সারাক্ষণ রিপোর্ট
ঋণ মাফের পক্ষে প্রচারণা
যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় ওয়াশিংটনের টেলিফোন ডিরেক্টরিতে ‘অ্যাসোসিয়েশন’ নামে অনেক লবিং সংস্থার তালিকা থাকত—যারা বিভিন্ন খাত যেমন বাস, টর্ট সংস্কার বা খাবারের জন্য কাজ করত। কিন্তু ছাত্রদের ঋণ পরিশোধ না করার পক্ষে কাজ করা কোনো সংস্থার কথা তখন ভাবা যেত না।
এখন সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে Student Borrower Protection Center নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মূল লক্ষ্য হলো—১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ছাত্র ঋণ থেকে শিক্ষার্থীদের দায়মুক্ত রাখা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত: ঋণ ফেরত দাও
প্রথম ট্রাম্প প্রশাসন করোনা মহামারির সময় ছাত্র ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন এসে আবার তা চালু করেছে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চাপ দেওয়া হচ্ছে যেন তারা তাদের সাবেক শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করে—নইলে ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরা আর কোনো ঋণ পাবে না।
ঋণ পরিশোধে ভয়াবহ বাস্তবতা
দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়—মহামারির পর ঋণ পরিশোধ বন্ধ রেখেছে এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। প্রায় ১ কোটি ঋণগ্রহীতা হয় ইতোমধ্যে ডিফল্ট করেছে, নয়তো ডিফল্টের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষা বিভাগের হিসেবে, কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ঋণগ্রহীতা ডিফল্টে পড়তে পারে—অর্থাৎ তারা ন্যূনতম ৯ মাস পেমেন্ট করেনি।
অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রেও যদি আপনি ডিফল্ট করেন, যেমন গাড়ির কিস্তি বা হাউজিং লোন, তবে আপনাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়—গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়, ঘর হাতছাড়া হয়, এমনকি আয় থেকেও টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্র ঋণের বেলায় অনেকেই এর মাফ চায়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়: ঋণ মাফের ক্ষমতা নেই প্রেসিডেন্টের
সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ ভোটে রায় দিয়েছে—প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছাত্র ঋণ মাফের সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী, কারণ এটি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া হয়েছে। তবুও তিনি একাধিকবার মাফের চেষ্টা করেছেন।
এরই মধ্যে শিক্ষা বিভাগ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। প্রায় ২ লাখ ঋণখেলাপিকে জানানো হয়েছে যে, তাদের ট্যাক্স রিফান্ড এবং ফেডারেল বেনিফিট কেটে নেওয়া হতে পারে ঋণ আদায়ের জন্য।
সমাধান কি সম্ভব?
ধরা হয়, স্নাতকপ্রাপ্তরা কোনো না কোনো কাজ করছেন, যাতে তাদের সামান্য হলেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকা উচিত। সরকার চাইলেই তাদের সঙ্গে সহজ কিস্তির চুক্তি করতে পারে। এমনকি আয়কর বিভাগও তা করে, যদিও সুদ ও জরিমানা আরোপ করে।
কেন কলেজ জীবন আকর্ষণ হারাচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার ব্যয় অত্যধিক বেড়েছে। তার ওপর বেশিরভাগ কলেজে একপাক্ষিক উদারনৈতিক আদর্শ শেখানো হয়, যা তরুণদের অনেককেই কলেজ অভিজ্ঞতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। অনেকেই এখন অনলাইন কোর্স নিচ্ছে, যা করোনার সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
Inside Higher Ed জানাচ্ছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্তত একটি অনলাইন কোর্সে নাম লিখিয়েছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৫৯ শতাংশ। ব্যয় ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে আরও বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন বা বিকল্প পথ বেছে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভালো ক্রেডিটের মূল্যবোধ হারাচ্ছে
আগে সময়মতো বিল পরিশোধ করা, নিজের সাধ্যের মধ্যে জীবনযাপন করা—এসবের সঙ্গে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ জড়িত ছিল। কিন্তু এখন যারা ঋণ নেয়, তাদের অনেকেই মনে করে তারা প্রতিশ্রুতি পালন না করলেও চলে। যদি ঋণ ফেরত না দেওয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আর কী দায়িত্ববোধ থাকবে?
এই প্রশ্নটাই এখন মার্কিন সমাজের সামনে।