১০:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

হোন্ডার উৎপাদন কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা

  • Sarakhon Report
  • ০৫:২২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • 22

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়াতে চায় হোন্ডা

জাপানের অটোমোবাইল নির্মাতা হোন্ডা মোটর যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গাড়ি উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এ সিদ্ধান্ত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সব ধরনের আমদানিকৃত গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার প্রেক্ষিতে। হোন্ডা চায়, ভবিষ্যতে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিক্রির ৯০ শতাংশই স্থানীয় উৎপাদন থেকে পূরণ করতে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ও USMCA চুক্তির প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (USMCA) অনুযায়ী, নির্দিষ্ট উৎপাদন শর্ত পূরণ করলে তিন দেশের মধ্যে শুল্ক ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে। হোন্ডাসহ অন্যান্য জাপানি কোম্পানি এই সুযোগে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানি করত। কিন্তু নতুন শুল্ক নীতির আওতায় এসব চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যও পড়ছে, যদিও কিছু ছাড় পাওয়া সম্ভব। ফলে হোন্ডার ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে এবং কোম্পানিটি তাদের সমগ্র উত্তর আমেরিকার উৎপাদন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে যাচ্ছে।

বর্তমান উৎপাদন পরিস্থিতি ও রদবদলের লক্ষ্য

বর্তমানে হোন্ডা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার গাড়ি বিক্রি করে, যার মধ্যে ১০ লাখই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত। বাকি প্রায় ৫ লাখ গাড়ি আমদানি করা হয়—এর মধ্যে ৩ লাখই আসে কানাডা থেকে। হোন্ডা এখন এই আমদানির পরিমাণ কমিয়ে CR-V SUV এবং Civic sedan মডেলের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রেই স্থানান্তর করতে চায়। এর মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদনের হার ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

কীভাবে বাড়বে উৎপাদন

হোন্ডা তাদের বিদ্যমান যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় উৎপাদন শিফট বাড়ানো, কর্মী নিয়োগ এবং সপ্তাহান্তে উৎপাদন চালু করার কথা ভাবছে। এছাড়া মেক্সিকোতে তৈরি ছোট SUV HR-V মডেলের উৎপাদনও যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে। যেহেতু এই মডেলটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয় না, এজন্য নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে।

এই পুরো পরিবর্তন ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এতে যন্ত্রাংশ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনতে হবে, ফলে এতে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর।

শুল্কজনিত খরচ ও কানাডার প্রতিক্রিয়া

হোন্ডা হিসাব করেছে, নতুন শুল্কের ফলে তাদের বার্ষিক খরচ প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন ডলার বাড়বে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি, তবে শুল্ক এড়াতে এটি হোন্ডার জন্য বেশি লাভজনক হতে পারে।

এদিকে কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত গাড়ির উপর। তাই হোন্ডা এখন কানাডায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি রপ্তানি কমিয়ে, সেখানেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিকেই ঝুঁকছে।

অন্য কোম্পানিগুলোর উদ্যোগ

শুধু হোন্ডা নয়, একই পরিস্থিতিতে অন্যান্য কোম্পানিও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। নিশান তাদের জাপানের ফুকুওকা প্রিফেকচারে Rogue SUV মডেলের উৎপাদন কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে চাইছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্ডাই মোটর গ্রুপও বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর মাধ্যমে তারা গাড়ি উৎপাদন ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ লাখে উন্নীত করবে এবং স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি ইস্পাত কারখানাও চালু করবে।

হোন্ডার উৎপাদন কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা

০৫:২২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়াতে চায় হোন্ডা

জাপানের অটোমোবাইল নির্মাতা হোন্ডা মোটর যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গাড়ি উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এ সিদ্ধান্ত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সব ধরনের আমদানিকৃত গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার প্রেক্ষিতে। হোন্ডা চায়, ভবিষ্যতে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিক্রির ৯০ শতাংশই স্থানীয় উৎপাদন থেকে পূরণ করতে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ও USMCA চুক্তির প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (USMCA) অনুযায়ী, নির্দিষ্ট উৎপাদন শর্ত পূরণ করলে তিন দেশের মধ্যে শুল্ক ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে। হোন্ডাসহ অন্যান্য জাপানি কোম্পানি এই সুযোগে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানি করত। কিন্তু নতুন শুল্ক নীতির আওতায় এসব চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যও পড়ছে, যদিও কিছু ছাড় পাওয়া সম্ভব। ফলে হোন্ডার ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে এবং কোম্পানিটি তাদের সমগ্র উত্তর আমেরিকার উৎপাদন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে যাচ্ছে।

বর্তমান উৎপাদন পরিস্থিতি ও রদবদলের লক্ষ্য

বর্তমানে হোন্ডা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার গাড়ি বিক্রি করে, যার মধ্যে ১০ লাখই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত। বাকি প্রায় ৫ লাখ গাড়ি আমদানি করা হয়—এর মধ্যে ৩ লাখই আসে কানাডা থেকে। হোন্ডা এখন এই আমদানির পরিমাণ কমিয়ে CR-V SUV এবং Civic sedan মডেলের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রেই স্থানান্তর করতে চায়। এর মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদনের হার ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

কীভাবে বাড়বে উৎপাদন

হোন্ডা তাদের বিদ্যমান যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় উৎপাদন শিফট বাড়ানো, কর্মী নিয়োগ এবং সপ্তাহান্তে উৎপাদন চালু করার কথা ভাবছে। এছাড়া মেক্সিকোতে তৈরি ছোট SUV HR-V মডেলের উৎপাদনও যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে। যেহেতু এই মডেলটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয় না, এজন্য নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে।

এই পুরো পরিবর্তন ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এতে যন্ত্রাংশ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনতে হবে, ফলে এতে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর।

শুল্কজনিত খরচ ও কানাডার প্রতিক্রিয়া

হোন্ডা হিসাব করেছে, নতুন শুল্কের ফলে তাদের বার্ষিক খরচ প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন ডলার বাড়বে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি, তবে শুল্ক এড়াতে এটি হোন্ডার জন্য বেশি লাভজনক হতে পারে।

এদিকে কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত গাড়ির উপর। তাই হোন্ডা এখন কানাডায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি রপ্তানি কমিয়ে, সেখানেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের দিকেই ঝুঁকছে।

অন্য কোম্পানিগুলোর উদ্যোগ

শুধু হোন্ডা নয়, একই পরিস্থিতিতে অন্যান্য কোম্পানিও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। নিশান তাদের জাপানের ফুকুওকা প্রিফেকচারে Rogue SUV মডেলের উৎপাদন কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে চাইছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্ডাই মোটর গ্রুপও বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর মাধ্যমে তারা গাড়ি উৎপাদন ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ লাখে উন্নীত করবে এবং স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি ইস্পাত কারখানাও চালু করবে।