সারাক্ষণ রিপোর্ট
হঠাৎ বিচ্ছেদের আলামত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো দেখে মনে হচ্ছে, আফ্রিকার ৫৪টি দেশকে তিনি প্রায় একঝাঁকেই পেছনে ফেলে দিচ্ছেন। ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়া, আফ্রিকান অনেক দেশের নাগরিকের উপর ভ্রমণ–নিষেধাজ্ঞা, এমনকি কয়েকটি দূতাবাস বন্ধের পরিকল্পনা—সব মিলিয়ে আমেরিকার সহায়তা ও কূটনীতি দুটোই কাটছাঁটের মুখে।
নীতি বদলের পটভূমি
অনেক প্রেসিডেন্টই আগে বলেছিলেন, ‘সহায়তা নয়, বাণিজ্য’-কেন্দ্রিক সম্পর্ক তৈরি করবেন। ট্রাম্প এ লক্ষ্য পূরণে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন—নির্বাসন, শুল্ক আর বিশ্বজুড়ে সংযমের নীতির মাঝেই আফ্রিকার প্রতি আগ্রহ যেন সর্বনিম্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দাবিদাওয়া
ওয়াশিংটনের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক চাইলে আফ্রিকান সরকারগুলোকে খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার থেকে শুরু করে নিজ দেশে মার্কিন অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেওয়া পর্যন্ত নানা ‘মাশুল’ দিতে হবে—এটাই ট্রাম্প–শিবিরের স্পষ্ট বার্তা।
ঝুঁকিপূর্ণ বাজি
সমালোচকদের মতে, ইউএস সহায়তা আফ্রিকায় সংঘাত প্রশমনে ও স্বাস্থ্য–ঝুঁকি মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখে; পাশাপাশি এটি চীনা প্রভাবের ভারসাম্যও ধরে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই ঝুঁকি নিতেই প্রস্তুত।
আফ্রিকার পাল্টা প্রস্তাব
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ইউএস–সহায়তার বদলে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজে’ প্রবেশাধিকার দিচ্ছে, সোমালিয়া নির্দিষ্ট বন্দর–নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব রেখেছে। অ্যাঙ্গোলার লোবিতো রেলকোরিডর কিংবা টোগোর মধ্যস্থতাকারী ভাবমূর্তি—আলাদা আলাদা স্বার্থে অনেক দেশই ট্রাম্পের নজরে থাকতে চাচ্ছে।
কারা সুবিধায়, কারা নয়
কেনিয়া, ইথিওপিয়া বা নাইজেরিয়ার মতো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে জোরালো দেশগুলো তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে। কিন্তু যাদের দেওয়ার মতো ‘বিনিময়মূল্য’ কম, তারা হয়তো আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র–বিরোধী পক্ষ নিতেও বাধ্য হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার শীতল সংসর্গ
ইসরায়েল–বিরোধী কূটনীতি ও শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের ‘দমন’–অভিযোগ ঘিরে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষোভ তীব্র। দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে শ্বেত আফ্রিকানদের জন্য শরণার্থী কর্মসূচিও চালু করেছে হোয়াইট হাউস।
দুর্বল কূটনৈতিক কণ্ঠ
ওয়াশিংটনে আফ্রিকান দূতাবাসগুলো বাজেট সঙ্কটে জর্জরিত; লবিস্ট ভাড়া করাও কঠিন। উপরন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টে আফ্রিকা–সংক্রান্ত বহু শীর্ষ পদ ফাঁকা, ফলে কার দরজায় কড়া নাড়বেন—দূতরা নিশ্চিত নন।
কংগ্রেস বনাম হোয়াইট হাউস
কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা সহায়তাভিত্তিক মডেল বদলকে সমর্থন করলেও বলেন, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার করলে ভালো হতো। তারা সতর্ক করছেন, সহায়তা ছাঁটাই চীনের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠছে। তবে ট্রাম্প–শিবিরের বক্তব্য—‘অভ্যন্তরীণ স্বার্থ বেষ্টিত’ কংগ্রেস দিয়ে দ্রুত সংস্কার করা অসম্ভব।
মানবিক সহায়তার অনিশ্চয়তা
বিশ্বব্যাপী ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মসূচি বাতিলের পরও কয়েকটি আফ্রিকান দেশে কিছু প্রকল্প চলবে, তবে সেগুলোরও মেয়াদ নির্দিষ্ট। এই অবস্থায় এইচআইভি/এইডস কর্মসূচি পিইপিএফΑআর ছোট হয়ে গেছে; ইতোমধ্যে সহায়তা কমায় মানুষ মারা যাচ্ছে—ডেমোক্র্যাটদের এমন অভিযোগে ট্রাম্পপন্থীরা বিচলিত নন।
সম্পর্কের নতুন ছাঁচ
ট্রাম্প–যুগে আফ্রিকার সঙ্গে আমেরিকার সমীকরণ মূলত ব্যবসা–কেন্দ্রিক, ক্ষণস্থায়ী এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ে ভর করে গড়ে উঠছে। সমালোচকরা যতই উদ্বেগ জানান, প্রশাসনের মতে এটাই দীর্ঘমেয়াদে আফ্রিকার যুবসমাজ ও কর্মসংস্থানের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ পথ। আফ্রিকার নেতারা প্রস্তুত কি না—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।