রাহুল সিংহ, নয়াদিল্লি | ১১ মে ২০২৫
অভিযান শুরুতেই নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করে ভারত, পাকিস্তান ও পাক‑অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) নয়টি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দেয়।
মার্কিন মধ্যস্থতায় সুনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি আপাতত ভারত‑পাকিস্তানকে সরাসরি গুলিবিনিময় থেকে বিরত রেখেছে। তবে ৭ মে ভোরে শুরু হওয়া ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’‑এর কারণে গত চার দিনে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, সুনির্দিষ্ট স্মার্ট অস্ত্র, কামিকাজে ড্রোন ও আর্টিলারি গোলার সম্মিলিত ব্যবহারে পাকিস্তানের একাধিক সন্ত্রাসী ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে, আর পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা আঘাত হানার চেষ্টা করলেও তাতে তেমন সাফল্য পায়নি।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও কাগজে‑কলমে সংঘর্ষ বিরতি বড় ধরনের যুদ্ধ বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়েছে। ২২ এপ্রিল পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করে বলে ঘটনাপ্রবাহ নজরে রাখা কর্মকর্তারা জানান।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমরা সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছি, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেঙেছি এবং কয়েকটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করেছি। গত চার দিন ভারতীয় বাহিনীর সফল অভিযানে পাকিস্তানের অধিকাংশ পাল্টা আক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে।”
মাত্র ২৬ মিনিটের সুনির্দিষ্ট হামলায় পাক ও পিওকে‑র নয়টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস হয়; এতে প্রায় ১০০ জঙ্গি নিহত হয় বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানান—যদিও সরকার আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। লক্ষ্যগুলো নির্ধারিত হয় কঠিন গোয়েন্দা তথ্য ও অতীত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে।
লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) পেরিয়ে জঙ্গি শিবিরগুলোর পাঁচটি পিওকে‑তে ৯‑৩০ কিলোমিটার ভেতরে, আর বাকি চারটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে ৬‑১০০ কিলোমিটার দূরে ছিল।
হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল রাফাল‑উড়োজাহাজ থেকে ছোড়া স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল ও হ্যামার স্মার্ট বোমা কিট, এম‑৭৭৭ হাউইটজার থেকে নিক্ষিপ্ত এক্সক্যালিবার গোলা এবং লুইটারিং মিউনিশন তথা কামিকাজে ড্রোন। এতে পাকিস্তান দিশেহারা হয়ে তড়িঘড়ি পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারেনি।
পরের রাতে পাকিস্তান ১৫টি ভারতীয় শহরের সামরিক স্থাপনা লক্ষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করলে ভারত সেগুলো ব্যর্থ করে দেয় এবং পাল্টা হামলায় লাহোর ও করাচিসহ বিভিন্ন জায়গায় পাক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে।
চার দিনের লড়াইয়ে ভারত এস‑৪০০ ট্রায়ম্ফ, দেশীয় আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, বরাক‑৮, নানা ধরনের অ্যান্টি‑ড্রোন সিস্টেমসহ সমন্বিত রাডার ও কমান্ড‑কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পাকিস্তানের আকাশ হুমকি মোকাবিলা করে।
এলওসি বরাবর গোলাগুলিতে উভয়পক্ষেই সৈন্য ও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
৮‑৯ মে রাতের মাঝামাঝি পাকিস্তান লেহ, জম্মু, বঠিন্ডা থেকে শুরু করে পশ্চিমের সির ক্রিক পর্যন্ত ভারতের ৩৬টি স্থানে ৩০০‑৪০০টি তুর্কি‑উৎপাদিত আসিসগার্ড সোগার সশস্ত্র ড্রোন পাঠায়; এসবের বেশির ভাগই ভারতীয় বাহিনী ভূপাতিত করে এবং পাল্টা হামলায় পাক আকাশ প্রতিরক্ষা লক্ষ্যবস্তু হয়।
পরের দিন পাকিস্তান এলওসি ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত ধরে ২৬টি স্থানে ড্রোন হামলা চালালে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সেগুলোও ধ্বংস হয়।
১০ মে ভোরে পাকিস্তানের আটটি সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর সুনির্দিষ্ট আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত অস্ত্রের আঘাতে বিমানঘাঁটি, রাডার ইউনিট ও গোলাবারুদ ডাম্প গুঁড়িয়ে যায়। এতে রফিকি, মুরিদ, চাকলালা, রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর, চুনিয়ান, পাসরুর ও শিয়ালকোটের সামরিক স্থাপনা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরুর পর দুই বাহিনীর সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ।
যুদ্ধবিরতির পর ব্রিফিংয়ে উইং কমান্ডার ব্যমিকা সিংহ বলেন, “স্কারদু, সারগোধা, জেকাবাবাদ ও ভোলারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাক বিমানঘাঁটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র ও রাডার হারানোর ফলে তাদের আকাশসীমা রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এলওসি‑র ওপারে সুনির্দিষ্ট হামলায় সামরিক অবকাঠামো, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে তাদের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক সক্ষমতা ভেঙে পড়েছে।”