১১:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

নতুন বৈশ্বিক শক্তির বিন্যাস: গ্রিনল্যান্ডের কেস স্টাডি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 34

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার আগেই দ্বীপটিকে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক” বলে উল্লেখ করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে হেরকিউলিস পরিবহন বিমান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের হঠাৎ সফরসব কিছুর কেন্দ্রে রয়েছে এই ড্যানিশ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি।

ট্রাম্পের কেনা’-প্রস্তাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেসে ভাষণ দিয়ে ট্রাম্প রসিকতার সুরে বলেন, “যেভাবেই হোকগ্রিনল্যান্ড এক দিন আমাদের হবে।” নুকের বাসিন্দারা এতে ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বহু বছর ধরে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের অগ্রপথিক আক্কালুক লুনগে মন্তব্য করেন, “এই দেশএই সম্পদসবই আমাদের।

স্বাধীনতার স্বপ্ন বনাম আর্থিক নির্ভরতা

দ্বীপের অধিকাংশই ইনুইটযাদের বহুদিনের স্বপ্নপূর্ণ স্বাধীনতা। কিন্তু ডেনমার্কের বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি ছাড়া চলা কঠিন। তাই আয় ও কূটনৈতিক সমর্থনের নতুন উৎস খুঁজতে আইসল্যান্ডকানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সম্ভাব্য অংশীদার নিয়ে এখন গভীর আলোচনা চলছে।

বিরল খনিজের সম্ভাবনা ও জটিলতা

বরফ গলতে থাকায় শিলার নিচে লুকিয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ বিরল মাটির খনিজসোনা ও তামা এখন উন্মোচিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার এনার্জি ট্রানজিশন মিনারেলস-সহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে ইউরেনিয়াম সহ-উৎপাদন নিষিদ্ধ থাকায় কিছু প্রকল্প আইনি জটিলতায় আটকে আছেআর চীনের শোধনক্ষমতার ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতা পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খনি থেকে শিল্প-শহরের স্বপ্ন

কানাডাভিত্তিক আমারোক মিনারেলস দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডের নালুনাক সোনা খনিটি আবার চালু করেছে। কোম্পানির নির্বাহী এলদুর ওলাফসনের পরিকল্পনামুনাফা এলে নতুন সোনানিকেল ও বিরল খনিজের অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করাযাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়ে। কাকোর্টকের অনেকেই আশা করছেনএ ধরনের উদ্যোগে রাজধানী ছেড়ে মানুষ নিজ এলাকায় ফিরতে পারবে।

উদীয়মান পর্যটন খাত

মৌসুমি ক্রুজ জাহাজ ও আসন্ন নুকযুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ফ্লাইট মিলে পর্যটন দ্রুত বাড়ছে। আর্টিক’-এর প্রধান ক্যাসপার ফ্র্যাঙ্ক মোলার মনে করেনস্থানীয় মালিকানাধারী পর্যটনই স্বাধীনতার টেকসই অর্থভিত্তি হতে পারে। তাই নতুন আইনে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেনআর নগর কর্তৃপক্ষ নাগরিক মতামত নিয়েই অবকাঠামো বাড়াচ্ছে।

সামাজিক চ্যালেঞ্জের ছায়া

দীর্ঘ উপনিবেশের ইতিহাসের দাগ আজও স্পষ্টছোট আয়তনের সমাজে শিশুসুরক্ষা সমস্যা ও গৃহহীনতার হার তুলনামূলক বেশি। ডেনিশ কল্যাণব্যবস্থার সরাসরি অনুকরণ ইনুইট সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায়ই মানানসই হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক বনি ইয়েনসেন সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন।

ডেনমার্কগ্রিনল্যান্ড সম্পর্ক ও ওয়াশিংটনের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়-প্রচেষ্টা” ডেনমার্কগ্রিনল্যান্ড টানাপোড়েনকে নতুন করে উসকে দিয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় ডেনমার্ক আর্কটিকে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী মেতে ফ্রেডেরিকসেন নুক সফর করে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক বিভাজন ও ভবিষ্যতের পথ

সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যবসাবান্ধব ডেমোক্রা-ইত’ ধীরগতির স্বাধীনতার পক্ষেআর নালেরাক’ দ্রুত বিচ্ছেদের পক্ষে ভোট পেয়েছেদুটি স্পষ্ট ধারা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক জুলিয়া আকা ভিলে বলেন, “আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছেপ্রত্যেক গ্রিনল্যান্ডারের লক্ষ্যনিজ ভূমির পূর্ণ অধিপতি হওয়া।

উপসংহার

গ্রিনল্যান্ড ভবিষ্যতে কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়বে ও কাদের সঙ্গে ব্যবসা করবেসেই সিদ্ধান্ত ২১-শতকের শক্তি-সাম্যে বড় ইঙ্গিত দেবে। যুক্তরাষ্ট্রচীনইউরোপকারা শেষ পর্যন্ত দ্বীপটির নতুন অধ্যায়ে অংশ নেবেতা ঠিক করবে ইনুইট জনগণই।

নতুন বৈশ্বিক শক্তির বিন্যাস: গ্রিনল্যান্ডের কেস স্টাডি

০৫:০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার আগেই দ্বীপটিকে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক” বলে উল্লেখ করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে হেরকিউলিস পরিবহন বিমান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের হঠাৎ সফরসব কিছুর কেন্দ্রে রয়েছে এই ড্যানিশ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি।

ট্রাম্পের কেনা’-প্রস্তাব ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেসে ভাষণ দিয়ে ট্রাম্প রসিকতার সুরে বলেন, “যেভাবেই হোকগ্রিনল্যান্ড এক দিন আমাদের হবে।” নুকের বাসিন্দারা এতে ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বহু বছর ধরে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের অগ্রপথিক আক্কালুক লুনগে মন্তব্য করেন, “এই দেশএই সম্পদসবই আমাদের।

স্বাধীনতার স্বপ্ন বনাম আর্থিক নির্ভরতা

দ্বীপের অধিকাংশই ইনুইটযাদের বহুদিনের স্বপ্নপূর্ণ স্বাধীনতা। কিন্তু ডেনমার্কের বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি ছাড়া চলা কঠিন। তাই আয় ও কূটনৈতিক সমর্থনের নতুন উৎস খুঁজতে আইসল্যান্ডকানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সম্ভাব্য অংশীদার নিয়ে এখন গভীর আলোচনা চলছে।

বিরল খনিজের সম্ভাবনা ও জটিলতা

বরফ গলতে থাকায় শিলার নিচে লুকিয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ বিরল মাটির খনিজসোনা ও তামা এখন উন্মোচিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার এনার্জি ট্রানজিশন মিনারেলস-সহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে ইউরেনিয়াম সহ-উৎপাদন নিষিদ্ধ থাকায় কিছু প্রকল্প আইনি জটিলতায় আটকে আছেআর চীনের শোধনক্ষমতার ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতা পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খনি থেকে শিল্প-শহরের স্বপ্ন

কানাডাভিত্তিক আমারোক মিনারেলস দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডের নালুনাক সোনা খনিটি আবার চালু করেছে। কোম্পানির নির্বাহী এলদুর ওলাফসনের পরিকল্পনামুনাফা এলে নতুন সোনানিকেল ও বিরল খনিজের অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করাযাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়ে। কাকোর্টকের অনেকেই আশা করছেনএ ধরনের উদ্যোগে রাজধানী ছেড়ে মানুষ নিজ এলাকায় ফিরতে পারবে।

উদীয়মান পর্যটন খাত

মৌসুমি ক্রুজ জাহাজ ও আসন্ন নুকযুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ফ্লাইট মিলে পর্যটন দ্রুত বাড়ছে। আর্টিক’-এর প্রধান ক্যাসপার ফ্র্যাঙ্ক মোলার মনে করেনস্থানীয় মালিকানাধারী পর্যটনই স্বাধীনতার টেকসই অর্থভিত্তি হতে পারে। তাই নতুন আইনে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেনআর নগর কর্তৃপক্ষ নাগরিক মতামত নিয়েই অবকাঠামো বাড়াচ্ছে।

সামাজিক চ্যালেঞ্জের ছায়া

দীর্ঘ উপনিবেশের ইতিহাসের দাগ আজও স্পষ্টছোট আয়তনের সমাজে শিশুসুরক্ষা সমস্যা ও গৃহহীনতার হার তুলনামূলক বেশি। ডেনিশ কল্যাণব্যবস্থার সরাসরি অনুকরণ ইনুইট সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায়ই মানানসই হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক বনি ইয়েনসেন সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছেন।

ডেনমার্কগ্রিনল্যান্ড সম্পর্ক ও ওয়াশিংটনের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়-প্রচেষ্টা” ডেনমার্কগ্রিনল্যান্ড টানাপোড়েনকে নতুন করে উসকে দিয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় ডেনমার্ক আর্কটিকে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী মেতে ফ্রেডেরিকসেন নুক সফর করে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক বিভাজন ও ভবিষ্যতের পথ

সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যবসাবান্ধব ডেমোক্রা-ইত’ ধীরগতির স্বাধীনতার পক্ষেআর নালেরাক’ দ্রুত বিচ্ছেদের পক্ষে ভোট পেয়েছেদুটি স্পষ্ট ধারা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক জুলিয়া আকা ভিলে বলেন, “আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছেপ্রত্যেক গ্রিনল্যান্ডারের লক্ষ্যনিজ ভূমির পূর্ণ অধিপতি হওয়া।

উপসংহার

গ্রিনল্যান্ড ভবিষ্যতে কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়বে ও কাদের সঙ্গে ব্যবসা করবেসেই সিদ্ধান্ত ২১-শতকের শক্তি-সাম্যে বড় ইঙ্গিত দেবে। যুক্তরাষ্ট্রচীনইউরোপকারা শেষ পর্যন্ত দ্বীপটির নতুন অধ্যায়ে অংশ নেবেতা ঠিক করবে ইনুইট জনগণই।