শ্রী নিখিলনাথ রায়
জমিদারগণ পূর্ব্বে আপনাদের ক্ষুদ্র উদর পরিপূরণের জন্য প্রজাদিগের উপর যাহা কিছু অত্যাচার করিত, এক্ষণে গবর্ণর ও তাঁহার অনুচরবর্গের বিশ্বগ্রাসী উদর পরিপূরণার্থ কিরূপ মাত্রায় অত্যাচার করিতে বাধ্য হইয়াছিল, তাহা সহজেই বুঝা যায়! যাহা হউক হেষ্টিংস প্রকাশ্যভাবে পাঁচসনা বন্দোবস্তের সদুদ্দেশ্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই পাঁচসনা বন্দোবস্তের কয়েক বৎসর পরে দশশালা, অবশেষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত স্থিরীকৃত হয়। জমিদারগণ কিস্তি কিস্তি রাজস্ব প্রদান করিতে অনুমতি প্রাপ্ত হন।
হেষ্টিংস সাহেব এই সময়ে গ্রামের মহাজনদিগের প্রতিও সুদের হার কম করিবার নিয়ম জারি করিয়া, হতভাগ্য কৃষকদিগকে তাহাদের কঠোর হস্ত হইতে মুক্ত কবিবার চেষ্টা করেন। কুসীদজীবী মহাজন-দিগের প্রকৃতি যে কসাইদিগের অপেক্ষাও ভীষণ, তাহা বোধ হয় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিবেন। পূর্ব্বে দেশীয় আমীনদিগের দ্বারা রাজস্ব-সংগ্রহ হইত; এক্ষণে তাহাদের স্থলে অধিকাংশ জেলায় ইংরেজ কালেক্টর নিযুক্ত হইলেন এবং কতকগুলি জেলা লইয়া এক একটি বিভাগের সৃষ্টি হইল; এক জন কমিশনারের উপর তাঁহাদের তত্ত্বাবধানের ভার ন্যস্ত হইল।
অদ্যাপি ঐরূপ নিয়ম প্রচলিত রহিয়াছে। পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হইতে রাজস্ব-সমিতি কলিকাতায় আনীত হইল এবং উভয়ে এক হইয়া একটি মাত্র রাজস্ব-সমিতি গঠিত হইল। ঐ রাজস্ব-সমিতির সহিতই গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের বিশেষ সম্বন্ধ; আমরা ক্রমে তাহা দেখাইতেছি। এইরূপে রাজস্বসম্বন্ধে বন্দোবস্ত করিয়া, হেষ্টিংস বিচারকার্য্যের ৰন্দোবস্তেও মনোনিবেশ করিলেন। প্রত্যেক জেলায় এক একটি দেওয়ানী আদালত স্থাপন করিয়া তাহার বিচারভার কালেক্টরদিগের হস্তে দেওয়া হইল; সুতরাং ইহাতে রাজস্ব ও বিচারের ভার একজনের হস্তেই পড়ে।
কলিকাতায় সদয় দেওয়ানী আদালত স্থাপিত হইল এবং কাউন্সিলের সভ্য ও সভাপতির দ্বারা তাহার কার্য্য সম্পন্ন হইতে লাগিল। কতকগুলি দেশীয় কর্মচারী উক্ত বিষয়ে তাঁহাদিগের সাহায্যার্থ নিযুক্ত হইলেন। সদর দেওয়ানী আদালতে, মফঃস্বল-দেওয়ানী আদালতের ৫০০ টাকার অধিক দাবীর আপীলের মীমাংসা হইত।
এইরূপে দেওয়ানী বিচারের বন্দোবস্ত হইলে, ফৌজদারী বিচারের বন্দোবস্ত আরম্ভ হইল। প্রত্যেক জেলায় এক একটি ফৌজদারী আদালত স্থাপিত হইয়া, একজন কাজীকে তাহার প্রধান পদে নিযুক্ত করা হয়।