০৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 19

প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ তা সত্ত্বেও এখানকার অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে যান৷ তবে বনের সহায়তায় তাদের কর্মসংস্থানের একটি নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷

ভারতের ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হিমালয়ের চেয়েও পুরনো৷ উত্তরে গুজরাট থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কেরালায় শেষ হয়েছে এই পর্বতমালা৷ এক লাখ চল্লিশ হাজার কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত পশ্চিমঘাট ভারতের ৩০ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আবাসস্থল৷

আম, কাঠাল, জামসহ অসংখ্য ফলজ গাছ রয়েছে এখানে৷ এসব গাছে অনেক ফল হয়৷ কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে সেগুলো নষ্ট হয়৷

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘কালো কিশমিশ, কাঠাল, বুনো জাম এবং বুনো আম এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলে৷ বন্যপ্রাণী ও পাখিরা খাদ্যের জন্য এসবের উপর নির্ভরশীল৷ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার একটি ছোট্ট অংশের উৎসও এটি৷ তবে বনে ফলা ৯০ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়৷”

ফোন্ডে ভারতের এই পশ্চিমাঞ্চলে বন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ এই প্রকল্প স্থানীয়, বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে৷ এখানকার ফল প্রক্রিয়াজাত করেন তারা৷ বনের পাশের গ্রামগুলোতে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ বনের বেড়ে ওঠা ফল সংগ্রহ করে এসব কেন্দ্রে চল্লিশ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়৷ এসবের মধ্যে রয়েছে জুস, পাল্পস সিরাপ, বিস্কুট এবং দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় রাইস কেক ইডলিস৷

স্থানীয় নারীদের এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে প্যাকেজিং অবধি সবকিছুই সামলান৷

বর্তমানে এই প্রকল্প মহারাষ্ট্রের পাঁচ জেলার ২৮টি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে৷ এতে সাত হাজার নারী কাজ করছেন৷

স্থানীয় বাসিন্দা রাজশ্রী নন্দকুমার বাগম বলেন, ‘‘এটা চমৎকার অনুভূতি৷ আমরা নারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমরাও কিছু একটা অর্জন করতে পারি৷ আমার এলাকার নারীরা উন্নতি করছে৷ এই কাজ আমাদের সুখের সন্ধান দিয়েছে৷ আগে আমরা অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে থাকতাম৷ এখন আমরা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারছি৷”

স্থানীয় বন বিভাগ এধরনের প্রকল্পে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে৷ বন কর্মকর্তা জি. গুরুপ্রসাদ মনে করেন টেকসহ জীবিকা প্রকল্প বন সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ তার বিশ্বাস, স্থানীয়রা বন থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলে সেটি সংরক্ষণেও মনোযোগী হবেন৷ একারণে তিনি এসব প্রকল্পের আরো বিস্তৃতি চান৷

কোলহাপুরের উপ বন সংরক্ষক জি. গুরুপ্রসাদ বলেন, ‘‘যেহেতু অধিকাংশ পণ্যের উৎস জঙ্গল, তাই বন বিভাগ এতে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটিকে এক মিশন হিসেবে নিয়েছে৷ এটা বনের ক্ষতি না করে সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনে স্থানীয়দেরকে সহায়তা করবে৷ এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য এটাই৷ এবং আমরা ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি৷”

পুরো পশ্চিমঘাট অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ৷ তাসত্ত্বেও স্থানীয় সম্প্রদায়কে কাজের খোঁজে শহরে যেতে হয়৷

তবে এই মানুষরা মনে করেন শহরের জীবনেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুরাও বোদকে বলেন, ‘‘আপনি শহরে গেলে সাধারণত দশ থেকে বারো হাজার রুপি বেতনের চাকুরি পাবেন৷ একটি ঘর ভাড়া নিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রুপি দরকার হয়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচাও আছে৷ ফলে আপনার সব আয়ই ব্যয় হয়ে যায়৷ জমানোর মতো কিছু থাকে না৷ এখানে আপনি দশ হাজার আয় করে দুই বা তিন হাজার খরচের পরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জমাতে পারবেন৷”

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা বিভিন্ন শহরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আমরা যদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানান্তরের চক্র ভেঙে দিতে পারি তাহলে যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিলেন তারাও ফিরে আসবেন৷”

স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে শুধু সম্পদের আরো ভালো ব্যবহারই নিশ্চিত হয় না, শহরের উপর থেকে চাপও কমে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম

১৪ জুলাই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

০৩:৪৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ তা সত্ত্বেও এখানকার অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে যান৷ তবে বনের সহায়তায় তাদের কর্মসংস্থানের একটি নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷

ভারতের ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হিমালয়ের চেয়েও পুরনো৷ উত্তরে গুজরাট থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কেরালায় শেষ হয়েছে এই পর্বতমালা৷ এক লাখ চল্লিশ হাজার কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত পশ্চিমঘাট ভারতের ৩০ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির আবাসস্থল৷

আম, কাঠাল, জামসহ অসংখ্য ফলজ গাছ রয়েছে এখানে৷ এসব গাছে অনেক ফল হয়৷ কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে সেগুলো নষ্ট হয়৷

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘কালো কিশমিশ, কাঠাল, বুনো জাম এবং বুনো আম এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলে৷ বন্যপ্রাণী ও পাখিরা খাদ্যের জন্য এসবের উপর নির্ভরশীল৷ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার একটি ছোট্ট অংশের উৎসও এটি৷ তবে বনে ফলা ৯০ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়৷”

ফোন্ডে ভারতের এই পশ্চিমাঞ্চলে বন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ এই প্রকল্প স্থানীয়, বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে৷ এখানকার ফল প্রক্রিয়াজাত করেন তারা৷ বনের পাশের গ্রামগুলোতে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে৷ বনের বেড়ে ওঠা ফল সংগ্রহ করে এসব কেন্দ্রে চল্লিশ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়৷ এসবের মধ্যে রয়েছে জুস, পাল্পস সিরাপ, বিস্কুট এবং দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় রাইস কেক ইডলিস৷

স্থানীয় নারীদের এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে প্যাকেজিং অবধি সবকিছুই সামলান৷

বর্তমানে এই প্রকল্প মহারাষ্ট্রের পাঁচ জেলার ২৮টি গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে৷ এতে সাত হাজার নারী কাজ করছেন৷

স্থানীয় বাসিন্দা রাজশ্রী নন্দকুমার বাগম বলেন, ‘‘এটা চমৎকার অনুভূতি৷ আমরা নারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমরাও কিছু একটা অর্জন করতে পারি৷ আমার এলাকার নারীরা উন্নতি করছে৷ এই কাজ আমাদের সুখের সন্ধান দিয়েছে৷ আগে আমরা অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে থাকতাম৷ এখন আমরা নিজেরাই কিছু একটা করতে পারছি৷”

স্থানীয় বন বিভাগ এধরনের প্রকল্পে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে৷ বন কর্মকর্তা জি. গুরুপ্রসাদ মনে করেন টেকসহ জীবিকা প্রকল্প বন সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ তার বিশ্বাস, স্থানীয়রা বন থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলে সেটি সংরক্ষণেও মনোযোগী হবেন৷ একারণে তিনি এসব প্রকল্পের আরো বিস্তৃতি চান৷

কোলহাপুরের উপ বন সংরক্ষক জি. গুরুপ্রসাদ বলেন, ‘‘যেহেতু অধিকাংশ পণ্যের উৎস জঙ্গল, তাই বন বিভাগ এতে সম্পৃক্ত হতে চেয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটিকে এক মিশন হিসেবে নিয়েছে৷ এটা বনের ক্ষতি না করে সংরক্ষণের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনে স্থানীয়দেরকে সহায়তা করবে৷ এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য এটাই৷ এবং আমরা ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি৷”

পুরো পশ্চিমঘাট অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ৷ তাসত্ত্বেও স্থানীয় সম্প্রদায়কে কাজের খোঁজে শহরে যেতে হয়৷

তবে এই মানুষরা মনে করেন শহরের জীবনেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুরাও বোদকে বলেন, ‘‘আপনি শহরে গেলে সাধারণত দশ থেকে বারো হাজার রুপি বেতনের চাকুরি পাবেন৷ একটি ঘর ভাড়া নিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রুপি দরকার হয়৷ পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচাও আছে৷ ফলে আপনার সব আয়ই ব্যয় হয়ে যায়৷ জমানোর মতো কিছু থাকে না৷ এখানে আপনি দশ হাজার আয় করে দুই বা তিন হাজার খরচের পরও অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জমাতে পারবেন৷”

জীবিকা বিশেষজ্ঞ ড. ইওগেশ ফোন্ডে বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা বিভিন্ন শহরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আমরা যদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানান্তরের চক্র ভেঙে দিতে পারি তাহলে যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিলেন তারাও ফিরে আসবেন৷”

স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে শুধু সম্পদের আরো ভালো ব্যবহারই নিশ্চিত হয় না, শহরের উপর থেকে চাপও কমে৷

ডিডাব্লিউ ডটকম