সারাক্ষণ রিপোর্ট
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সিদ্ধান্ত
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার একদিন পর, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়, তার মধ্যে পর্যটকরাও ছিল, ভারত বুধবার পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপটি নয়াদিল্লির পাঁচটি বড় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের একটি।
সিন্ধু চুক্তি কী এবং এটি কাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
সিন্ধু নদব্যবস্থায় মূল নদ সিন্ধুর পাশাপাশি পাঁচটি বাম তীরের উপনদী রয়েছে—রবি, বেয়াস, শতদ্রু, ঝিলম এবং চেনাব। ডান তীরের উপনদী কাবুল নদ ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় না।
রবি, বেয়াস ও শতদ্রুকে একত্রে বলা হয় পূর্ব নদী, আর চেনাব, ঝিলম ও সিন্ধুকে বলা হয় পশ্চিম নদী। এই নদীগুলোর পানি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার প্রদীপ কুমার সাক্সেনা পিটিআইকে বলেন, “ভারত একটি উচ্চতর অববাহিকাভুক্ত দেশ হিসেবে বহু পদক্ষেপ নিতে পারে। এটি চুক্তি বাতিলের দিকেই প্রথম ধাপ হতে পারে, যদি সরকার তা চায়।”
তিনি আরও বলেন,“যদিও চুক্তি বাতিলের কোনো স্পষ্ট ধারা নেই, তবে ভিয়েনা কনভেনশনের ধারা ৬২ অনুযায়ী ‘মূলপর্যায়ের পরিবর্তন’ ঘটলে চুক্তি বাতিলের আইনগত সুযোগ থাকে।”
ভারত কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
গত বছর ভারত পাকিস্তানকে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠিয়ে চুক্তির “পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধন” চেয়েছিল।
সাক্সেনা জানান, ভারতের ওপর কিশনগঙ্গা জলাধার বা জম্মু-কাশ্মীরের পশ্চিম নদীগুলোর প্রকল্পে জলাধার পরিস্কার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা মানার বাধ্যবাধকতা নেই।
“চুক্তিতে বর্তমানে ফ্লাশিং নিষিদ্ধ। ফ্লাশিংয়ের ফলে ভারত তার জলাধার থেকে পলি সরাতে পারবে। তবে পুরো জলাধার পুনরায় পূর্ণ করতে কয়েকদিন লাগতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী এটি আগস্ট মাসে করতে হয় — বর্ষার সময়। কিন্তু চুক্তি স্থগিত থাকায় এটি এখন যেকোনো সময় করা সম্ভব।”
পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতি
চাষের মৌসুমে,বিশেষ করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বিস্তৃত অঞ্চল যেখানে সিন্ধু এবং তার উপনদীর ওপর সেচ নির্ভরশীল,তখন ভারতীয় ফ্লাশিং কার্যক্রমের প্রভাব “ক্ষতিকর” হতে পারে।
চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলোর ওপর বাঁধ নির্মাণে ডিজাইন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অতীতে পাকিস্তান এসব ডিজাইন নিয়ে আপত্তি তুলেছে, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের আপত্তি মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
পূর্বের প্রকল্পগুলোর উদাহরণ
সালাল,বাগলীহার, উরি, চুটক, নিমু বাজগো, কিশনগঙ্গা,পাকাল দুল, মিয়ার, লোয়ার কালনাই ও রাটলে—এই প্রকল্পগুলোতে অতীতে পাকিস্তান আপত্তি জানিয়েছিল।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সরকার লাদাখে আরও আটটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করে। নতুন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আপত্তি আর কার্যকর নাও থাকতে পারে। এছাড়াও, জলাধার কীভাবে পূর্ণ ও পরিচালনা করা হবে, তা নিয়েও আগের বিধিনিষেধ আর প্রযোজ্য হবে না।
বন্যা তথ্য ভাগাভাগি ও তার প্রভাব
সাক্সেনা পিটিআইকে বলেন, ভারত এখন নদীর বন্যা সংক্রান্ত তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ না করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
“বিশেষ করে বর্ষার সময়, যখন নদীগুলো ফুলে ওঠে, তখন এই তথ্যের অভাব পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভারত এখন পশ্চিম নদীগুলোতে, বিশেষত ঝিলমে, জলাধার সংরক্ষণে আর কোনো সীমাবদ্ধতায় পড়বে না এবং উপত্যকায় বন্যা রোধে নানা পদক্ষেপ নিতে পারবে।”
ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক পটভূমি
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সিন্ধু অববাহিকায় কাটা পড়েছে। স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান নিম্নতীরবর্তী এবং ভারত উচ্চতীরবর্তী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
রবি নদীর মাধোপুর ও শতদ্রু নদীর ফিরোজপুরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প ছিল, যেগুলোর ওপর পাঞ্জাব (পাকিস্তান) নির্ভর করত। এই দুই প্রকল্প ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়ে যাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে পানি নিয়ে বিরোধের সূচনা হয়।
(পিটিআই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যসহ)
Leave a Reply