বড়ু
“ঘরে ত আছে লো, ও বউ লো কৌটা ভরা সিন্দুর লো, তুমি উহাই দেইখা পাশইরো রামসাধুরে।” “ও কৌটার সিন্দুর লো, শাউড়ি আমি বাতাসে উড়াব লো, আমি তবু যাব রামসাধুর তালাশেরে।”
এই রামসাধু কে জানি না। সে হয়তো অধিকাংশ পুরুষজাতিরই প্রতীক। পঞ্চফুলের ভোমর হইয়া সে এক ফুলে মন মজিয়া আছে। শাশুড়ির উপদেশমতো পেটরা গহন আর কৌটা ভরা সিন্দুক দেখিয়া কি বালিকা বধু তার মনের দুঃখ পাশরিয়া থাকিতে পারে? পেটরার অষ্ট অলঙ্কার সব লুটেরে বিলাইয়া দিবে। কৌটার সিন্দুর সে বাতাসে উড়াইয়া দিবে। তবু সে রামসাধুর তালাশে বাহির হইয়া যাইবে।
সেদিন আরও দুই-তিনটি গান হইল। একটি গানের প্রথম পদটি মনে আছে:
“আরে শ্যাম, গাঙে আইলরে নতুন পানি।”
এরপর প্রায়ই আমি বড়ুদের বাড়ি যাইতাম। মনে মনে কত কথা তাহাকে বলিব বলিয়া কল্পনা করিয়া যাইতাম। কিন্তু ছোট তাহাদের বাড়ি। ও-ঘরে চাচি, ওখানে দাদি। আজেবাজে গল্প করিয়া চলিয়া আসিতাম। মনের কথা মনেই থাকিত। বাড়ি আসিয়া ভাবিতাম, কি
কথাই-বা তাহাকে বলিতে পারিতাম। সে অপরের স্ত্রী। তাকে একান্তে বলিবার মতো কোনো কথাই তো আমার ছিল না।
আমি তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ি। ছুটি ফুরাইয়া গেলে কলিকাতা চলিয়া যাইতাম। পূজার ছুটিতে আবার দেশে আসিয়া বড়ুদের বাড়ি আসিতাম। এবার বস্তুর চেহারাটি আরও সুন্দর হইয়াছে। কত দেশে সুন্দর কন্যার কাহিনী খুঁজিয়া বেড়াই। আমার দেশে আমারই গাঁয় এমন সুন্দর কন্যা। এই চাঁদ আমারই আঙিনায় আসিয়া খেলা করিয়াছিল। তখন হাত বাড়াইলেই ধরিতে পারিতাম। আজকের চাঁদ যে কত দূরের আকাশে। কোনোরকমেই তাকে হাতে নাগাল পাইতে পারি না। একদিন বস্তুকে একান্তে পাইয়া বলিলাম, “বস্তু, আগে যদি জানিতাম তোকে আমার এত ভালো লাগিবে, তবে কি তোরে অপরের ঘরনী হইতে দিতাম।” বজ্র ম্লান হাসিয়া বলিল, “ভাই। ওকথা বলিবেন না। উহাতে গুনা হয়।”
বড়ুর বর আব্বাস কুড়ের হদ্দ। একদিন যদি কাপড় বুনায় তো তিনদিন ঘুরিয়া বেড়ায়। অথবা ঘরের মেঝেয় পড়িয়া ঘুমায়। বড়ু তেনা কাড়াইয়া বসিয়া থাকে। গামলাতে তার সদ্যভরা নলিগুলির সুতা শুকাইয়া যায়। তবু সে কাপড় বুনাইতে বসে না, এমন সুন্দরী বউ-এর জন্য স্বামীর যে তপস্যা করার প্রয়োজন সে তাহা মনেও আনে না। কোনোদিন তাহারা খায়-কোনোদিন খায় না। এজন্য স্বামীর প্রতি বস্তুর কোনোই অভিযোগ নাই।
চলবে…..
Sarakhon Report 



















