সারাক্ষণ রিপোর্ট
কূটনৈতিক স্মারকে দুই চীনা পান্ডা
থাইল্যান্ড-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন চলতি বছরের শেষ দিকে দুই বিশাল পান্ডা পাঠাবে। এসব পান্ডা উপহার নয়—দশ বছরের ইজারায় নেওয়া হচ্ছে, যেখানে প্রত্যেকটির বার্ষিক ভাড়া আনুমানিক পাঁচ লাখ ডলার। চুক্তি শেষে পান্ডা ও তাদের শাবক চীনে ফেরত পাঠাতে হবে; সব খাদ্য-বাসস্থানের ব্যয়ও বহন করবে বাংলাদেশ-সমতুল্য উষ্ণ জলবায়ুর থাইল্যান্ড সরকার।
ব্যয়ের যুক্তি বনাম হাতি সংরক্ষণ
নাগরিক সমাজের মতে, পান্ডা পালনে যে শত কোটি বাথ খরচ হবে, তা বরং দেশের প্রতীক হাতি রক্ষায় ব্যয় করা উচিত। ‘অ্যাডভান্সড ফ্রেন্ডস অব দ্য এশিয়ান এলিফ্যান্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সোরাাইদা সালওয়ালা বলেন, “মানুষের কোনো প্রাণীকে বাস্তুচ্যুত করার অধিকার নেই।”
ঐতিহাসিক হাতি উপহার, এখন বন্ধ্য
রাজা চতুর্থ রামার আমলে (১৮৬১) থাই হাতি উপহারের ঐতিহ্য শুরু হলেও বন উজাড় ও সংখ্যা হ্রাসে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে হাতি পাঠানো বন্ধ রয়েছে। ২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় নির্যাতিত এক উপহার-হাতিকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে জনমত গড়ে ওঠে; এরপরই কূটনৈতিক হাতি-উপহার স্থগিত হয়।
বন্য হাতি ও মানুষের সংঘাত বাড়ছে
থাইল্যান্ডের ৯১ সংরক্ষণ এলাকায় আনুমানিক ৪,০০০ বন্য হাতি থাকলেও বনভূমি কমে যাওয়ায় মানুষের সাথে সংঘাত বাড়ছে। গত দশকে হাতির আক্রমণে ২৩৯ জনের মৃত্যু ও ২০৬ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্য হাতি সংরক্ষিত এলাকার বাইরে গেছে ১১,৪৬৮ বার; এর এক-তৃতীয়াংশে ফসল বা সম্পত্তি ক্ষতির অভিযোগ।
সরকারের পদক্ষেপ ও বাজেট
মানব-হাতি সংঘাত মোকাবেলায় এ বছর ৭৪৯ মিলিয়ন বাথ বরাদ্দ হয়েছে। বন বিভাগ মনিটর, পাকা খাদ্য গাছ, পরিখা ও বেড়া নির্মাণের পাশাপাশি বিপথগামী হাতি পুনর্বাসন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করবে। বন্য হাতির জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আফ্রিকান-ধাঁচের ডার্ট-কন্ট্রাসেপ্টিভ পরীক্ষাও চলছে, যা নিয়ে কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
হাতি চিকিৎসায় বেসরকারি উদ্যোগ
সাবেক রাজনৈতিক নেতা কাঞ্চনা সিল্পা-আরচা হাতি কল্যাণের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। তিনি ৪৯.২৫ মিলিয়ন বাথ দান করে চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় শয্যার হাতি হাসপাতাল ও ভ্রাম্যমাণ ভেট টিম গড়ছেন। রাজ্য-সমর্থিত ‘থাই এলিফ্যান্ট কনজারভেশন সেন্টার’ দিনে ১৫টি হাতি চিকিৎসা করতে পারলেও অনেক দিন ২৯-এও পৌঁছে যায়।
পর্যটন-নির্ভর বন্দি হাতি ও বিতর্ক
থাইল্যান্ডে প্রায় ৩,২০০ হাতি বন্দি অবস্থায় রয়েছে; অধিকাংশকে পর্যটকদের আনন্দ দিতে চড়া, নাচ, ছবি তোলা বা বাস্কেটবল খেলায় ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক ‘সাংকচুয়ারি’গুলো হাতি-স্নান, হাঁটা-খাওয়ানোর প্যাকেজ (মাথাপিছু ৫,৫০০ বাথ) চালু করেছে। তবে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন’ বলছে, এসব কর্মসূচির জন্য বাচ্চা হাতিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে কঠোর প্রশিক্ষণে বাধ্য করা হয়।
দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
২০২৫-এর জানুয়ারিতে ফুকেটের কাছে এক ‘সাংকচুয়ারি’তে স্নান করাতে গিয়ে স্প্যানিয়ার্ড পর্যটক প্রাণ হারান—হাতির শুঁড়ে পা পড়ে ট্রাঙ্কের ঝাঁকুনিতে পড়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। বিপরীতে, প্রদর্শনীভিত্তিক শো-তে দর্শক-পাশে দূরত্ব থাকায় ঝুঁকি তুলনামূলক কম বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। পাতায়ায় ‘মংচাং ক্যাফে’ মৌসুমে দিনে ৪,০০০ দর্শক টানে; নাচ-প্যারেড, রাইড ও ছবি তোলা প্রধান আয়।
সামনের পথ
পান্ডা আসুক বা না আসুক, হাতি-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে থাইল্যান্ডকে প্রমাণ করতে হবে—নিজেদের জাতীয় প্রাণীর সুরক্ষা তাদের অগ্রাধিকার। জনসচেতনতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পর্যটন নীতিমালা ও বন রক্ষা—সব মিলিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনাই পারে হাতি-মানুষ সহাবস্থান সুদৃঢ় করতে।