সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভিটামিন ডি আমাদের হাড় ও দাঁত শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—এটি আমরা সবাই জানি। তবে এটি শরীরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমেও সহায়ক, বিশেষ করে আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য।
গবেষণায় যা উঠে এসেছে
আমরা “MetA-Bone Trial” নামের এক গবেষণায় কাজ করতে গিয়ে ভিটামিন ডি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন তথ্য পাই। গবেষণায় লক্ষ্য ছিল, খাদ্যতন্তু সম্পূরক শিশু ও কিশোরদের হাড়ের গঠনে কীভাবে প্রভাব ফেলে।
আমরা দক্ষিণ ফ্লোরিডার ২১৩ জন শিশু ও কিশোরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করি, যাদের বেশিরভাগই হিস্পানিক এবং কিছু আফ্রিকান-আমেরিকান। তাদেরকে খাদ্যতন্তু সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার আগে আমরা ভিটামিন ডি’র মাত্রা পরিমাপ করি। বিস্ময়করভাবে দেখা যায়, ৬৮ শতাংশ শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি’র মাত্রা পর্যাপ্ত নয়।
ফ্লোরিডার মতো সারা বছর রোদে ভরা অঞ্চলে এই ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও ভিটামিন ডি কিছু খাবার থেকেও পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ মানুষ তা সূর্যালোকের মাধ্যমেই গ্রহণ করে। অথচ এই বয়সে, যখন দেহে বিশাল পরিবর্তন আসে ও হাড়ের বৃদ্ধি হয়, তখন ভিটামিন ডি’র ঘাটতি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ভিটামিন ডি শরীরে কীভাবে কাজ করে
ভিটামিন ডি শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কাজ করে, কারণ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে এর জন্য নির্দিষ্ট রিসেপ্টর থাকে—যেমন ত্বক, অন্ত্র, হাড়, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও অগ্ন্যাশয়।
এটি শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা কেবল হাড়ের গঠন নয়, স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্যও অপরিহার্য। এছাড়া, ভিটামিন ডি কোষের গঠন, ইনসুলিন নিঃসরণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পেশি মেরামত ও পুনর্গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।
অন্ত্রের দেয়াল সুরক্ষায় ভিটামিন ডি
অন্ত্রের দেয়াল আমাদের শরীরে পুষ্টি শোষণ করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশে বাধা দেয়। এই দেয়াল তৈরি হয় একাধিক কোষ ও তাদের সংযুক্তকারী প্রোটিন দিয়ে, যেগুলোকে বলা হয় “টাইড জাংশন”। ভিটামিন ডি রিসেপ্টর এই প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা অন্ত্রের দেয়ালকে মজবুত রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে এই রিসেপ্টর উৎপাদন কমে যায়, ফলে অন্ত্রের দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্ষতিকর পদার্থ রক্তে প্রবেশ করে ও শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতি থেকে নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে—যেমন লিভারের রোগ, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, সেলিয়াক ডিজিজ, অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ এবং কোলন ক্যান্সার।
MetA-Bone Trial-এ নতুন তথ্য
গবেষণায় আমরা ভিটামিন ডি’র মাত্রা ও অন্ত্রের দেয়ালের দৃঢ়তার সম্পর্ক পরীক্ষা করি। দেখা যায়, যেসব শিশুর ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত ছিল না, তাদের অন্ত্রের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ, স্বাস্থ্যবান শিশুদের ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি’র ঘাটতি ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ভিটামিন ডি কীভাবে গ্রহণ করবেন
বিশ্বজুড়েই ভিটামিন ডি’র ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে শিশু-কিশোরদের প্রায় ১৫.৪ শতাংশ ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছিল। যদিও সার্বিকভাবে এই হার কিছুটা কমেছে, তবে অল্পবয়সী কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এটি এখনো বেশি।
ভিটামিন ডি স্বাভাবিকভাবে কয়েকটি খাবারে পাওয়া যায়—যেমন ফ্যাটি মাছ (ট্রাউট, স্যামন, টুনা), ডিমের কুসুম ও মাশরুম। এছাড়া, অনেক ফোর্টিফাইড খাবারে এটি যোগ করা হয়—যেমন দুধ, পনির, উদ্ভিজ্জ দুধ, সিরিয়াল, কিছু ব্র্যান্ডের কমলার রস ও শিশুখাদ্য। এছাড়াও, ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট থেকেও ভিটামিন ডি নেওয়া যায়।
বেশিরভাগ আমেরিকান সূর্যরশ্মির মাধ্যমেই ভিটামিন ডি পান। তবে কার কতটুকু রোদ লাগবে, তা নির্ভর করে ত্বকে মেলানিনের পরিমাণের ওপর। গা dark় ত্বকে বেশি মেলানিন থাকে, যা সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন ডি উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে এদের বেশি সময় রোদে থাকতে হয়।
তবে অতিরিক্ত রোদে থাকার ফলে ত্বক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বলে Institute of Medicine খাদ্য থেকেই ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ দেয়। সাধারণত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৬০০ IU ভিটামিন ডি প্রয়োজন, আর সর্বোচ্চ সীমা ১,০০০ থেকে ৪,০০০ IU।
শিশুদের জন্য কেন জরুরি
গবেষকেরা এখনো ভিটামিন ডি’র নানা উপকারিতা আবিষ্কার করছেন। এটি যে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের জন্য ভিটামিন ডি সুস্থ বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
লেখক পরিচিতি:
জ্যাকলিন হার্নান্দেজ ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডায়েটেটিকস ও নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ক্রিস্টিনা প্যালাসিয়োস একই বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন।