০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
জাপানে ভালুকের হামলা থামছে না, নীতিতে ‘নিরাপত্তা–সংরক্ষণ’ সমন্বয়ের ভাবনা” নোরা ফাতেহি তার নতুন গান শেয়ার করলেন, শুরু হলো তার পপ গার্ল যুগ ব্ল্যাক ফ্রাইডের আগেই এম৪ ম্যাকবুক এয়ারে রেকর্ড ছাড় বিশ্বের সেরা ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার স্বীকৃতি পেল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাকিহ হাসপাতাল সংখ্যালঘু কলেজছাত্রী শমরিয়া রানী নিখোঁজের ১৫ দিন: পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীদের রহস্যজনক আচরণের অভিযোগ তারকাখচিত রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম ২০২৫, একযোগে ডিসনি প্লাসে সম্প্রচার  গুগল প্লে ও ইউটিউবের নতুন কেনা সিনেমা আর পড়বে না মুভিজ অ্যানিওয়্যারে সাহিত্য প্রচারে শারজাহের ভূমিকা: সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সেতুবন্ধন ‘আমাদের কণ্ঠ কেউ বন্ধ করতে পারবে না’—মিস ইউনিভার্স মেক্সিকোর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ উত্তর জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা ও রেল চলাচলে বিঘ্ন”

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৭৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • 163

বড়ু

“ঘরে ত আছে লো, ও বউ লো কৌটা ভরা সিন্দুর লো, তুমি উহাই দেইখা পাশইরো রামসাধুরে।” “ও কৌটার সিন্দুর লো, শাউড়ি আমি বাতাসে উড়াব লো, আমি তবু যাব রামসাধুর তালাশেরে।”

এই রামসাধু কে জানি না। সে হয়তো অধিকাংশ পুরুষজাতিরই প্রতীক। পঞ্চফুলের ভোমর হইয়া সে এক ফুলে মন মজিয়া আছে। শাশুড়ির উপদেশমতো পেটরা গহন আর কৌটা ভরা সিন্দুক দেখিয়া কি বালিকা বধু তার মনের দুঃখ পাশরিয়া থাকিতে পারে? পেটরার অষ্ট অলঙ্কার সব লুটেরে বিলাইয়া দিবে। কৌটার সিন্দুর সে বাতাসে উড়াইয়া দিবে। তবু সে রামসাধুর তালাশে বাহির হইয়া যাইবে।

সেদিন আরও দুই-তিনটি গান হইল। একটি গানের প্রথম পদটি মনে আছে:

“আরে শ্যাম, গাঙে আইলরে নতুন পানি।”

এরপর প্রায়ই আমি বড়ুদের বাড়ি যাইতাম। মনে মনে কত কথা তাহাকে বলিব বলিয়া কল্পনা করিয়া যাইতাম। কিন্তু ছোট তাহাদের বাড়ি। ও-ঘরে চাচি, ওখানে দাদি। আজেবাজে গল্প করিয়া চলিয়া আসিতাম। মনের কথা মনেই থাকিত। বাড়ি আসিয়া ভাবিতাম, কি

কথাই-বা তাহাকে বলিতে পারিতাম। সে অপরের স্ত্রী। তাকে একান্তে বলিবার মতো কোনো কথাই তো আমার ছিল না।

আমি তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ি। ছুটি ফুরাইয়া গেলে কলিকাতা চলিয়া যাইতাম। পূজার ছুটিতে আবার দেশে আসিয়া বড়ুদের বাড়ি আসিতাম। এবার বস্তুর চেহারাটি আরও সুন্দর হইয়াছে। কত দেশে সুন্দর কন্যার কাহিনী খুঁজিয়া বেড়াই। আমার দেশে আমারই গাঁয় এমন সুন্দর কন্যা। এই চাঁদ আমারই আঙিনায় আসিয়া খেলা করিয়াছিল। তখন হাত বাড়াইলেই ধরিতে পারিতাম। আজকের চাঁদ যে কত দূরের আকাশে। কোনোরকমেই তাকে হাতে নাগাল পাইতে পারি না। একদিন বস্তুকে একান্তে পাইয়া বলিলাম, “বস্তু, আগে যদি জানিতাম তোকে আমার এত ভালো লাগিবে, তবে কি তোরে অপরের ঘরনী হইতে দিতাম।” বজ্র ম্লান হাসিয়া বলিল, “ভাই। ওকথা বলিবেন না। উহাতে গুনা হয়।”

বড়ুর বর আব্বাস কুড়ের হদ্দ। একদিন যদি কাপড় বুনায় তো তিনদিন ঘুরিয়া বেড়ায়। অথবা ঘরের মেঝেয় পড়িয়া ঘুমায়। বড়ু তেনা কাড়াইয়া বসিয়া থাকে। গামলাতে তার সদ্যভরা নলিগুলির সুতা শুকাইয়া যায়। তবু সে কাপড় বুনাইতে বসে না, এমন সুন্দরী বউ-এর জন্য স্বামীর যে তপস্যা করার প্রয়োজন সে তাহা মনেও আনে না। কোনোদিন তাহারা খায়-কোনোদিন খায় না। এজন্য স্বামীর প্রতি বস্তুর কোনোই অভিযোগ নাই।

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

জাপানে ভালুকের হামলা থামছে না, নীতিতে ‘নিরাপত্তা–সংরক্ষণ’ সমন্বয়ের ভাবনা”

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১৭৪)

১১:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

বড়ু

“ঘরে ত আছে লো, ও বউ লো কৌটা ভরা সিন্দুর লো, তুমি উহাই দেইখা পাশইরো রামসাধুরে।” “ও কৌটার সিন্দুর লো, শাউড়ি আমি বাতাসে উড়াব লো, আমি তবু যাব রামসাধুর তালাশেরে।”

এই রামসাধু কে জানি না। সে হয়তো অধিকাংশ পুরুষজাতিরই প্রতীক। পঞ্চফুলের ভোমর হইয়া সে এক ফুলে মন মজিয়া আছে। শাশুড়ির উপদেশমতো পেটরা গহন আর কৌটা ভরা সিন্দুক দেখিয়া কি বালিকা বধু তার মনের দুঃখ পাশরিয়া থাকিতে পারে? পেটরার অষ্ট অলঙ্কার সব লুটেরে বিলাইয়া দিবে। কৌটার সিন্দুর সে বাতাসে উড়াইয়া দিবে। তবু সে রামসাধুর তালাশে বাহির হইয়া যাইবে।

সেদিন আরও দুই-তিনটি গান হইল। একটি গানের প্রথম পদটি মনে আছে:

“আরে শ্যাম, গাঙে আইলরে নতুন পানি।”

এরপর প্রায়ই আমি বড়ুদের বাড়ি যাইতাম। মনে মনে কত কথা তাহাকে বলিব বলিয়া কল্পনা করিয়া যাইতাম। কিন্তু ছোট তাহাদের বাড়ি। ও-ঘরে চাচি, ওখানে দাদি। আজেবাজে গল্প করিয়া চলিয়া আসিতাম। মনের কথা মনেই থাকিত। বাড়ি আসিয়া ভাবিতাম, কি

কথাই-বা তাহাকে বলিতে পারিতাম। সে অপরের স্ত্রী। তাকে একান্তে বলিবার মতো কোনো কথাই তো আমার ছিল না।

আমি তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ি। ছুটি ফুরাইয়া গেলে কলিকাতা চলিয়া যাইতাম। পূজার ছুটিতে আবার দেশে আসিয়া বড়ুদের বাড়ি আসিতাম। এবার বস্তুর চেহারাটি আরও সুন্দর হইয়াছে। কত দেশে সুন্দর কন্যার কাহিনী খুঁজিয়া বেড়াই। আমার দেশে আমারই গাঁয় এমন সুন্দর কন্যা। এই চাঁদ আমারই আঙিনায় আসিয়া খেলা করিয়াছিল। তখন হাত বাড়াইলেই ধরিতে পারিতাম। আজকের চাঁদ যে কত দূরের আকাশে। কোনোরকমেই তাকে হাতে নাগাল পাইতে পারি না। একদিন বস্তুকে একান্তে পাইয়া বলিলাম, “বস্তু, আগে যদি জানিতাম তোকে আমার এত ভালো লাগিবে, তবে কি তোরে অপরের ঘরনী হইতে দিতাম।” বজ্র ম্লান হাসিয়া বলিল, “ভাই। ওকথা বলিবেন না। উহাতে গুনা হয়।”

বড়ুর বর আব্বাস কুড়ের হদ্দ। একদিন যদি কাপড় বুনায় তো তিনদিন ঘুরিয়া বেড়ায়। অথবা ঘরের মেঝেয় পড়িয়া ঘুমায়। বড়ু তেনা কাড়াইয়া বসিয়া থাকে। গামলাতে তার সদ্যভরা নলিগুলির সুতা শুকাইয়া যায়। তবু সে কাপড় বুনাইতে বসে না, এমন সুন্দরী বউ-এর জন্য স্বামীর যে তপস্যা করার প্রয়োজন সে তাহা মনেও আনে না। কোনোদিন তাহারা খায়-কোনোদিন খায় না। এজন্য স্বামীর প্রতি বস্তুর কোনোই অভিযোগ নাই।

চলবে…..