১২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
এআই-চালিত কাভার লেটার এখন আর যোগ্য প্রার্থী চিহ্নিত করতে কার্যকর নয় যুক্তরাষ্ট্রে ধনী মহল্লায় গোপনে গাছ হত্যা—অপরাধ, অর্থনীতি ও আইনের জটিল দ্বন্দ্ব ভারতে মতপ্রকাশের লড়াইয়ে কমেডিয়ানরা এখন ফ্রন্টলাইনে টিভির সবচেয়ে বাজে ড্রামা—সমালোচনার ঝড়ে তছনছ ‘অলস ফেয়ার’ চীনের সুপার ক্যারিয়ার ‘ফুজিয়ান’: যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আধিপত্যে বড় চ্যালেঞ্জ জেমস ওয়াটসন: ডাবল হেলিক্স–এর সহ-আবিষ্কারকের জীবনাবসান বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিরা এখন গাজার পশ্চিমতীরে জলপাই সংগ্রহ নিয়ে আতঙ্কে ভূগছে , হারতে পারে নিজেদের জমিও ফাঁসি দিতে গিয়ে বিচারপতি যখন মেথরের ময়লা নেবার পথ দিয়ে পালিয়ে যায় ঢাকায় শিশু ও গর্ভবতী নারী সিসা-ঝুঁকিতে শীর্ষে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ

শেয়ারবাজারে স্বপ্নভঙ্গ ও বাস্তব ক্ষতি

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • 86

সারাক্ষণ রিপোর্ট

৩৯ বছর বয়সী আইটি ব্যবস্থাপক জগদীশ একটি নতুন বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লোকসানের কারণে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ব্যথা লাগে, বিরক্ত লাগে। একটু শান্তিতে থাকতে চাই।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আগেই বাজার অস্থির হতে শুরু করে এবং ২০২৪ সালের মার্চ নাগাদ বিএসই সেনসেক্স ১১ শতাংশ নিচে নেমে আসে।

ডেরিভেটিভসে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনের ফাঁদে খুচরা বিনিয়োগকারী

ভারতের খুচরা বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বিপজ্জনক ডেরিভেটিভস, বিশেষ করে ফিউচার ও অপশনে টাকা ঢালেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI জানিয়েছে, গত তিন বছরে ১ কোটি ১০ লাখ খুচরা বিনিয়োগকারী এই ধরনের লেনদেনে ২১.৬ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। লাভ করেছেন মাত্র ৭ শতাংশ।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পঙ্কজ বর্মা জানিয়েছেন,এখন তরুণদের মধ্যেও এই আসক্তি ছড়িয়ে পড়ছে। হিপনোটিস্ট শেখর কুন্টে বলেন,যিনি এক সময় প্রেমে ব্যর্থতা ও শিক্ষাজনিত হতাশায় আক্রান্তদের সহায়তা করতেন, এখন impulsive ট্রেডারদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, এটি একধরনের গণ-উন্মাদনা।

নিয়ন্ত্রণ জোরদার করলো SEBI

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে SEBI ডেরিভেটিভস লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এই পদক্ষেপের পর, Bloomberg-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অপশন মার্কেটে খুচরা লেনদেন নেমে আসে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে।

বিনিয়োগ মানসিকতার পরিবর্তন

ভারতের মধ্যবিত্তদের বিনিয়োগের রীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে সোনা ও স্থায়ী আমানত ছিল প্রধান পছন্দ, সেখানে এখন সহজ অ্যাপ-ভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আগ্রহ বেড়েছে । ২০২৪ সালে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে খুচরা বিনিয়োগ ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। একই বছর মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ বেড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যেখানে পাঁচ বছর আগে এটি ছিল ৯৯৩ মিলিয়ন ডলার।

ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রের ভুল ব্যবহার

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের শিনোদ সোমাসুন্দরম বলেন, ফিউচার ও অপশন মূলত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি হলেও এখন সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে মুনাফার জন্য। স্মার্টফোন এখন অনেকটা ভার্চুয়াল জুয়ার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। টেলিভিশনে কার্ড গেম, ক্রিপ্টো এবং অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনের বিজ্ঞাপন অহরহ দেখা যায়। চেইনঅ্যানালাইসিস-এর মতে, ভারত ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের শীর্ষ ক্রিপ্টো গ্রহণকারী দেশ ছিল।

সরকারের সতর্কবার্তা

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৪ সালে বলেন, “ফিউচার ও অপশন লেনদেনের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার বাজারে অস্থিরতা আনার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যে এবং পারিবারিক আর্থিক স্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

শিক্ষা নিচ্ছেন কেউ কেউ

অবশেষে, অনেক বিনিয়োগকারী নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। জগদীশ বলেন, “এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের দিকেই মনোযোগ দিই। আর ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না।”

জনপ্রিয় সংবাদ

এআই-চালিত কাভার লেটার এখন আর যোগ্য প্রার্থী চিহ্নিত করতে কার্যকর নয়

শেয়ারবাজারে স্বপ্নভঙ্গ ও বাস্তব ক্ষতি

১০:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

৩৯ বছর বয়সী আইটি ব্যবস্থাপক জগদীশ একটি নতুন বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লোকসানের কারণে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ব্যথা লাগে, বিরক্ত লাগে। একটু শান্তিতে থাকতে চাই।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আগেই বাজার অস্থির হতে শুরু করে এবং ২০২৪ সালের মার্চ নাগাদ বিএসই সেনসেক্স ১১ শতাংশ নিচে নেমে আসে।

ডেরিভেটিভসে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনের ফাঁদে খুচরা বিনিয়োগকারী

ভারতের খুচরা বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বিপজ্জনক ডেরিভেটিভস, বিশেষ করে ফিউচার ও অপশনে টাকা ঢালেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI জানিয়েছে, গত তিন বছরে ১ কোটি ১০ লাখ খুচরা বিনিয়োগকারী এই ধরনের লেনদেনে ২১.৬ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। লাভ করেছেন মাত্র ৭ শতাংশ।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পঙ্কজ বর্মা জানিয়েছেন,এখন তরুণদের মধ্যেও এই আসক্তি ছড়িয়ে পড়ছে। হিপনোটিস্ট শেখর কুন্টে বলেন,যিনি এক সময় প্রেমে ব্যর্থতা ও শিক্ষাজনিত হতাশায় আক্রান্তদের সহায়তা করতেন, এখন impulsive ট্রেডারদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, এটি একধরনের গণ-উন্মাদনা।

নিয়ন্ত্রণ জোরদার করলো SEBI

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে SEBI ডেরিভেটিভস লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এই পদক্ষেপের পর, Bloomberg-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অপশন মার্কেটে খুচরা লেনদেন নেমে আসে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে।

বিনিয়োগ মানসিকতার পরিবর্তন

ভারতের মধ্যবিত্তদের বিনিয়োগের রীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে সোনা ও স্থায়ী আমানত ছিল প্রধান পছন্দ, সেখানে এখন সহজ অ্যাপ-ভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আগ্রহ বেড়েছে । ২০২৪ সালে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে খুচরা বিনিয়োগ ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। একই বছর মিউচুয়াল ফান্ডেও বিনিয়োগ বেড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যেখানে পাঁচ বছর আগে এটি ছিল ৯৯৩ মিলিয়ন ডলার।

ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রের ভুল ব্যবহার

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের শিনোদ সোমাসুন্দরম বলেন, ফিউচার ও অপশন মূলত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি হলেও এখন সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে মুনাফার জন্য। স্মার্টফোন এখন অনেকটা ভার্চুয়াল জুয়ার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। টেলিভিশনে কার্ড গেম, ক্রিপ্টো এবং অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনের বিজ্ঞাপন অহরহ দেখা যায়। চেইনঅ্যানালাইসিস-এর মতে, ভারত ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের শীর্ষ ক্রিপ্টো গ্রহণকারী দেশ ছিল।

সরকারের সতর্কবার্তা

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৪ সালে বলেন, “ফিউচার ও অপশন লেনদেনের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার বাজারে অস্থিরতা আনার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যে এবং পারিবারিক আর্থিক স্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

শিক্ষা নিচ্ছেন কেউ কেউ

অবশেষে, অনেক বিনিয়োগকারী নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। জগদীশ বলেন, “এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের দিকেই মনোযোগ দিই। আর ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না।”