সারাক্ষণ রিপোর্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি-কৃত পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই নতুন আইফোন আগেভাগে কিনে নিয়েছেন। এতে অনান্য দেশের ব্যবহারকারীদের ভাবনা—এখনই কি ফোন বদলাব, নাকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব?
দাম কতটা বাড়তে পারে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল নিজেই এত বড় শুল্কের ভার বইতে পারবে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১,৫৯৯ ডলারের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম তাত্ত্বিকভাবে ৩,৯০০ ডলার পর্যন্ত ছুঁতে পারে। যদিও জাপানে আইফোন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে না, তবু উৎপাদন ও যন্ত্রাংশ-সংক্রান্ত অতিরিক্ত ব্যয় ধীরে ধীরে এখানকার দামেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সরবরাহ শৃঙ্খলের নির্ভরতা ও বিকল্প খোঁজ
আইডিসি-র উপ-গবেষণা পরিচালক কিরণজিৎ কৌর জানিয়েছেন, আইফোনের ৯০ শতাংশই এখনো চীনে তৈরি হয়। অ্যাপল ভারত ও ভিয়েতনামে কারখানা বাড়ালেও, ৪৩ টি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শত শত যন্ত্রাংশ-সরবরাহকারীর ওপর তাদের নির্ভরতা সহজে কমবে না। আন্তর্জাতিক কৌশল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস ক্লেগের ভাষায়, প্রযুক্তি-পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল স্থানান্তর ‘সম্ভবত সবচেয়ে জটিল কাজগুলোর একটি’—কারণ দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে ও বিশাল যন্ত্রাংশ-নেটওয়ার্ক সাজাতে অনেক সময় লাগে।
বিনিয়োগ-দ্বিধায় বিশ্বজুড়ে উদ্যোক্তারা
শুল্কের অনিশ্চয়তা ব্যবসাগুলিকে এমন অবস্থায় ফেলেছে, যেখানে তারা বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র খুঁজে দেখার চিন্তা করছে—কিন্তু সেসব দেশে হয়তো উৎপাদন খরচ বেশি, দক্ষ শ্রমিক ও অবকাঠামো কম। এদিকে ট্রাম্প আবার জানিয়েছেন, চীনের ওপর শুল্ক ‘অনেকটাই কমানো হবে, তবে শূন্যে নামবে না’, আর পুরো ইলেকট্রনিক্স সরবরাহ শৃঙ্খল খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন।
বাজারের বিশেষ বাস্তবতা
প্রযুক্তি-খাতের বিশ্লেষক নোবুয়ুকি হায়াশি মনে করেন, আইফোনের সাফল্যের পেছনে ‘উন্নত নকশা ও কারিগরির প্রতি সাংস্কৃতিক ভালোবাসা’ থাকলেও, মূল চালিকা শক্তি ছিল টেলিকম অপারেটরদের আকর্ষণীয় ভর্তুকি-প্যাকেজ। এখন কিছু অপারেটর গুগল পিক্সেল-এর মতো অ্যান্ড্রয়েড সেটেও একই ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, তবু অনেক ব্যবহারকারী নতুন অপারেটিং সিস্টেমে খাপ খাওয়ানোর ঝক্কি এড়াতে আইফোনেই থাকছেন।
এখন কিনবেন, নাকি অপেক্ষা করবেন?
ডলার বিনিময়-হার সাম্প্রতিক দিনে কোন কোন দেশে কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে, আবার মুদ্রাস্ফীতির চাপও আছে। এর ওপর যুক্ত হচ্ছে শুল্ক-ঝুঁকি। ফলে অনেক দেশের আই ফোন ব্যবহারকারীরা ভাবছেন, এবারের মডেলটি বাদ দিয়েই হয়তো পরের বছর বা দ্বিতীয়-হাতের বাজারে ভালো চুক্তির দিকেই ঝুঁকবেন।
Leave a Reply