০২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
‘স্টিলার অ্যান্ড মিরা: নাথিং ইজ লস্ট’— পিতামাতার জীবন ও নিজের বাস্তবতার মুখোমুখি বেন স্টিলার তাইওয়ানের প্রকৃতি, রোমাঞ্চ আর নীরব সৌন্দর্যের মিলনস্থল , তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য আবিষ্কারে পর্যটকদের আগ্রহ জাপানে নতুন সরকারের ব্যয়নীতি নিয়ে সংশয় জাপানে পুনর্ব্যবহারের জোয়ার— বর্জ্য নয়, সম্পদ হিসেবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ জঙ্গলের নিঃশব্দ আতঙ্ক—বোয়া কনস্ট্রিক্টরের জীববৈচিত্র্য, জীবনচক্র ও রহস্যময় শিকারি পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১১৫) এ বছরের অর্থনীতির নোবেল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক সতর্কবার্তা তরুণদের ভিড়ে নিউইয়র্কের আপার ইস্ট সাইডে নতুন প্রাণ তরুণ কর্মজীবীর আর্থিক পরিকল্পনা

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 43

প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ তা সত্ত্বেও এখানকার অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে যান৷ তবে বনের সহায়তায় তাদের কর্মসংস্থানের একটি নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷

ভারতের ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হিমালয়ের চেয়েও পুরনো৷ উত্তরে গুজরাট থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কেরালায় শেষ হয়েছে এই পর্বতমালা৷ এক লাখ চল্লিশ হাজার কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত পশ্চিমঘাট ভারতের ৩০ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আবাসস্থল৷

আম, কাঠাল, জামসহ অসংখ্য ফলজ গাছ রয়েছে এখানে৷ এসব গাছে অনেক ফল হয়৷ কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে সেগুলো নষ্ট হয়৷

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘কালো কিশমিশ, কাঠাল, বুনো জাম এবং বুনো আম এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলে৷ বন্যপ্রাণী ও পাখিরা খাদ্যের জন্য এসবের উপর নির্ভরশীল৷ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার একটি ছোট্ট অংশের উৎসও এটি৷ তবে বনে ফলা ৯০ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়৷”

ফোন্ডে ভারতের এই পশ্চিমাঞ্চলে বন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ এই প্রকল্প স্থানীয়, বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে৷ এখানকার ফল প্রক্রিয়াজাত করেন তারা৷ বনের পাশের গ্রামগুলোতে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ বনের বেড়ে ওঠা ফল সংগ্রহ করে এসব কেন্দ্রে চল্লিশ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়৷ এসবের মধ্যে রয়েছে জুস, পাল্পস সিরাপ, বিস্কুট এবং দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় রাইস কেক ইডলিস৷

স্থানীয় নারীদের এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে প্যাকেজিং অবধি সবকিছুই সামলান৷

বর্তমানে এই প্রকল্প মহারাষ্ট্রের পাঁচ জেলার ২৮টি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে৷ এতে সাত হাজার নারী কাজ করছেন৷

স্থানীয় বাসিন্দা রাজশ্রী নন্দকুমার বাগম বলেন, ‘‘এটা চমৎকার অনুভূতি৷ আমরা নারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমরাও কিছু একটা অর্জন করতে পারি৷ আমার এলাকার নারীরা উন্নতি করছে৷ এই কাজ আমাদের সুখের সন্ধান দিয়েছে৷ আগে আমরা অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে থাকতাম৷ এখন আমরা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারছি৷”

স্থানীয় বন বিভাগ এধরনের প্রকল্পে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে৷ বন কর্মকর্তা জি. গুরুপ্রসাদ মনে করেন টেকসহ জীবিকা প্রকল্প বন সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ তার বিশ্বাস, স্থানীয়রা বন থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলে সেটি সংরক্ষণেও মনোযোগী হবেন৷ একারণে তিনি এসব প্রকল্পের আরো বিস্তৃতি চান৷

কোলহাপুরের উপ বন সংরক্ষক জি. গুরুপ্রসাদ বলেন, ‘‘যেহেতু অধিকাংশ পণ্যের উৎস জঙ্গল, তাই বন বিভাগ এতে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটিকে এক মিশন হিসেবে নিয়েছে৷ এটা বনের ক্ষতি না করে সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনে স্থানীয়দেরকে সহায়তা করবে৷ এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য এটাই৷ এবং আমরা ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি৷”

পুরো পশ্চিমঘাট অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ৷ তাসত্ত্বেও স্থানীয় সম্প্রদায়কে কাজের খোঁজে শহরে যেতে হয়৷

তবে এই মানুষরা মনে করেন শহরের জীবনেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুরাও বোদকে বলেন, ‘‘আপনি শহরে গেলে সাধারণত দশ থেকে বারো হাজার রুপি বেতনের চাকুরি পাবেন৷ একটি ঘর ভাড়া নিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রুপি দরকার হয়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচাও আছে৷ ফলে আপনার সব আয়ই ব্যয় হয়ে যায়৷ জমানোর মতো কিছু থাকে না৷ এখানে আপনি দশ হাজার আয় করে দুই বা তিন হাজার খরচের পরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জমাতে পারবেন৷”

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা বিভিন্ন শহরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আমরা যদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানান্তরের চক্র ভেঙে দিতে পারি তাহলে যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিলেন তারাও ফিরে আসবেন৷”

স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে শুধু সম্পদের আরো ভালো ব্যবহারই নিশ্চিত হয় না, শহরের উপর থেকে চাপও কমে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম

জনপ্রিয় সংবাদ

‘স্টিলার অ্যান্ড মিরা: নাথিং ইজ লস্ট’— পিতামাতার জীবন ও নিজের বাস্তবতার মুখোমুখি বেন স্টিলার

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

০৩:৪৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ তা সত্ত্বেও এখানকার অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে যান৷ তবে বনের সহায়তায় তাদের কর্মসংস্থানের একটি নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷

ভারতের ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হিমালয়ের চেয়েও পুরনো৷ উত্তরে গুজরাট থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কেরালায় শেষ হয়েছে এই পর্বতমালা৷ এক লাখ চল্লিশ হাজার কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত পশ্চিমঘাট ভারতের ৩০ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আবাসস্থল৷

আম, কাঠাল, জামসহ অসংখ্য ফলজ গাছ রয়েছে এখানে৷ এসব গাছে অনেক ফল হয়৷ কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে সেগুলো নষ্ট হয়৷

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘কালো কিশমিশ, কাঠাল, বুনো জাম এবং বুনো আম এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলে৷ বন্যপ্রাণী ও পাখিরা খাদ্যের জন্য এসবের উপর নির্ভরশীল৷ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার একটি ছোট্ট অংশের উৎসও এটি৷ তবে বনে ফলা ৯০ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়৷”

ফোন্ডে ভারতের এই পশ্চিমাঞ্চলে বন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ এই প্রকল্প স্থানীয়, বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে৷ এখানকার ফল প্রক্রিয়াজাত করেন তারা৷ বনের পাশের গ্রামগুলোতে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ বনের বেড়ে ওঠা ফল সংগ্রহ করে এসব কেন্দ্রে চল্লিশ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়৷ এসবের মধ্যে রয়েছে জুস, পাল্পস সিরাপ, বিস্কুট এবং দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় রাইস কেক ইডলিস৷

স্থানীয় নারীদের এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে প্যাকেজিং অবধি সবকিছুই সামলান৷

বর্তমানে এই প্রকল্প মহারাষ্ট্রের পাঁচ জেলার ২৮টি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে৷ এতে সাত হাজার নারী কাজ করছেন৷

স্থানীয় বাসিন্দা রাজশ্রী নন্দকুমার বাগম বলেন, ‘‘এটা চমৎকার অনুভূতি৷ আমরা নারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমরাও কিছু একটা অর্জন করতে পারি৷ আমার এলাকার নারীরা উন্নতি করছে৷ এই কাজ আমাদের সুখের সন্ধান দিয়েছে৷ আগে আমরা অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে থাকতাম৷ এখন আমরা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারছি৷”

স্থানীয় বন বিভাগ এধরনের প্রকল্পে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে৷ বন কর্মকর্তা জি. গুরুপ্রসাদ মনে করেন টেকসহ জীবিকা প্রকল্প বন সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ তার বিশ্বাস, স্থানীয়রা বন থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলে সেটি সংরক্ষণেও মনোযোগী হবেন৷ একারণে তিনি এসব প্রকল্পের আরো বিস্তৃতি চান৷

কোলহাপুরের উপ বন সংরক্ষক জি. গুরুপ্রসাদ বলেন, ‘‘যেহেতু অধিকাংশ পণ্যের উৎস জঙ্গল, তাই বন বিভাগ এতে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটিকে এক মিশন হিসেবে নিয়েছে৷ এটা বনের ক্ষতি না করে সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনে স্থানীয়দেরকে সহায়তা করবে৷ এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য এটাই৷ এবং আমরা ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি৷”

পুরো পশ্চিমঘাট অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ৷ তাসত্ত্বেও স্থানীয় সম্প্রদায়কে কাজের খোঁজে শহরে যেতে হয়৷

তবে এই মানুষরা মনে করেন শহরের জীবনেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুরাও বোদকে বলেন, ‘‘আপনি শহরে গেলে সাধারণত দশ থেকে বারো হাজার রুপি বেতনের চাকুরি পাবেন৷ একটি ঘর ভাড়া নিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রুপি দরকার হয়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচাও আছে৷ ফলে আপনার সব আয়ই ব্যয় হয়ে যায়৷ জমানোর মতো কিছু থাকে না৷ এখানে আপনি দশ হাজার আয় করে দুই বা তিন হাজার খরচের পরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জমাতে পারবেন৷”

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা বিভিন্ন শহরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আমরা যদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানান্তরের চক্র ভেঙে দিতে পারি তাহলে যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিলেন তারাও ফিরে আসবেন৷”

স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে শুধু সম্পদের আরো ভালো ব্যবহারই নিশ্চিত হয় না, শহরের উপর থেকে চাপও কমে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম