সারাক্ষণ রিপোর্ট , ঢাকা, ১৮ মে ২০২৫
বর্তমান বাজারদর
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর ক্রিশি বাজার ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে—টমেটো ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই প্রতি কেজিতে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। পেঁপে ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, বেগুন ও পটল ৯০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে, শসা ৮৫ টাকা, মরিচ ৮০ টাকা, আর ডাঁটা ১০০–১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক ৮০ টাকার নিচে এখন কার্যত কোনো সবজি নেই।
পাইকারি বাজারের চিত্র
কারওয়ান বাজারের আড়তে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সাত‑আট দিনে রাজধানীতে সরবরাহ ১০–১২ শতাংশ কমে গেছে। ফলে পাইকারিতে যেসব সবজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, সেগুলোর দাম ৭০–৭৫ টাকায় উঠে খুঁচরা বাজারে ৯০ টাকা ছাড়িয়েছে। পেঁয়াজও এক মাসে ২০–২৫ টাকা বেড়ে ৫৫–৬০ টাকায় স্থির হয়েছে।
কেন বাড়ছে দাম
১. গ্রীষ্মের শুরুতেই প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেতের ফলন নষ্ট হয়েছে—সাভারের চাষিরা জানিয়েছেন, সেচের পানির অভাবে অনেক শাক‑সবজি ক্ষতিগ্রস্ত।
২. শীতকাল ও রমজানে কম দামে বিক্রি করে লোকসানে পড়েছে কৃষকরা; নতুন ফসল তুলতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, ফলে বাড়তি খরচ ভোক্তার ওপর পড়ছে।
৩. নির্দিষ্ট মৌসুমি সবজির সরবরাহ কমে গেলে মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদাররা মজুত করে বাড়তি মুনাফা করছেন বলে অভিযোগ।
ভোক্তার ভোগান্তি
খুলশী বেগম, রামপুরা বাজারের একজন ক্রেতা, বললেন, ‘গত মাসেও ৫০০ টাকায় সপ্তাহের বাজার হতো; এখন ৭০০ টাকাতেও হচ্ছে না।’ ডিএসসিসি‑র জনস্বাস্থ্য শাখার সর্বশেষ হিসাব বলছে, নিম্ন‑আয়ের পরিবারগুলোর মোট খাবার খরচের ৪৮ শতাংশ এখন শুধু সবজিতে চলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বাংলাদেশ কাঁচা‑পণ্য পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার মনে করেন, উৎপাদন‑ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়িয়ে কৃষকের খরচ কমানো ও পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এই ঊর্ধ্বগতি থামবে না। তিনি আরও বলেন, ‘সরবরাহ বাড়ালেই দাম স্বাভাবিক হতে শুরু করবে; তাই জেলা‑উপজেলায় কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও দ্রুত পরিবহনে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।’
সরকারি পদক্ষেপ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় Trading Corporation of Bangladesh (TCB)‑এর মাধ্যমে সহনীয় দামে টিসিবি ট্রাক সেল বাড়াতে এবং বাজার পর্যবেক্ষণ টিম সক্রিয় করতে নির্দেশ দিয়েছে। মিল‑বাজার কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলও আগামী এক মাস সরাসরি বাজারে গিয়ে দৈনিক দর সংগ্রহ করবে বলে সূত্র জানায়।
আগামী দিনের সম্ভাবনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জুনের মাঝামাঝি থেকে আগাম বর্ষা‑সবজি বাজারে এলে চাপ কিছুটা কমতে পারে। তবে জ্বালানি‑ব্যয় ও পরিবহন ভাড়া না কমলে ভোক্তারা খুব দ্রুত কোনো উল্লেখযোগ্য স্বস্তি পাবেন না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।