সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রসঙ্গ ও বিবৃতি
বাংলাদেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে হেফাজত‑ই‑ইসলামসহ কয়েকটি উগ্রবাদী সংঘের হুমকি‑ধমকির ঘটনায় ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা কমিশনকে অবলীলায় “বন্ধ” করার ধরনের দাবি‑হুমকিকে নারী‑বিদ্বেষ ছড়ানো ও সার্বিকভাবে অরাজকতা উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন এবং তাৎক্ষণিক কঠোর আইনি পদক্ষেপসহ সরকারের স্পষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
উগ্র প্রচার ও হুমকির চরিত্র
- সাম্প্রতিক সমাবেশ‑বক্তৃতায় কমিশন বাতিল না হলে সরকার উৎখাত, দেশ অচল বা দেশজুড়ে আগুন লাগানোর মতো উসকানিমূলক ঘোষণা এসেছে।
- বক্তারা কমিশনের সুপারিশ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা এড়িয়ে সরাসরি “কমিশন বাতিল” দাবি করে নারী‑বিদ্বেষী বক্তব্য ছড়াচ্ছেন।
- বিবৃতিদাতা নাগরিকদের মতে, বিষয়টি শুধু আপত্তিকর নয়; তা সংবিধান‑সদৃঢ় বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে খাটো ও জুলাইয়ের ছাত্র‑জনতার অভ্যুত্থানের চেতনাকে অবমাননা করে।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি—যা হতাশাজনক। বক্তারা মনে করেন,
সরকারকে অবিলম্বে স্পষ্ট করে জানাতে হবে—কমিশন ঘিরে উসকানি ও হুমকির বিরুদ্ধে তার অবস্থান।
উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও তাঁদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেন এই কমিশন জবরদস্তি বাতিলের চেষ্টা?
- কমিশনের সুপারিশে নারীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ—এ‑সব মৌলিক অধিকারের বিস্তার রয়েছে।
- উগ্র গোষ্ঠীগুলোর উদ্দেশ্য, বিবৃতিদাতাদের ভাষায়, “নারীসহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অবদমিত রেখে গোষ্ঠীগত, কায়েমি স্বার্থ রক্ষা”।
- কোনো সুপারিশ নিয়ে আপত্তি থাকলে যুক্তি‑প্রমাণ দিয়ে সংশোধন‑বাতিলের দাবি তোলা সম্ভব; কিন্তু কমিশন বাতিল ও সহিংস হুমকি কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।
নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান
- জনগণকে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
- নারী‑অধিকারসহ সকল নাগরিকের সমঅধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
- সরকারের পাশাপাশি পুলিশ‑সেনাবাহিনীসহ সব রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা
মোট ৫০ জন স্বাক্ষর করেছেন—অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, টিআই‑বির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, শাহীন আনাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, আইনজীবী জেড আই খান পান্না‑সহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
(পূর্ণ তালিকা: আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, ড. ইফতেখারুজ্জামান, রাশেদা কে. চৌধুরী, শাহীন আনাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শামসুল হুদা, ড. সামিনা লুৎফা, জেড আই খান পান্না, ড. শহিদুল আলম, তাসলিমা ইসলাম, প্রফেসর ডা. নায়লা জামান খান, সুব্রত চৌধুরী, রোবায়েত ফেরদৌস, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, ড. শাহনাজ হুদা, ড. সুমাইয়া খায়ের, তাসনীম সিরাজ মাহমুব, ড. ফিরদৌস আজীম, ড. পারভীন হাসান, ড. জোবাইদা নাসরীন, রেজাউল করিম চৌধুরী, জাকির হোসেন, পাভেল পার্থ, রেহনুমা আহমেদ, সায়দিয়া গুলরুখ, মনীন্দ্র কুমার নাথ, ড. রুশাদ ফরিদি, ড. সাদাব নূর, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, সাঈদ আহমেদ, অরূপ রাহী, জান্নাতুল মাওয়া, নাসরিন সিরাজ, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, অধ্যাপক মাসুদ ইমরান মান্নু, আতিকা রোমা, অ্যাডভোকেট দিলরুবা শারমিন, ড. ফারজনা আলম, ফাতেমা শুভ্রা, লায়লা পারভীন, হানা শামস, ফারহানা শারমীন ইমু, ড. ইলোরা শেহাবুদ্দীন, ডা. সাদিয়া চৌধুরী, হানা শামস আহমেদ, মুক্তাশ্রী চাকমা)
উপরোক্ত নাগরিকগন –নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিদাতারা স্পষ্ট করেছেন—নারী‑অধিকার রক্ষা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দমন এখনই বৃহত্তর জাতীয় প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্ব হলো অবিলম্বে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এবং উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সমাজের সকল সচেতন শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করার আহ্বানে তাঁরা ঐক্যমত।
Sarakhon Report 



















