শ্রী নিখিলনাথ রায়
গৌরাঙ্গ সিংহের কোনও পুত্রাদি ছিল না। তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিহারী সিংহের দীনদয়াল, রাধাকান্ত, রাধাচরণ ও গঙ্গাগোবিন্দ নামে চারি পুত্র হয়। গৌরাঙ্গ রাধাকান্তকে দত্তকপুত্ররূপে গ্রহণ করেন; রাধাকান্ত অনেক স্থলে রাধাগোবিন্দ বলিয়া’ অভিহিত হইয়াছেন। গৌরাঙ্গ সিংহের পর রাধাকান্ত তাঁহার পদে নিযুক্ত হন এবং নিজ উদ্যমবলে অনেক সম্পত্তি উপার্জন করিয়াছিলেন। নবাব আলিবদ্দী ও সিরাজ উদ্দৌ-লার সময়ে রাধাকান্ত রাজস্ববিষয়ে অনেক উন্নতি দেখাইয়াছিলেন। কোম্পানীর দেওয়ানী গ্রহণের পরও তিনি ভূমিসম্বন্ধীয় অনেক বন্দোবস্ত।
করিয়া পুরস্কারস্বরূপ হুগলীতে রাজস্ব আদায়ের ভার ও একখানি সায়ার মহাল প্রাপ্ত হন। নবাব সিরাজ উদ্দৌলার সর্ব্বনাশের জন্য যে ভীষণ ষড়যন্ত্রের অভিনয় হইয়াছিল, ইতিহাসে উল্লিখিত থাকুক বা নাই থাকুক, যাহাতে প্রবাদানুসারে বাঙ্গলার প্রায় সমস্ত প্রধান প্রধান লোক লিগু ছিলেন; কি জমিদার কি উচ্চপদস্থ কর্মচারী কেহই বিরত ছিলেন না; রাধাকান্তও তাহার একজন নায়ক বলিয়া কথিত হইয়া থাকেন। তাঁহার সম্বন্ধে যেরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে, নিম্নে তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে।
ইংরেজদের সহিত গোপনে পরামর্শ করিতেছেন সন্দেহ করিয়া, সিরাজ রাধাকান্তের সর্ব্বনাশসাধনে উদ্যত হন। রাজা দুর্লভরাম তাঁহাকে গোপনে এই সংবাদ দিলে, তিনি মুর্শিদাবাদ হইতে পলায়ন করিয়া নদীয়ায় উপস্থিত হইলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভবনে ষড়যন্ত্রকারিগণের পূর্ণ অধিবেশন হয়। তথায় ক্লাইবের দূতও উপস্থিত ছিলেন। রাধাকান্ত সেই সভামধ্যে দরবারের যাবতীয় কর্মচারীর মনোভাব সুস্পষ্টরূপে চিত্রিত করেন। তিনি এইরূপ প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, সকলেই সিরাজের সিংহাসনচ্যুতির ইচ্ছা করিতেছেন।
মীর জাফর তাঁহাদের মধ্যে অগ্রণী এবং আবশ্যক হইলে, মোহনলালকেও অর্থ দ্বারা বশীভূত করা যাইতে পারে।। হায় প্রবাদ! তুমি মোহনলালের নামেও দোষারোপ করিতে বিরত হও নাই। রাধাকান্তের এই সংবাদে নাকি ক্লাইব সাহেবের পলাশীর যুদ্ধের অনেক উপকার হইয়াছিল। তিনি রাধাকান্তের। নিকট হইতে নাকি প্রথমে দরবারের কর্মচারিগণের মনোভাব অবগত হন। পলাশীর যুদ্ধের পর, ক্লাইব রাধাকান্তকে রাজস্ববিভাগের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত করেন।
Sarakhon Report 



















