১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

পাকিস্তানের শেয়ারবাজার: সাম্প্রতিক ধস, অতীত প্রবণতা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

  • Sarakhon Report
  • ০৬:১১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • 24

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমান পরিস্থিতি: হঠাৎ পতন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা

২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের (পিএসএক্স) কেসই-১০০ সূচকে এক দিনে ৩,৫৪৫ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে—যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় পতন। এটি মূলত ভারত-পাকিস্তান মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে—ভারত ‘ষড়যন্ত্রমূলক অভিযান’ চালাতে পারে, পাহালগামের হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও যুদ্ধাশঙ্কা বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক শেয়ার বিক্রি শুরু হয়।

অতীত পরিস্থিতি ও বাজারের গতি

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ২০২৫ সালের প্রথমভাগ পর্যন্ত পাকিস্তান শেয়ারবাজারে মোটামুটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। কিছু প্রধান কারণ ছিল:

  • ডলার রিজার্ভে বৃদ্ধি: স্টেট ব্যাংক বাজার থেকে ৫.৬৭৭ বিলিয়ন ডলার কিনেছে জুন ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত।
  • ব্যালান্স অব পেমেন্টে স্থিতিশীলতা: কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হ্রাস পায় এবং ফেব্রুয়ারিতে মাসিক রেমিটেন্স বেড়ে যায়।
  • আইএমএফ তহবিল অনুমোদন: আইএমএফ এর ঋণ কিস্তি ছাড় হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান।
  • করপোরেট আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস: বিশেষত ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতে ভালো পারফরম্যান্স।

এই সময় শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় এবং ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সূচক ১১৬,০০০-এর কাছাকাছি উঠে যায়।

ধসের কারণ: রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা আশঙ্কা

বর্তমান পতনের মূল কারণ রাজনৈতিক:

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: সীমান্ত সংঘর্ষের আশঙ্কা ও সামরিক পদক্ষেপের হুমকি।

তথ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি: এটি বাজারে প্যানিক সৃষ্টি করে এবং হঠাৎ বিক্রির চাপ বাড়ে।

বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ পন্থায় স্থানান্তর: শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা ডলার, স্বর্ণ বা সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

করপোরেট পারফরম্যান্স ও আস্থার সংকট

উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিপিএল)-এর ২৫% নিট মুনাফা হ্রাস এবং ১৫% বিক্রয় কমে যাওয়া। এর ফলে শক্তি খাতেও আস্থা কমে যায়। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি করপোরেট আয়ের ঝুঁকিও বাড়ছে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও করণীয়

সম্ভাব্য ঝুঁকি:

  • যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাবনা: বাস্তব সামরিক সংঘাত শুরু হলে আরও বড় ধস হতে পারে।
  • বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার: বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা দ্রুত টাকা তুলে নিতে পারেন।
  • কারেন্সি চাপ: পাকিস্তানি রুপিতে চাপ সৃষ্টি হলে বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কট বাড়বে।

করণীয়:

  • রাজনৈতিক বিবৃতির সাবধানতা
  • বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ
  • নীতিগত স্বচ্ছতা ও সংবেদনশীল তথ্য ব্যবস্থাপনা

উপসংহার

পাকিস্তানের শেয়ারবাজার বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা, যুদ্ধাশঙ্কা ও আস্থার ঘাটতির প্রভাবে বাজারে বড় পতন ঘটেছে। যদিও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক কিছুটা ইতিবাচক ছিল, তবে বর্তমান নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের মধ্যে তা ম্লান হয়ে গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করবে বাজারের স্থিতিশীলতা কতটা দ্রুত ফিরে আসতে পারে।

পাকিস্তানের শেয়ারবাজার: সাম্প্রতিক ধস, অতীত প্রবণতা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

০৬:১১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বর্তমান পরিস্থিতি: হঠাৎ পতন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা

২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের (পিএসএক্স) কেসই-১০০ সূচকে এক দিনে ৩,৫৪৫ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে—যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় পতন। এটি মূলত ভারত-পাকিস্তান মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে—ভারত ‘ষড়যন্ত্রমূলক অভিযান’ চালাতে পারে, পাহালগামের হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও যুদ্ধাশঙ্কা বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক শেয়ার বিক্রি শুরু হয়।

অতীত পরিস্থিতি ও বাজারের গতি

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ২০২৫ সালের প্রথমভাগ পর্যন্ত পাকিস্তান শেয়ারবাজারে মোটামুটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। কিছু প্রধান কারণ ছিল:

  • ডলার রিজার্ভে বৃদ্ধি: স্টেট ব্যাংক বাজার থেকে ৫.৬৭৭ বিলিয়ন ডলার কিনেছে জুন ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত।
  • ব্যালান্স অব পেমেন্টে স্থিতিশীলতা: কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি হ্রাস পায় এবং ফেব্রুয়ারিতে মাসিক রেমিটেন্স বেড়ে যায়।
  • আইএমএফ তহবিল অনুমোদন: আইএমএফ এর ঋণ কিস্তি ছাড় হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান।
  • করপোরেট আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস: বিশেষত ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতে ভালো পারফরম্যান্স।

এই সময় শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় এবং ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সূচক ১১৬,০০০-এর কাছাকাছি উঠে যায়।

ধসের কারণ: রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নিরাপত্তা আশঙ্কা

বর্তমান পতনের মূল কারণ রাজনৈতিক:

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: সীমান্ত সংঘর্ষের আশঙ্কা ও সামরিক পদক্ষেপের হুমকি।

তথ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি: এটি বাজারে প্যানিক সৃষ্টি করে এবং হঠাৎ বিক্রির চাপ বাড়ে।

বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ পন্থায় স্থানান্তর: শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা ডলার, স্বর্ণ বা সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

করপোরেট পারফরম্যান্স ও আস্থার সংকট

উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (পিপিএল)-এর ২৫% নিট মুনাফা হ্রাস এবং ১৫% বিক্রয় কমে যাওয়া। এর ফলে শক্তি খাতেও আস্থা কমে যায়। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি করপোরেট আয়ের ঝুঁকিও বাড়ছে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও করণীয়

সম্ভাব্য ঝুঁকি:

  • যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাবনা: বাস্তব সামরিক সংঘাত শুরু হলে আরও বড় ধস হতে পারে।
  • বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার: বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা দ্রুত টাকা তুলে নিতে পারেন।
  • কারেন্সি চাপ: পাকিস্তানি রুপিতে চাপ সৃষ্টি হলে বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কট বাড়বে।

করণীয়:

  • রাজনৈতিক বিবৃতির সাবধানতা
  • বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ
  • নীতিগত স্বচ্ছতা ও সংবেদনশীল তথ্য ব্যবস্থাপনা

উপসংহার

পাকিস্তানের শেয়ারবাজার বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা, যুদ্ধাশঙ্কা ও আস্থার ঘাটতির প্রভাবে বাজারে বড় পতন ঘটেছে। যদিও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক কিছুটা ইতিবাচক ছিল, তবে বর্তমান নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের মধ্যে তা ম্লান হয়ে গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করবে বাজারের স্থিতিশীলতা কতটা দ্রুত ফিরে আসতে পারে।