১০:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে চরমপন্থা : কতটা সত্যি, কার ‘বিভ্রান্তিবিলাস’?

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • 26

বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী, জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা কি একমত?

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করবো বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে যেন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভূমিকা রাখতে পারি।” কোনো গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন মাহফুজ আলম, ‘‘যদি আলোচনা-সতর্কতায় কাজ না হয়, যদি দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়, সরকার অবশ্যই হার্ডলাইনে যাবে।”

এর আগে গত ১৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  সাংবাদিকদের এক ইফতার অনুষ্ঠানে দ্রুত নির্বাচন দাবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে, যত দেরি হবে তত বেশি আবার বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করবার জন্য বিরুদ্ধ শক্তি-ফ্যাসিস্ট শক্তিরা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে দেবে। তারা শুধু নয়, একই সঙ্গে যারা জঙ্গি মনোভাব পোষণ করে থাকেন, যারা উগ্র মনোভাব পোষণ করে থাকেন, তারাও এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করবে।”

তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো উত্থান ঘটেনি। বরং বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ছোবল নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মপালন করছেন। কথা বলতে পারছেন। শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনের নামে নাটক করে সেটা বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন। এটা ক্ষমতায় টিকে থাকতে তার রাজনৈতিক কৌশল ছিল।”

তার মতে, ‘‘পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা হাজার হাজার কোটি অবৈধ টাকার মালিক। তাদের অবৈধ টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।”

শঙ্কা জাগানো যত ঘটনা

গত ৭ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মেকাররম মসজিদ এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ‘মার্চ ফর খেলাফত’ কর্মসূচি পালন করে।  তার আগে কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালালেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কর্মসূচি পালনের দিন বাধা দিয়ে মিছিল পণ্ড এবং ৩৬ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নামের সংগঠনটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠনটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তারা মনে করে, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। সংগঠনের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদকে ২০০৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এরপর ২০১০ সালের ২০শে এপ্রিল ফার্মগেটে নিজের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৩ মে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বিশ্বের অনেক দেশে হিযবুত তাহরীর এখনো নিষিদ্ধ।

২০২৪ সালের ৭ আগস্ট, অর্থাৎ সরকার পতনের দুই দিন পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ‘বিক্ষোভের’ সময় কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যান৷ বন্দি পালানো ঠেকাতে গুলি ছোঁড়েন কারারক্ষীরা৷ এতে ছয় জন নিহত হয়৷ নিহতদের মধ্যে তিন জঙ্গিও ছিল৷ তিনজনই গুলশান হোলি আর্টিজান বেকারি হামলা ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন৷ পালিয়ে যাওয়া ২০৯ জনের মধ্যেও বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে বলে কারাসূত্র জানিয়েছে।

তার আগে, জুলাই আন্দোলন চলার সময় (২০ জুলাই) নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের ‘সহযোদ্ধারা’৷ ৯ জনের মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত জেলখানা থেকে পালানো ৯৮ জঙ্গির ৭০ জনই সাজাপ্রাপ্ত৷ তাদের মধ্যে ২৭ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-র প্রধান মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানী কারাগার থেকে মুক্তি পান৷ ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল৷ সেই সাজা ভোগ করা হয়ে গেলেও অন্য পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন৷ ৫ আগস্টের পর সেগুলোতে তিনি জামিন পান৷

৫ আগস্টের পর একজন শীর্ষ জঙ্গি নেতাও জামিন পেয়ছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ৫ আগস্টের পর মব ভায়োলেন্সের বিস্তার দেখা যায় ব্যাপকভাবে৷ নারীদের প্রকাশ্যে নাজেহাল করা, নারীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। উপাসনালয়ে, মাজারে ও বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে অনেকবার।

গত ১৮ জানুয়ারি পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৪ আগস্টের পর থেকে ৪০টি মাজারের ৪৪ বার হামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১৭টি মাজারে ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে সাতটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘামলার ঘটনায় ফৌজদারি মামলায় মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আর বিশ্ব সূফী সংস্থা ২৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০টি মাজারে হামলা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ওড়না ঠিক করার কথা বলে হেনস্থা করা হয়৷ এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠলে  অভিযুক্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী আসিফ অর্নবকে আটক করা হয়৷ কিন্তু আটকের পরই ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে কিছু লোক শাহবাগ থানা ঘেরাও করে।থানার ভিতরে তাদের ফেসবুক লাইভও করতে দেখা যায়৷আটকের পরের দিন জামিন হলে অর্নবকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় ‘তৌহিদী জনতা’৷

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরায় বসন্ত উৎসবও চাপের মুখে বন্ধ করে দিতে হয়। একই দিন টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় ফুলের দোকানে হামলা চালায় ‘তৗহিদী জনতা’। ১৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে পূর্ব নির্ধারিত ঘুড়ি উৎসবও বাতিল করা হয়। ঘুড়ি উৎসববিরোধী একটি লিফলেট ছড়িযে দেয়ায় আতঙ্কে বাতিল করা হয় উৎসব।এর আগে ১২ ফেব্রয়ারি টাঙ্গাইলে লালন স্মরণোৎসবও হতে পারেনি। তার আগে নারায়ণগঞ্জে লালন ভক্তদের মিলনমেলাও পণ্ড করা হয় হামলা চালিয়ে।

২০২৫ সালের বইমেলাও শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারেনি৷ ১০ ফেব্রুয়ারি তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় ‘সব্যসাচী প্রকাশনা’র স্টলে গিয়ে ‘মব’ তৈরি করে ‘তৌহিদী জনতা’।তাদের চাপের মুখে বন্ধ করে দেয়া হয় স্টল।

২৮ জানুয়ারি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের প্রতিবাদে ‘তৌহিদী জনতা’ মাঠে ভাংচুর চালায়৷ পরের দিনে সেই ম্যাচ হতে দেয়নি তারা।

বিশ্লেষকরা যা মনে করেন

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন, নানা স্তরে নানাভাবে ব্যাপক নারীবিদ্বেষী তৎপরতা, ‘তৌহিদী জনতা’র নামে মব ভায়োলেন্স, মাজারে হামলা, পোশাকের কারণে নারীদের হেনস্থা করা এবং  নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার জামিন পাওয়া সার্বিকভাবেই উদ্বেগের কারণ৷ এছাড়া ৫ আগস্ট এবং তার আগে-পরে কারাগার থেকে পালানো জঙ্গিদের এখনো আটক না হওয়ার বিষয়টিকেও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন তারা৷

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল(অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” দেশে উগ্রপন্থা বা চরমপন্থার উত্থানের প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের উক্তি এবং যে ধরনের পরিবর্তনের শূন্যতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজ করছে, সেইখানে তাদের প্রবেশ করার একটা দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিতরে যে ধরনের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, দক্ষতার যে অভাব দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কর্মকাণ্ডে যে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে- সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা এই ধরনের গোষ্ঠী কাজে লাগাতে পারে।”

“বিশেষ করে যে ধরনের সংগঠন নিষিদ্ধ, সেই ধরনের সংগঠন যদি আইন ভঙ্গ করে তাদের কার্যক্রম প্রকাশ্যে চালায়, তাহলে এই ধরনের প্রবণতা বৃদ্ধির বাহ্যিক প্রকাশ,” বলে মনে করেন তিনি।

তার কথা, ”  সরকারের উচিত ছিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া। কেউ যদি এসব ক্ষেত্রে আমাদের সমালোচনাও করে, সেটা যে সবক্ষেত্রে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।”

জঙ্গিবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ” ৫ আগস্টের পর থেকে আমি বিষয়গুলো নিয়ে নিভৃতে পর্যবেক্ষণ করছি। দেয়ালের লিখনগুলো পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি। মিছিলগুলোর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়ার চেষ্টা করছি। নারীদের উত্যক্ত করা, সতর্ক করা বা হেনস্তা করা- এগুলো লক্ষ্য করছি। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করছি যে, একধনের সঙ সেজে মাইকে এক ধরনের  নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নারীদের স্বাধীনতা হরণের প্রচারণা, তাদের হেয় এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রচারণা। এই প্রচারণাগুলো হচ্ছে ধর্মীয় আবহে। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যারা ধর্মীয় উগ্রবাদে বিশ্বাসী. তাদের উপস্থিতি এবং গতিবিধি, তাদের কার্যক্রম- এগুলো স্পষ্টতই বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বা তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নাই- এটা বলার সুযোগ নাই।”

” ৫ আগস্টের পর থেকে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেটার সুযোগ উগ্রবাদীরা নিচ্ছে। অস্ত্র, গোলা-বারুদ লুট হয়েছে। কারাগার থেকে জঙ্গিরা পালিয়েছে। পরে অনেকে জামিন পেয়েছে। তাদের ব্যাপারে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু বলছে না। কোনো কোনো উগ্রবাদীকে চাপের মুখে জামিন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। যে উগ্রবাদীরা এখন মুক্ত, তারা বসে থাকবে- এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারা সংগঠিত হবে, তারা রিক্রুট করবে- কী সিদ্ধান্ত তারা নেবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম দেখে আমরা বুঝতে পারবো,” বলেন তিনি।

সরকারের অস্বীকারের প্রবণতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা সব সরকারের সময়ই দেখা গেছে। এই সরকারও বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার না করে অস্বীকার করছে। কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের অতিকথন আওয়ামী লীগের আমলে যেমন ছিল, তেমনি এখনো আছে। এই অতিকথন-ওয়ালারাই এখন রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা।”

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে যে কয়েকজন সাংবাদিক নিয়মিত কাজ করে আসছেন, নুরুজ্জামান লাবু তাদের একজন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে  ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” ৫ আগস্টের পর থেকে উগ্রবাদীদের নতুন করে রিঅর্গ্যানাইজড হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হলো- আগে উগ্রবাদীদের যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো- সেই চেষ্টা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি না। যে পুলিশ কর্মকর্তারা আগে তাদের আটক, গ্রেপ্তার করেছেন- তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে। তারা সাজানো নাটক করে তাদের গ্রেপ্তার করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। ফলে, এখন যে পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন, তারা উগ্রবাদীদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ পাচ্ছে না। উগ্রবাদ দমনে যে বিশেষায়িত ইউনিটগুলো আছে, তারাও কাজ করছে না বলা চলে। আর উগ্রবাদ সাধারণ কোনো অপরাধ নয়। এটার বিরুদ্ধে কাজ করতে অভিজ্ঞতা ও বিশেষ জ্ঞান থাকা দরকার।”

তার কথা, ” আমরা দেখেছি নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই শীর্ষ গুরু জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করেছেন। আরো যারা ছাড়া পেয়েছেন, তারা কখনো ‘তৌহিদী জনতা’ আবার কখনো মব হিসাবে সক্রিয় হচ্ছেন। শাহবাগ থানায় আটক নারীকে কটূক্তিকারী ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য যারা থানা ঘেরাও করেছিলেন, তাদের মধ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া উগ্রবাদী ছিল। তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।”

“এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরকেই আমরা প্রকাশ্যে দেখেছি। কিন্তু অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয় আছে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন গা-ছাড়া বা ঢিলেমি ভাব আসে, তখনই তারা সংগঠিত হয় এবং পরিস্থিতি বুঝে, একটি সময়ের পর তারা তাদের শক্তির জানান দেয়,” বলেন তিনি।

ডয়চে ভেলে বাংলা

বাংলাদেশে চরমপন্থা : কতটা সত্যি, কার ‘বিভ্রান্তিবিলাস’?

০৫:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী, জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা কি একমত?

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করবো বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে যেন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভূমিকা রাখতে পারি।” কোনো গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন মাহফুজ আলম, ‘‘যদি আলোচনা-সতর্কতায় কাজ না হয়, যদি দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয়, সরকার অবশ্যই হার্ডলাইনে যাবে।”

এর আগে গত ১৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  সাংবাদিকদের এক ইফতার অনুষ্ঠানে দ্রুত নির্বাচন দাবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে, যত দেরি হবে তত বেশি আবার বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করবার জন্য বিরুদ্ধ শক্তি-ফ্যাসিস্ট শক্তিরা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে দেবে। তারা শুধু নয়, একই সঙ্গে যারা জঙ্গি মনোভাব পোষণ করে থাকেন, যারা উগ্র মনোভাব পোষণ করে থাকেন, তারাও এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করবে।”

তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো উত্থান ঘটেনি। বরং বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ছোবল নেই, মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মপালন করছেন। কথা বলতে পারছেন। শেখ হাসিনা জঙ্গি দমনের নামে নাটক করে সেটা বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন। এটা ক্ষমতায় টিকে থাকতে তার রাজনৈতিক কৌশল ছিল।”

তার মতে, ‘‘পরাজিত শক্তি নিউইয়র্ক টাইমসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা হাজার হাজার কোটি অবৈধ টাকার মালিক। তাদের অবৈধ টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।”

শঙ্কা জাগানো যত ঘটনা

গত ৭ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মেকাররম মসজিদ এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ‘মার্চ ফর খেলাফত’ কর্মসূচি পালন করে।  তার আগে কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালালেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কর্মসূচি পালনের দিন বাধা দিয়ে মিছিল পণ্ড এবং ৩৬ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নামের সংগঠনটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠনটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তারা মনে করে, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। সংগঠনের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদকে ২০০৯ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এরপর ২০১০ সালের ২০শে এপ্রিল ফার্মগেটে নিজের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৩ মে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বিশ্বের অনেক দেশে হিযবুত তাহরীর এখনো নিষিদ্ধ।

২০২৪ সালের ৭ আগস্ট, অর্থাৎ সরকার পতনের দুই দিন পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ‘বিক্ষোভের’ সময় কারারক্ষীদের জিম্মি করে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যান৷ বন্দি পালানো ঠেকাতে গুলি ছোঁড়েন কারারক্ষীরা৷ এতে ছয় জন নিহত হয়৷ নিহতদের মধ্যে তিন জঙ্গিও ছিল৷ তিনজনই গুলশান হোলি আর্টিজান বেকারি হামলা ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন৷ পালিয়ে যাওয়া ২০৯ জনের মধ্যেও বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে বলে কারাসূত্র জানিয়েছে।

তার আগে, জুলাই আন্দোলন চলার সময় (২০ জুলাই) নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের ‘সহযোদ্ধারা’৷ ৯ জনের মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত জেলখানা থেকে পালানো ৯৮ জঙ্গির ৭০ জনই সাজাপ্রাপ্ত৷ তাদের মধ্যে ২৭ জনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।

৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-র প্রধান মুফতি জসিম উদ্দীন রাহমানী কারাগার থেকে মুক্তি পান৷ ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল৷ সেই সাজা ভোগ করা হয়ে গেলেও অন্য পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন৷ ৫ আগস্টের পর সেগুলোতে তিনি জামিন পান৷

৫ আগস্টের পর একজন শীর্ষ জঙ্গি নেতাও জামিন পেয়ছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ৫ আগস্টের পর মব ভায়োলেন্সের বিস্তার দেখা যায় ব্যাপকভাবে৷ নারীদের প্রকাশ্যে নাজেহাল করা, নারীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। উপাসনালয়ে, মাজারে ও বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে অনেকবার।

গত ১৮ জানুয়ারি পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৪ আগস্টের পর থেকে ৪০টি মাজারের ৪৪ বার হামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১৭টি মাজারে ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে সাতটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘামলার ঘটনায় ফৌজদারি মামলায় মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আর বিশ্ব সূফী সংস্থা ২৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০টি মাজারে হামলা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ওড়না ঠিক করার কথা বলে হেনস্থা করা হয়৷ এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠলে  অভিযুক্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী আসিফ অর্নবকে আটক করা হয়৷ কিন্তু আটকের পরই ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে কিছু লোক শাহবাগ থানা ঘেরাও করে।থানার ভিতরে তাদের ফেসবুক লাইভও করতে দেখা যায়৷আটকের পরের দিন জামিন হলে অর্নবকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় ‘তৌহিদী জনতা’৷

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরায় বসন্ত উৎসবও চাপের মুখে বন্ধ করে দিতে হয়। একই দিন টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় ফুলের দোকানে হামলা চালায় ‘তৗহিদী জনতা’। ১৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে পূর্ব নির্ধারিত ঘুড়ি উৎসবও বাতিল করা হয়। ঘুড়ি উৎসববিরোধী একটি লিফলেট ছড়িযে দেয়ায় আতঙ্কে বাতিল করা হয় উৎসব।এর আগে ১২ ফেব্রয়ারি টাঙ্গাইলে লালন স্মরণোৎসবও হতে পারেনি। তার আগে নারায়ণগঞ্জে লালন ভক্তদের মিলনমেলাও পণ্ড করা হয় হামলা চালিয়ে।

২০২৫ সালের বইমেলাও শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারেনি৷ ১০ ফেব্রুয়ারি তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় ‘সব্যসাচী প্রকাশনা’র স্টলে গিয়ে ‘মব’ তৈরি করে ‘তৌহিদী জনতা’।তাদের চাপের মুখে বন্ধ করে দেয়া হয় স্টল।

২৮ জানুয়ারি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের প্রতিবাদে ‘তৌহিদী জনতা’ মাঠে ভাংচুর চালায়৷ পরের দিনে সেই ম্যাচ হতে দেয়নি তারা।

বিশ্লেষকরা যা মনে করেন

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন, নানা স্তরে নানাভাবে ব্যাপক নারীবিদ্বেষী তৎপরতা, ‘তৌহিদী জনতা’র নামে মব ভায়োলেন্স, মাজারে হামলা, পোশাকের কারণে নারীদের হেনস্থা করা এবং  নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার জামিন পাওয়া সার্বিকভাবেই উদ্বেগের কারণ৷ এছাড়া ৫ আগস্ট এবং তার আগে-পরে কারাগার থেকে পালানো জঙ্গিদের এখনো আটক না হওয়ার বিষয়টিকেও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন তারা৷

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল(অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” দেশে উগ্রপন্থা বা চরমপন্থার উত্থানের প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের উক্তি এবং যে ধরনের পরিবর্তনের শূন্যতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজ করছে, সেইখানে তাদের প্রবেশ করার একটা দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিতরে যে ধরনের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, দক্ষতার যে অভাব দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কর্মকাণ্ডে যে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে- সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা এই ধরনের গোষ্ঠী কাজে লাগাতে পারে।”

“বিশেষ করে যে ধরনের সংগঠন নিষিদ্ধ, সেই ধরনের সংগঠন যদি আইন ভঙ্গ করে তাদের কার্যক্রম প্রকাশ্যে চালায়, তাহলে এই ধরনের প্রবণতা বৃদ্ধির বাহ্যিক প্রকাশ,” বলে মনে করেন তিনি।

তার কথা, ”  সরকারের উচিত ছিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া। কেউ যদি এসব ক্ষেত্রে আমাদের সমালোচনাও করে, সেটা যে সবক্ষেত্রে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।”

জঙ্গিবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ” ৫ আগস্টের পর থেকে আমি বিষয়গুলো নিয়ে নিভৃতে পর্যবেক্ষণ করছি। দেয়ালের লিখনগুলো পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি। মিছিলগুলোর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়ার চেষ্টা করছি। নারীদের উত্যক্ত করা, সতর্ক করা বা হেনস্তা করা- এগুলো লক্ষ্য করছি। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করছি যে, একধনের সঙ সেজে মাইকে এক ধরনের  নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নারীদের স্বাধীনতা হরণের প্রচারণা, তাদের হেয় এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রচারণা। এই প্রচারণাগুলো হচ্ছে ধর্মীয় আবহে। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যারা ধর্মীয় উগ্রবাদে বিশ্বাসী. তাদের উপস্থিতি এবং গতিবিধি, তাদের কার্যক্রম- এগুলো স্পষ্টতই বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বা তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নাই- এটা বলার সুযোগ নাই।”

” ৫ আগস্টের পর থেকে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেটার সুযোগ উগ্রবাদীরা নিচ্ছে। অস্ত্র, গোলা-বারুদ লুট হয়েছে। কারাগার থেকে জঙ্গিরা পালিয়েছে। পরে অনেকে জামিন পেয়েছে। তাদের ব্যাপারে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু বলছে না। কোনো কোনো উগ্রবাদীকে চাপের মুখে জামিন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। যে উগ্রবাদীরা এখন মুক্ত, তারা বসে থাকবে- এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তারা সংগঠিত হবে, তারা রিক্রুট করবে- কী সিদ্ধান্ত তারা নেবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম দেখে আমরা বুঝতে পারবো,” বলেন তিনি।

সরকারের অস্বীকারের প্রবণতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা সব সরকারের সময়ই দেখা গেছে। এই সরকারও বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার না করে অস্বীকার করছে। কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের অতিকথন আওয়ামী লীগের আমলে যেমন ছিল, তেমনি এখনো আছে। এই অতিকথন-ওয়ালারাই এখন রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা।”

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে যে কয়েকজন সাংবাদিক নিয়মিত কাজ করে আসছেন, নুরুজ্জামান লাবু তাদের একজন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে  ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” ৫ আগস্টের পর থেকে উগ্রবাদীদের নতুন করে রিঅর্গ্যানাইজড হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হলো- আগে উগ্রবাদীদের যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো- সেই চেষ্টা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি না। যে পুলিশ কর্মকর্তারা আগে তাদের আটক, গ্রেপ্তার করেছেন- তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে। তারা সাজানো নাটক করে তাদের গ্রেপ্তার করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। ফলে, এখন যে পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন, তারা উগ্রবাদীদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ পাচ্ছে না। উগ্রবাদ দমনে যে বিশেষায়িত ইউনিটগুলো আছে, তারাও কাজ করছে না বলা চলে। আর উগ্রবাদ সাধারণ কোনো অপরাধ নয়। এটার বিরুদ্ধে কাজ করতে অভিজ্ঞতা ও বিশেষ জ্ঞান থাকা দরকার।”

তার কথা, ” আমরা দেখেছি নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই শীর্ষ গুরু জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করেছেন। আরো যারা ছাড়া পেয়েছেন, তারা কখনো ‘তৌহিদী জনতা’ আবার কখনো মব হিসাবে সক্রিয় হচ্ছেন। শাহবাগ থানায় আটক নারীকে কটূক্তিকারী ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য যারা থানা ঘেরাও করেছিলেন, তাদের মধ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া উগ্রবাদী ছিল। তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।”

“এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরকেই আমরা প্রকাশ্যে দেখেছি। কিন্তু অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয় আছে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন গা-ছাড়া বা ঢিলেমি ভাব আসে, তখনই তারা সংগঠিত হয় এবং পরিস্থিতি বুঝে, একটি সময়ের পর তারা তাদের শক্তির জানান দেয়,” বলেন তিনি।

ডয়চে ভেলে বাংলা