০৮:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪ রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে ভারত চীন সীমান্তের কাছে নতুন সামরিক ঘাঁটি উদ্বোধন: কৌশলগত সক্ষমতা আরও জোরদার আগে গণভোট, ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবে না জামায়াত উমর নাবির শেষ দিনের রহস্য: তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন সূত্র মালয়েশিয়ার পাম অয়েল এত বেশি কেন ব্যবহার হয়? ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর চরম সতর্কতা—নিরাপত্তা ঘিরে আতঙ্কে নাগরিকরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা

ভারতের ওয়ার হিরো সোফিয়া কুরেশি

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৪:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 138

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

শৈশব ও সামরিক উত্তরাধিকার

গুজরাটের ভারোদারায় জন্ম নেওয়া সোফিয়া কুরেশি ছোটবেলা থেকেই সেনানিবাসের শৃঙ্খলা আর দেশপ্রেমের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তাঁর দাদু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে ১৯৭১‑এর ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, বাবা ইএমই কোরে চাকরি করেছেন, আর এখন স্বামী মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রিতে কর্মরত—তৃতীয় প্রজন্মের সেনাসন্তান হয়ে ওঠা তাই ছিল বলা যায় পূর্বনির্ধারিত।

সেনাবাহিনীতে যোগদান ও প্রশিক্ষণ

বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৯৯‑এ চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমি (ওটিএ) থেকে কমিশন পান সোফিয়া। সিগন্যাল কোরে যুক্ত হয়ে দ্রুতই প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে তিনি নজর কেড়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক আঙিনায় ইতিহাস: ফোর্স১৮

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে, ২০১৬‑র ‘ফোর্স ১৮’ বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় (১৮টি আসিয়ান প্লাস দেশের অংশগ্রহণ) ৪০ সদস্যের ভারতীয় কন্টিনজেন্টের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট‑কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি। কোনও ভারতীয় নারী অফিসারের জন্য এটি ছিল প্রথম—আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ‑পূর্ব এশিয়ায় একটি মাইলফলক।

অপারেশন সিন্দুর’-এর মুখ ও মস্তিষ্ক

৭ মে ২০২৫‑এর ভোররাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান‑শাসিত কাশ্মীরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদী মিসাইল হামলা চালায় ভারত। এই ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পরিকল্পনা, সমন্বয় ও পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ব্রিফ করার দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ঠোঁটকাটা স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দেন, “যদি প্রয়োজন পড়ে, ভারত দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে আবারও জবাব দেবে।” তাঁর এই নেতৃত্ব জাতীয় নিরাপত্তা বিতর্কে নারীর দৃশ্যমানতা নতুন উচ্চতায় তুলেছে।

নারী‑অগ্রগতির পথপ্রদর্শক

সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশন, সামনের সারির দায়িত্ব ও লিঙ্গ‑সমতার প্রশ্নে সোফিয়ার ক্যারিয়ার এক অনুপ্রেরণা—বিশেষত তরুণীদের জন্য। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি সরাসরি বলেন, “স্বপ্ন দেখুন, নিয়ম ভাঙুন, আর সৈনিক হতে ভয় পাবেন না।”

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

  • রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রশংসাপত্র
    •কর্পস অফ সিগন্যালস ‘সর্বোত্তম কোম্পানি কমান্ডার’ পুরস্কার
    • আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা প্রচেষ্টায় বিশেষ অবদান সম্মাননা (আসিয়ান প্লাস, ২০১৬)

 

ভবিষ্যতের দিগন্ত

আজকের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে প্রযুক্তি, দ্রুত সিদ্ধান্ত আর অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব—তিনটি স্তম্ভই প্রতিফলিত হয় সোফিয়া কুরেশির জীবন ও সাফল্য’র মধ্যে দিয়ে। তাঁর সামনে এখন ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ, আর সে দেশের সামনে আছে একটি সর্বাঙ্গীণ, লিঙ্গ‑সমতার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয়।

সোফিয়া কুরেশির কাহিনি মনে করিয়ে দেয়সাহস ও যোগ্যতা লিঙ্গ পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়দেশপ্রেম আর পেশাদারি যেখানে মিলিত হয়সেখানেই জন্ম নেয় সত্যিকারের বীর।

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪

ভারতের ওয়ার হিরো সোফিয়া কুরেশি

০৩:৪৪:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

 সারাক্ষণ রিপোর্ট

শৈশব ও সামরিক উত্তরাধিকার

গুজরাটের ভারোদারায় জন্ম নেওয়া সোফিয়া কুরেশি ছোটবেলা থেকেই সেনানিবাসের শৃঙ্খলা আর দেশপ্রেমের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তাঁর দাদু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে ১৯৭১‑এর ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, বাবা ইএমই কোরে চাকরি করেছেন, আর এখন স্বামী মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রিতে কর্মরত—তৃতীয় প্রজন্মের সেনাসন্তান হয়ে ওঠা তাই ছিল বলা যায় পূর্বনির্ধারিত।

সেনাবাহিনীতে যোগদান ও প্রশিক্ষণ

বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৯৯‑এ চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমি (ওটিএ) থেকে কমিশন পান সোফিয়া। সিগন্যাল কোরে যুক্ত হয়ে দ্রুতই প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে তিনি নজর কেড়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক আঙিনায় ইতিহাস: ফোর্স১৮

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে, ২০১৬‑র ‘ফোর্স ১৮’ বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় (১৮টি আসিয়ান প্লাস দেশের অংশগ্রহণ) ৪০ সদস্যের ভারতীয় কন্টিনজেন্টের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট‑কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি। কোনও ভারতীয় নারী অফিসারের জন্য এটি ছিল প্রথম—আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ‑পূর্ব এশিয়ায় একটি মাইলফলক।

অপারেশন সিন্দুর’-এর মুখ ও মস্তিষ্ক

৭ মে ২০২৫‑এর ভোররাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান‑শাসিত কাশ্মীরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদী মিসাইল হামলা চালায় ভারত। এই ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পরিকল্পনা, সমন্বয় ও পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ব্রিফ করার দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ঠোঁটকাটা স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দেন, “যদি প্রয়োজন পড়ে, ভারত দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে আবারও জবাব দেবে।” তাঁর এই নেতৃত্ব জাতীয় নিরাপত্তা বিতর্কে নারীর দৃশ্যমানতা নতুন উচ্চতায় তুলেছে।

নারী‑অগ্রগতির পথপ্রদর্শক

সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশন, সামনের সারির দায়িত্ব ও লিঙ্গ‑সমতার প্রশ্নে সোফিয়ার ক্যারিয়ার এক অনুপ্রেরণা—বিশেষত তরুণীদের জন্য। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি সরাসরি বলেন, “স্বপ্ন দেখুন, নিয়ম ভাঙুন, আর সৈনিক হতে ভয় পাবেন না।”

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

  • রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রশংসাপত্র
    •কর্পস অফ সিগন্যালস ‘সর্বোত্তম কোম্পানি কমান্ডার’ পুরস্কার
    • আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা প্রচেষ্টায় বিশেষ অবদান সম্মাননা (আসিয়ান প্লাস, ২০১৬)

 

ভবিষ্যতের দিগন্ত

আজকের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে প্রযুক্তি, দ্রুত সিদ্ধান্ত আর অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব—তিনটি স্তম্ভই প্রতিফলিত হয় সোফিয়া কুরেশির জীবন ও সাফল্য’র মধ্যে দিয়ে। তাঁর সামনে এখন ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ, আর সে দেশের সামনে আছে একটি সর্বাঙ্গীণ, লিঙ্গ‑সমতার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয়।

সোফিয়া কুরেশির কাহিনি মনে করিয়ে দেয়সাহস ও যোগ্যতা লিঙ্গ পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নয়দেশপ্রেম আর পেশাদারি যেখানে মিলিত হয়সেখানেই জন্ম নেয় সত্যিকারের বীর।