০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • 53

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হেষ্টিংসেরও একজন ফারসী মুন্সী ছিলেন। যাহা হউক, এই সমস্ত কারণে, গঙ্গা-গোবিন্দ কান্তবাবু অপেক্ষা উপযুক্ত হওয়ায় এবং কান্তবাবু কাৰ্য্য করিতে অস্বীকৃত হওয়ায়, হেষ্টিংস গঙ্গাগোবিন্দকে প্রকাশ্য দেওয়ান এবং কান্ত বাবুকে স্বকীয় কার্য্যসমূহের দেওয়ান বা বেনিয়ান নিযুক্ত করেন।

পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, কোম্পানী দেওয়ানী গ্রহণ করিয়া মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়ের উপর রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করেন। ইহারা যে কেবল রাজস্ববিষয়ে তত্ত্বাবধান করিতেন, এমন নহে; অধিকন্তু পুলীশ ও বিচার প্রভৃতির ভারও ইহাদের হস্তে ন্যস্ত ছিল এবং রেজা খাঁকে নবাবের পারিবারিক কাৰ্য্যসমূহেরও পরিদর্শন করিতে হইত। দেওয়ানী গ্রহণের সময় এরূপ নির্দ্ধারিত হয় যে, কোম্পানী কেবল দেওয়ানীপদে নিযুক্ত হইয়া রাজস্ববিষয়ে নিযুক্ত থাকিবেন; কিন্তু নাজিমী বা ফৌজদারী ও বিচারসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের নবাবই কর্তা থাকিবেন। মহম্মদ রেজা খাঁ উভয় দিকের ভার প্রাপ্ত হইয়া, নায়েক দেওয়ান ও নায়েব নাজিম নিযুক্ত হইলেন; প্রকৃত প্রস্তাৰে তিনিই দেশের দণ্ডমণ্ডের কৃর্তা হইয়া উঠিলেন।

তাঁহারই হস্তে রাজস্ব, তাঁহারই হস্তে বিচার, তাঁহারই হস্তে শাসন। তিনি সকল বিষয়েই আপনার প্রভুত্ব দেখাইতে লাগিলেন। সেতাব রায়ের হস্তেও যে সকল ক্ষমতা প্রদত্ত হয়, তিনিও তাহার অপব্যবহার আরম্ভ করেন। এইরূপে তাঁহাদের নামে দেশের চারিদিকে ভীষণ কোলাহল উপস্থিত হইল। ক্রমশ: প্রকাশ পাইল যে, তাঁহারা কোম্পানীর রাজস্ববিভাগের অনেক টাকা নষ্ট করিয়াছেন। তখন তাঁহাদিগকে বন্দী করিয়া কলিকাতায় আনিবার আদেশ দেওয়া হইল। উভয় স্থানের সর্ব্বোচ্চ কৰ্ম্মচারীদিগকে বন্দী করিয়া আনায় দেশ মধ্যে হুলুস্থল পড়িয়া গেল।

১৭৭২ খৃঃ অব্দে কার্টিয়ার সাহেব পদত্যাগ করিয়া গেলে, হেষ্টিংস মান্দ্রাজ হইতে তাঁহার পদে গবর্ণর নিযুক্ত হইয়া আসেন। তিনি আসিয়াই ডিরেক্টারদিগের আদেশে, রেজা খাঁকে ধৃত করিয়া কলিকাতা পাঠাইবার জন্য মুর্শিদাবাদের তৎকালীন রেসিডেন্ট মীডল্টনকে আদেশ দিলেন। রেজা খাঁ তাঁহার বাসস্থান নেসাতবাগ হইতে ধৃত হইয়া, কলিকাতায় আসিলে, মীডল্টনের হস্তে রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার অর্পিত হয়। গঙ্গাগোবিন্দ ১৭৬৯ খৃঃ অব্দ হইতে স্বীয় ভ্রাতা রাধাকান্তের স্থলে রাজস্ববিভাগে কার্য্য করিতেছিলেন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯২)

১১:০০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হেষ্টিংসেরও একজন ফারসী মুন্সী ছিলেন। যাহা হউক, এই সমস্ত কারণে, গঙ্গা-গোবিন্দ কান্তবাবু অপেক্ষা উপযুক্ত হওয়ায় এবং কান্তবাবু কাৰ্য্য করিতে অস্বীকৃত হওয়ায়, হেষ্টিংস গঙ্গাগোবিন্দকে প্রকাশ্য দেওয়ান এবং কান্ত বাবুকে স্বকীয় কার্য্যসমূহের দেওয়ান বা বেনিয়ান নিযুক্ত করেন।

পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, কোম্পানী দেওয়ানী গ্রহণ করিয়া মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়ের উপর রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করেন। ইহারা যে কেবল রাজস্ববিষয়ে তত্ত্বাবধান করিতেন, এমন নহে; অধিকন্তু পুলীশ ও বিচার প্রভৃতির ভারও ইহাদের হস্তে ন্যস্ত ছিল এবং রেজা খাঁকে নবাবের পারিবারিক কাৰ্য্যসমূহেরও পরিদর্শন করিতে হইত। দেওয়ানী গ্রহণের সময় এরূপ নির্দ্ধারিত হয় যে, কোম্পানী কেবল দেওয়ানীপদে নিযুক্ত হইয়া রাজস্ববিষয়ে নিযুক্ত থাকিবেন; কিন্তু নাজিমী বা ফৌজদারী ও বিচারসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের নবাবই কর্তা থাকিবেন। মহম্মদ রেজা খাঁ উভয় দিকের ভার প্রাপ্ত হইয়া, নায়েক দেওয়ান ও নায়েব নাজিম নিযুক্ত হইলেন; প্রকৃত প্রস্তাৰে তিনিই দেশের দণ্ডমণ্ডের কৃর্তা হইয়া উঠিলেন।

তাঁহারই হস্তে রাজস্ব, তাঁহারই হস্তে বিচার, তাঁহারই হস্তে শাসন। তিনি সকল বিষয়েই আপনার প্রভুত্ব দেখাইতে লাগিলেন। সেতাব রায়ের হস্তেও যে সকল ক্ষমতা প্রদত্ত হয়, তিনিও তাহার অপব্যবহার আরম্ভ করেন। এইরূপে তাঁহাদের নামে দেশের চারিদিকে ভীষণ কোলাহল উপস্থিত হইল। ক্রমশ: প্রকাশ পাইল যে, তাঁহারা কোম্পানীর রাজস্ববিভাগের অনেক টাকা নষ্ট করিয়াছেন। তখন তাঁহাদিগকে বন্দী করিয়া কলিকাতায় আনিবার আদেশ দেওয়া হইল। উভয় স্থানের সর্ব্বোচ্চ কৰ্ম্মচারীদিগকে বন্দী করিয়া আনায় দেশ মধ্যে হুলুস্থল পড়িয়া গেল।

১৭৭২ খৃঃ অব্দে কার্টিয়ার সাহেব পদত্যাগ করিয়া গেলে, হেষ্টিংস মান্দ্রাজ হইতে তাঁহার পদে গবর্ণর নিযুক্ত হইয়া আসেন। তিনি আসিয়াই ডিরেক্টারদিগের আদেশে, রেজা খাঁকে ধৃত করিয়া কলিকাতা পাঠাইবার জন্য মুর্শিদাবাদের তৎকালীন রেসিডেন্ট মীডল্টনকে আদেশ দিলেন। রেজা খাঁ তাঁহার বাসস্থান নেসাতবাগ হইতে ধৃত হইয়া, কলিকাতায় আসিলে, মীডল্টনের হস্তে রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার অর্পিত হয়। গঙ্গাগোবিন্দ ১৭৬৯ খৃঃ অব্দ হইতে স্বীয় ভ্রাতা রাধাকান্তের স্থলে রাজস্ববিভাগে কার্য্য করিতেছিলেন।