১১:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

জুলাই শহিদের প্রকৃত সংখ্যা কত?

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • 38

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি৷ সরকারি গেজেটের সঙ্গে মিল নেই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের৷ উপদেষ্টা যখন জাতিসংঘকে উদ্ধৃত করছেন, তখন ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলছেন এনসিপির নেতারা৷

এনসিপি নেতাদের ভাষ্যেও গড়মিল

৩০ এপ্রিল ঢাকার মিরপুরে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ৷ জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি৷

সেদিন কর্মসূচি সম্পর্কে সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘… জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে সহস্রাধিক, ১৪শরও বেশি শহিদ হয়েছে এবং হচ্ছে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে আহত করেছে, এই সবগুলা, এই যে গণহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, এই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে বিচার নিশ্চিত করাসহ এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল, নিবন্ধন বাতিল এবং এই জুডিশিয়ারি পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের জন্য আমরা আগামী ২ তারিখ (২ মে) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বিক্ষোভ মিছিল করবো৷’

তার কথায় পাওয়া গেল, ‘জুলাই শহিদ’ এর সংখ্যা এক হাজার চারশ’রও বেশি৷

ওইদিন বগুড়া সফরে গিয়ে এক রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বক্তব্য রাখেন এনসিপি-র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম৷ তিনিও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক৷ সেদিনের বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন তিনি৷

সারজিস বলেন, ‘‘এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ২৪-এর জুলাইয়ে হাজারের অধিক আমাদের ভাই-বোনকে খুন করেনি, এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ছিল ব্যাপারটি এমন নয়, এই আওয়ামী লীগ পুরো বাংলাদেশে জেলার নাম ধরে, ব্যক্তির নাম ধরে, দলের নাম ধরে বৈষম্য করেছে৷”

সারজিসের বক্তব্যে পাওয়া গেছে, ‘জুলাই শহিদ’-এর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি৷

২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের সংখ্যা ঘোষণা করে৷ সেদিন উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন শহিদের সংখ্যা এক হাজার ৫৮১, তবে সেদিন তারা জানিয়েছিলেন, সংখ্যাটি চূড়ান্ত নয়৷

শহিদের সংখ্যা ‘সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব ফয়েজ আহম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার এখন পর্যন্ত ৮৩৪ জনের বিষয়ে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছে৷ সেই মর্মে সরকারি গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদেরকে ‘জুলাই শহিদ’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ অন্যান্য আরো অনেকগুলো দাবি এবং আরো অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে, আরো অনেকগুলো মৃত্যুর বিষয়ে সরকার এখনো তদন্ত করছে, যাচাই-বাছাই করছে৷”

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়টিকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মতো সংস্থা থেকে ১৪শ সংখ্যাটা যখন সামনে আসে, এটা আসলে অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ সংখ্যা হিসাবে এই কথাটা আলোচনায় এসেছে৷ সেজন্য জাতিসংঘের বিষয়টা সংখ্যা হিসাবে নানা বক্তব্য, বয়ানের মধ্য দিয়ে আসছে৷ কিন্তু ‘জুলাই শহিদ’ কারা এবং কত জন সেটা চূড়ান্ত হবে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে৷ ৮৩৪ জনের নাম ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘(জুলাই শহিদ) এই সংখ্যাটা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷ এটার সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বিমত নেই৷ এই লক্ষ্যে সরকার কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে৷”

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি রয়েছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সরকার চায়, জুলাই শহিদের সংখ্যা নিয়ে যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিতর্ক না থাকে৷ বিতর্কহীন, বিতর্কমুক্তভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার৷”

‘জুলাই আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে’

পুরো বিষয়টিকে সরকারের ‘চরম ব্যর্থতা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ছিল, এই ব্যর্থতাটাকে না দেখানো৷ এটাকে সফল করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না৷ খুব সহজ একটা কাজ ছিল৷ সেই সহজ কাজটাকে তারা এতটাই কঠিন করে তুলছে, এটা আগামীতে জটিল আকার ধারণ করবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘স্বল্পতম সময়ে ছিনতাই হওয়া আন্দোলনের নাম বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলন৷ এ আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে৷ এই আন্দোলনকে নিয়ে এখন ব্যবসা হচ্ছে৷’

জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনের সুফল ভোগীদের নিয়েও প্রশ্ন আছে এই সিনিয়র সাংবাদিকের৷ তিনি বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের  সুফল যারা ভোগ করছেন, তারা এই আন্দোলনের যারা শহিদ এবং আহত, তাদের সঙ্গে মশকরা করছেন৷ এর একমাত্র কারণ হলো, এই আন্দোলনের ফলে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছেন, তাদের ৮০ পার্সেন্ট লোকের এই আন্দোলনের সঙ্গে কোনো ধরনের মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না৷ ইনক্লুডিং ডক্টর ইউনূস৷”

‘‘আন্দোলনের প্রকৃত চেতনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই” বলে মন্তব্য করতেও পিছপা হননি মাসুদ কামাল৷ সরকারি ভাষ্যে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার নিয়েও সমালোচনা করেছেন তিনি৷

মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘কত হাস্যকর অবস্থায় আছি! সরকার এই দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান৷ সেই সরকারের একজন উপদেষ্টা নিহতের তালিকার জন্য নির্ভর করছে বিদেশের একটা প্রতিষ্ঠানের উপর৷ এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?”

জাতিসংঘের কয়েকজন প্রতিনিধি মিলে যদি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে, সরকার কেন পারলো না?—এমন প্রশ্ন রেখে মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘সরকারকে কেন অন্য একটা সংস্থার অনুমিত তালিকার উপর নির্ভর করতে হয়? কারণ, সরকার পারে নাই, সরকারের ব্যর্থতা৷”

৫ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যারা সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন, তাদের হত্যার বিচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই সাংবাদিক৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই দশ দিনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী? ওই দশ দিনে যারা মারা গেছেন, তারা কি মানুষ নন? তাদের পরিবার নেই? ওদের কি দুঃখ নেই? তাদের কথা কে বলবে? তাদের বিষয়ে এই সরকারের ভূমিকা কী?”

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারেরও ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি৷

DW বাংলা

জুলাই শহিদের প্রকৃত সংখ্যা কত?

০৭:০০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি৷ সরকারি গেজেটের সঙ্গে মিল নেই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের৷ উপদেষ্টা যখন জাতিসংঘকে উদ্ধৃত করছেন, তখন ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলছেন এনসিপির নেতারা৷

এনসিপি নেতাদের ভাষ্যেও গড়মিল

৩০ এপ্রিল ঢাকার মিরপুরে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ৷ জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি৷

সেদিন কর্মসূচি সম্পর্কে সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘… জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে সহস্রাধিক, ১৪শরও বেশি শহিদ হয়েছে এবং হচ্ছে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে আহত করেছে, এই সবগুলা, এই যে গণহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, এই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে বিচার নিশ্চিত করাসহ এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল, নিবন্ধন বাতিল এবং এই জুডিশিয়ারি পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের জন্য আমরা আগামী ২ তারিখ (২ মে) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বিক্ষোভ মিছিল করবো৷’

তার কথায় পাওয়া গেল, ‘জুলাই শহিদ’ এর সংখ্যা এক হাজার চারশ’রও বেশি৷

ওইদিন বগুড়া সফরে গিয়ে এক রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বক্তব্য রাখেন এনসিপি-র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম৷ তিনিও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক৷ সেদিনের বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন তিনি৷

সারজিস বলেন, ‘‘এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ২৪-এর জুলাইয়ে হাজারের অধিক আমাদের ভাই-বোনকে খুন করেনি, এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ছিল ব্যাপারটি এমন নয়, এই আওয়ামী লীগ পুরো বাংলাদেশে জেলার নাম ধরে, ব্যক্তির নাম ধরে, দলের নাম ধরে বৈষম্য করেছে৷”

সারজিসের বক্তব্যে পাওয়া গেছে, ‘জুলাই শহিদ’-এর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি৷

২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের সংখ্যা ঘোষণা করে৷ সেদিন উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন শহিদের সংখ্যা এক হাজার ৫৮১, তবে সেদিন তারা জানিয়েছিলেন, সংখ্যাটি চূড়ান্ত নয়৷

শহিদের সংখ্যা ‘সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব ফয়েজ আহম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার এখন পর্যন্ত ৮৩৪ জনের বিষয়ে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছে৷ সেই মর্মে সরকারি গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদেরকে ‘জুলাই শহিদ’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ অন্যান্য আরো অনেকগুলো দাবি এবং আরো অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে, আরো অনেকগুলো মৃত্যুর বিষয়ে সরকার এখনো তদন্ত করছে, যাচাই-বাছাই করছে৷”

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়টিকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মতো সংস্থা থেকে ১৪শ সংখ্যাটা যখন সামনে আসে, এটা আসলে অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ সংখ্যা হিসাবে এই কথাটা আলোচনায় এসেছে৷ সেজন্য জাতিসংঘের বিষয়টা সংখ্যা হিসাবে নানা বক্তব্য, বয়ানের মধ্য দিয়ে আসছে৷ কিন্তু ‘জুলাই শহিদ’ কারা এবং কত জন সেটা চূড়ান্ত হবে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে৷ ৮৩৪ জনের নাম ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘(জুলাই শহিদ) এই সংখ্যাটা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন৷ এটার সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বিমত নেই৷ এই লক্ষ্যে সরকার কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে৷”

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি রয়েছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সরকার চায়, জুলাই শহিদের সংখ্যা নিয়ে যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিতর্ক না থাকে৷ বিতর্কহীন, বিতর্কমুক্তভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার৷”

‘জুলাই আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে’

পুরো বিষয়টিকে সরকারের ‘চরম ব্যর্থতা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ছিল, এই ব্যর্থতাটাকে না দেখানো৷ এটাকে সফল করা কোনো কঠিন কাজ ছিল না৷ খুব সহজ একটা কাজ ছিল৷ সেই সহজ কাজটাকে তারা এতটাই কঠিন করে তুলছে, এটা আগামীতে জটিল আকার ধারণ করবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘স্বল্পতম সময়ে ছিনতাই হওয়া আন্দোলনের নাম বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলন৷ এ আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে৷ এই আন্দোলনকে নিয়ে এখন ব্যবসা হচ্ছে৷’

জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনের সুফল ভোগীদের নিয়েও প্রশ্ন আছে এই সিনিয়র সাংবাদিকের৷ তিনি বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের  সুফল যারা ভোগ করছেন, তারা এই আন্দোলনের যারা শহিদ এবং আহত, তাদের সঙ্গে মশকরা করছেন৷ এর একমাত্র কারণ হলো, এই আন্দোলনের ফলে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছেন, তাদের ৮০ পার্সেন্ট লোকের এই আন্দোলনের সঙ্গে কোনো ধরনের মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না৷ ইনক্লুডিং ডক্টর ইউনূস৷”

‘‘আন্দোলনের প্রকৃত চেতনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই” বলে মন্তব্য করতেও পিছপা হননি মাসুদ কামাল৷ সরকারি ভাষ্যে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার নিয়েও সমালোচনা করেছেন তিনি৷

মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘কত হাস্যকর অবস্থায় আছি! সরকার এই দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান৷ সেই সরকারের একজন উপদেষ্টা নিহতের তালিকার জন্য নির্ভর করছে বিদেশের একটা প্রতিষ্ঠানের উপর৷ এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?”

জাতিসংঘের কয়েকজন প্রতিনিধি মিলে যদি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে, সরকার কেন পারলো না?—এমন প্রশ্ন রেখে মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘সরকারকে কেন অন্য একটা সংস্থার অনুমিত তালিকার উপর নির্ভর করতে হয়? কারণ, সরকার পারে নাই, সরকারের ব্যর্থতা৷”

৫ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যারা সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন, তাদের হত্যার বিচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই সাংবাদিক৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই দশ দিনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী? ওই দশ দিনে যারা মারা গেছেন, তারা কি মানুষ নন? তাদের পরিবার নেই? ওদের কি দুঃখ নেই? তাদের কথা কে বলবে? তাদের বিষয়ে এই সরকারের ভূমিকা কী?”

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারেরও ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি৷

DW বাংলা