট থেকেও বিনিয়োগ করতে।
সফল উদ্যোগের উদাহরণ: গাভি ও গ্লোবাল ফান্ড
গাভি (Gavi)—বিশ্বব্যাপী টিকা প্রদানকারী সংস্থা—ও গ্লোবাল ফান্ড—যা এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া রোধে কাজ করে—এসব ইতিবাচক মডেলের অন্যতম দৃষ্টান্ত।
- গাভি বিপুল পরিমাণে টিকা কিনে দাম কমায় ও সরবরাহ সহজ করে।
- টিকা পুরোপুরি বিনামূল্যে না দিয়ে দেশগুলোর কাছ থেকে আংশিক খরচ বহন করায়, যাতে তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করার সক্ষমতা অর্জন করে।
- এর ফলে ইতোমধ্যে ১৯টি দেশ সম্পূর্ণ নিজস্ব সামর্থ্যে টিকা সরবরাহ করতে পারে।
- গাভি ইবোলা, কলেরা ও পীতজ্বরের মতো রোগের জন্য টিকার মজুত গড়ে তুলেছে; ভবিষ্যতে এমপক্সের জন্যও একই পরিকল্পনা রয়েছে।
বড় কোনো মহামারি শুরু হলে এই মজুতের সুফল গোটা বিশ্ব পেতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ
গাভি (GAVI) আগামী পাঁচ বছরে ৫০ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে ৯ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে নতুন ম্যালেরিয়া টিকা বিতরণ করে আফ্রিকায় বিশালসংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
- এখনো তারা পর্যাপ্ত অর্থ জোগাড় করতে পারেনি।
- তহবিল সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত একটি সম্মেলনও পিছিয়ে দিতে হয়েছে, কারণ বড় বড় দাতা দেশগুলো এখনো নিশ্চিত নয়।
- শোনা যাচ্ছে, আমেরিকা গাভিকে আর সহায়তা নাও করতে পারে।
ফলে গাভি ও গ্লোবাল ফান্ডসহ স্বাস্থ্য সহায়তায় নিযুক্ত অন্যান্য সংস্থাকে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হতে পারে।
নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ
সহায়তা কমে গেলেও দাতা দেশগুলোর উচিত স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া—কোন খাতে কতটুকু অনুদান দেওয়া হবে, ও কেন। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলোকে নিজেদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে।
- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশে জনস্বাস্থ্য বাজেট বা ব্যক্তি-পিছু ব্যয় কমেছে।
- বৈদেশিক সহায়তা কমে আসলে জরুরি খাতগুলোয় বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি হয়ে পড়বে।
- শিশুর টিকাদান হতে পারে এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।