আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
‘তুমি খাদের ডাইনে উৎরাইয়ের মাথায় যাও,’ চুবুক আমাকে হুকুম করলেন। ‘শাকভ যাক বাঁয়ের উৎরাইয়ের মাথায়। আমি খাদের নিচে লামব, এক্কেবারে মাঝখানে। কিছু দেখতে পেলি অনি ইসারা করি জানাবে, কেমন?’
ধীরে ধীরে এগোতে লাগলুম আমরা। আধ ঘণ্টার মধ্যে শুমাকভকে দেখতে পেলুম আমার পেছনে বাঁয়ের উৎরাইয়ের মাথায়। মাথাটা সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে উবু হয়ে হাঁটছিল ও। সাধারণভাবে ওর মুখখানা দেখতে ছিল ভালোমানুষের মতো, কিন্তু দুষ্টুমিতে-ভরা। সেই মুখ এখন দেখাচ্ছিল গম্ভীর আর কঠিন।
এক জায়গায় খাদটা এসে বাঁক নিয়েছিল। সেখানে এসে স্মাকভ বা চুক কাউকে দেখতে পেলুম না। অবিশ্যি জানতুম, ওঁরা ওইখানেই কাছাকাছি কোথাও আছেন। আমারই মতো আন্তে-আস্তে এগোচ্ছেন ওঁরাও, তবে হয়তো ঝোপের আড়ালে পড়ে গেছেন এই-যা। আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও, একই কাজের দায়িত্ব আর একই রকম বিপদের ঝুঁকি যে আমাদের তিনজনকে কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে এই চেতনা আমার মনে সাহস যোগাল। একটা জায়গায় এসে দেখলুম খাদটা চওড়া হয়ে গেছে। ঝোপ-জঙ্গলও আগের চেয়ে উঠেছে ঘন হয়ে। এরপরই এসে গেল আরেকটা বাঁক। আর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে মাটিতে সটান শুয়ে পড়তে হল।
দেখলুম, ডানদিকের উৎরাইয়ের মাথার সমান্তরাল একটা চওড়া পাথরে-বাঁধানো রাস্তা ধরে বেশ বড় একটা ঘোড়সওয়ার-বাহিনী আমার থেকে শ-খানেক হাত দূর দিয়ে চলেছে।
কালো, মসৃণ, চকচকে ঘোড়াগুলো সওয়ার পিঠে নিয়ে বেশ তেজীভাবেই চলছিল। দলটার আগে-আগে যাচ্ছিল তিনজন কি চারজন অফিসার। ঠিক আমার সামনাসামনি এসে দলটা থামল, দলের সেনাপতি একটা ম্যাপ বের করে দেখতে লাগলেন।
পিছিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে খানিকটা নেমে এলুম আমি। তারপর আমাদের আগের ব্যবস্থামতো ওঁকে ইসারা করে জানানোর জন্যে চারিদিক তাকিয়ে চুবুককে খুজতে লাগলুম।