সারাক্ষণ রিপোর্ট
বই পরিচিতি
ফিলিপ স্যান্ডসের ‘৩৮ লন্ড্রেস স্ট্রিট’ (৪৮০ পৃষ্ঠা, প্রকাশক: নফ/ডব্লিউঅ্যান্ডএন) নাৎসি অপরাধ, বিচারহীনতা ও আইনি সংগ্রামের উপর তাঁর তৃতীয় গবেষণা‐ভিত্তিক গ্রন্থ। এতে লেখক পিনোচেত আমলে ঘটে যাওয়া নির্যাতন আর নাৎসি কর্মকর্তা ওয়াল্টার রাউফের পালিয়ে চিলিতে বসবাসের বিস্ময়কর যোগসূত্র খুঁজে বের করেছেন।
দুই মহাক্ষাতক, এক বিশ্বাস
- অগুস্তো পিনোচেত – ১৯৭৩‑৯০ মেয়াদে চিলির সেনাশাসক; হাজারো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা বা গুম করেন।
- ওয়াল্টার রাউফ – এসএস কর্মকর্তা; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চলমান গ্যাসভ্যান উদ্ভাবনে নেতৃত্ব, আনুমানিক এক লাখ মানুষকে হত্যার দায়ী।
দুজনেই জার্মান সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন, কমিউনিজমকে ঘৃণা করতেন এবং শেষ পর্যন্ত আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াননি।
রাউফের চিলি অধ্যায়
যুদ্ধ শেষে ইতালির এক বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে রাউফ প্রথমে একুয়াডর, পরে পিনোচেতের আহ্বানে চিলির দক্ষিণের পুন্তা আরেনাসে এসে কিঙ্গ্‑ক্র্যাব ক্যানিং কারখানা চালান। স্থানীয় বহু বাসিন্দা তাঁকে “ভদ্রলোক” মনে করত, এমনকি সেসময়ের মেয়রও তাঁকে ‟সমস্যাহীন নাগরিক” বলেছিলেন।
নির্যাতনে রাউফের হাত রয়েছে?
সান্তিয়াগোর ৩৮ লন্ড্রেস স্ট্রিট ভবন ছিল গোপন আটক ও নির্যাতন কেন্দ্র। স্যান্ডস বেঁচে ফেরা ভুক্তভোগী ও সাবেক গুপ্ত পুলিশদের খুঁজে তাঁদের স্মৃতিচারণ জুড়েছেন—কারও কারও মতে রাউফ সেখানে সরাসরি পরামর্শদাতা ছিলেন। লেখক পাঠককে নিজেই সাক্ষ্যগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বিচার করতে আহ্বান করেন।
ব্যক্তিগত ছোঁয়া
স্যান্ডসের পরিবারের কিছু ইহুদি সদস্য সম্ভবত রাউফের গ্যাসভ্যানে নিহত। তিনি আরও জানেন, পিনোচেতের হাতে নিহত এক জাতিসংঘ কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার বন্ধন আছে। তবুও তিনি তথ্য–প্রমাণের প্রতি কৌতূহলী গবেষকের দৃষ্টিতে অটল।
লন্ডনে পিনোচেত প্রত্যার্পণ নাটক
১৯৯৮‑৯৯ সালে লন্ডনে চিকিৎসাধীন পিনোচেতকে স্পেনে পাঠানোর আইনি লড়াইয়ে স্যান্ডস নিজেও (ব্যারিস্টার পরিচয়ে) ক্ষুদ্র ভূমিকা রেখেছিলেন। এটি ছিল “সর্বজনীন বিচার” নীতিতে বিদেশে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রথম গ্রেপ্তারের ঘটনা। শেষ পর্যন্ত “স্বাস্থ্যগত” কারণ দেখিয়ে তাঁকে চিলিতে ফিরতে দেওয়া হয়—টারমাকে নেমেই হুইলচেয়ার ত্যাগ করে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।
সীমিত হলেও আইনের মূল্য
- পিনোচেত ২০০৬‑এ বিচার শুরুর আগেই মারা যান।
- রাউফ ১৯৮৪‑তে সান্তিয়াগোতেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
তবু বইটি দেখায়, পিনোচেত গ্রেপ্তারকাণ্ড চিলির সুপ্রিম কোর্টকে ১৯৭৮ সালের সামরিক ক্ষমা আইনের বাইরে মানবাধিকার মামলা গ্রহণে প্রভাবিত করে; বহু সেনা ও গুপ্ত পুলিশ শেষ পর্যন্ত সাজা পায়।
“ন্যায়বিচার সীমিত”, স্বীকার করেন স্যান্ডস, কিন্তু তাঁর অনুসন্ধান প্রমাণ করে যে ইতিহাস অনুসন্ধানের মাধ্যমেও বিচার আংশিক হলেও প্রতিষ্ঠা পায়। ‘৩৮ লন্ড্রেস স্ট্রিট’ পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেয়—অপরাধী বাঁচলেও সত্য চাপা থাকে না, আর আইনি‑স্মৃতির দীর্ঘ ছায়া একদিন না একদিন অপরাধকে আলোকিত করবেই।