সারাক্ষণ রিপোর্ট
ব্রাজিলে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ায় বৈশ্বিক উদ্বেগ
২০২৫ সালের ১৬ মে ব্রাজিলের রিও গ্রান্ডে ডো সুল অঞ্চলের একটি বাণিজ্যিক পোলট্রি খামারে প্রথমবারের মতো মারাত্মক সংক্রামক বার্ড ফ্লু (HPAI, H5N1) শনাক্ত হয়। এই ঘটনার পরপরই চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া—যারা ব্রাজিল থেকে প্রচুর মুরগি আমদানি করে—তারা ব্রাজিল থেকে আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুরগি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের এই প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক পোলট্রি ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলছে। আক্রান্ত খামারে প্রায় ১৭,০০০ পাখি মারা গেছে বা নিধন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ জীবাণুনাশক কেন্দ্র ও স্যানিটারি বাধাসহ নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি
বাংলাদেশ ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালের মার্চ মাসে যশোরের একটি সরকারি পোলট্রি খামারে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ শনাক্ত করে। দেশে ঘনবসতিপূর্ণ পোলট্রি খামার ও ব্যাপক মুরগি ব্যবসা থাকায় এই রোগের বিস্তার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ “তৃতীয় অ্যাভিয়ান ও প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (NAPIP)” গ্রহণ করেছে, যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে জাতীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। পরিকল্পনাটি “ওয়ান হেলথ” দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য, প্রাণীর স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যকে একত্রিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত প্রস্তুতি
বার্ড ফ্লুর ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত:
১. নজরদারি জোরদার করা:
পোলট্রি খামার ও জীবিত পাখির বাজারে নিয়মিত নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে দ্রুত সংক্রমণ শনাক্ত ও প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।
২. জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
পরিবহন, খামার এবং বাজারসহ পুরো পোলট্রি সরবরাহ ব্যবস্থায় কড়া জৈব নিরাপত্তা প্রটোকল বাস্তবায়ন করা দরকার।
৩. জনসচেতনতা কার্যক্রম:
খামারি, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণকে বার্ড ফ্লুর ঝুঁকি ও প্রতিরোধের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।
৪. টিকাদান কর্মসূচি:
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে টিকা কার্যক্রম শুরু করার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা উচিত, যদিও বৈশ্বিক ভ্যাকসিন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে এবং বৈশ্বিক ভালো চর্চা সম্পর্কে অবহিত থাকতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।
এইসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু নিজের পোলট্রি শিল্পকেই রক্ষা করতে পারবে না, বরং জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পারবে।