সারাক্ষণ রিপোর্ট
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে অবস্থিত আড়িয়ল বিল একসময় ঢাকার কৃষিপণ্য ও দেশি মাছের বড় উৎস ছিল। কিন্তু গত এক দশকে নানা সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বিলটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে। এর ফলে বিলের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারের পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুরু
বিলের পরিবেশ রক্ষায় সরকার একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছে একটি সমন্বিত সমীক্ষা, যা ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই সমীক্ষা পরিচালনা করছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)।
সমীক্ষার মূল লক্ষ্য ও কাজ
সমীক্ষায় মোট আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে:
১. আড়িয়ল বিলের সীমানা চিহ্নিত করা
২. সরকারি খাসজমির তালিকা তৈরি
৩. ইকোট্যুরিজমের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত ও উন্নয়ন
৪. বাস্তুতন্ত্রে ক্ষতি না করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা
৫. দূষণপ্রবণ এলাকা শনাক্ত
৬. সম্পদের ম্যাপ তৈরি
৭. বর্ষার পানির গুণমান পরীক্ষা
৮. দূষণের উৎস নির্ধারণ
প্রথমে এই প্রকল্পের বাজেট ছিল ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা পরে বাড়িয়ে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।
সমীক্ষায় বাস্তব চিত্র: পানিপ্রবাহে বাধা
সমীক্ষা অনুযায়ী, আড়িয়ল বিলে পানি প্রবাহের উৎসগুলো নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারি রাস্তা, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্ক ও আবাসন প্রকল্পের কারণে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
আইডব্লিউএম-এর নির্বাহী পরিচালক এসএম মাহবুবুর রহমান জানান, “বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। দূষণের উৎস চিহ্নিত করে অপসারণের সুপারিশ থাকবে।”
বিলের চারপাশে গড়ে উঠছে অবকাঠামো
বিলের কিছু অংশ এখনও চাষাবাদে ব্যবহৃত হলেও সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে:
- আবাসন প্রকল্প
- বিপণিবিতান
- রিসোর্ট
- জ্বালানি পাম্প
- বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পার্কের আশেপাশে নতুন শিল্প কারখানা
বিমানবন্দর প্রকল্প ও আন্দোলনের ইতিহাস
২০০৯ সালে সরকার আড়িয়ল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু পরিবেশবাদী ও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে সরকার প্রকল্পটি বাতিল করে।
উপসংহার
আড়িয়ল বিল রক্ষা শুধু পরিবেশগত দায়িত্ব নয়, বরং ঢাকার খাদ্য নিরাপত্তা ও স্থানীয় মানুষদের জীবিকার প্রশ্ন। সময় এসেছে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী জলাভূমিকে রক্ষা করার।