০২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

রাজস্বে শক্ত ভরসা তামাক খাত: কৃষকদের জন্য পুনরায় উৎসাহের প্রস্তাব

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩০:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • 67

সারাক্ষণ রিপোর্ট

তামাক চাষে ভাটা পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় একটি নতুন বিতর্ক উঁকি দিচ্ছে—তামাক চাষ কি আবার উৎসাহিত করা উচিত? কারণ, তামাক খাত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। সরকার যদি সুপরিকল্পিতভাবে এই খাতকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাষে উৎসাহ দেয়, তবে কৃষি, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব—সবগুলো ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তামাক থেকে রাজস্ব: দেশের অর্থনীতির একটি স্তম্ভ

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যে আরোপিত শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর থেকে প্রতিবছর গড়ে ২৮,০০০ থেকে ৩২,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৯ শতাংশ এসেছে এই একক খাত থেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রাজস্ব অর্থের একটি বড় অংশ সরকারি বাজেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কৃষি খাতে তামাকের অবদান

তামাক চাষ দেশের প্রায় ৩ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারকে আয় দেয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও বান্দরবানে তামাক চাষের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।

তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের চুক্তিভিত্তিক চাষে বিভিন্ন প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেয়। ফলস্বরূপ, অনেকে এটি অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক মনে করেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে তামাক: রপ্তানির সম্ভাবনা

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৩০০-৫০০ কোটি টাকার তামাক কাঁচামাল ভারতে, চীন, পাকিস্তান ও ইউরোপীয় কিছু দেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিমুখী তামাক চাষে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি নতুন খাত খুলে যেতে পারে।

তামাক চাষে পুনরায় উৎসাহ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি

রাজস্ব ঘাটতি পূরণ:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারের রাজস্ব চাপে পড়েছে। তামাক চাষকে পুনরায় উৎসাহ দিলে একটি স্থিতিশীল রাজস্ব উৎস আবার সক্রিয় হতে পারে।

 কৃষকদের আয় নিরাপত্তা:
বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ও অনুন্নত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে তামাক একটি কার্যকর নগদ ফসল। তাদের জীবিকায় সরাসরি অবদান রাখে।

 চাহিদা এখনো স্থির:
দেশে তামাকজাত পণ্যের চাহিদা এখনো হ্রাস পায়নি। তাই বাজারে চাহিদা ও কৃষি উৎপাদনের ভারসাম্য রক্ষা করা গেলে দেশের ভিতরেই উৎপাদিত কাঁচামাল ব্যবহার করে মূল্য সংযোজন সম্ভব।

 

নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তামাক চাষ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করছি না, বরং নীতিগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাজস্ব আহরণ বজায় রাখার চেষ্টা করছি। যদি এই খাতের উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে একদিকে রাজস্ব কমবে, অন্যদিকে চোরাচালান ও বিদেশি পণ্যের আগ্রাসন বাড়তে পারে।”

পরামর্শ: নিয়ন্ত্রিত উৎপাদনসর্বোচ্চ রাজস্ব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক চাষ একেবারে বন্ধ না করে বরং নিয়ন্ত্রিত উৎপাদনউন্নত বাজার ব্যবস্থা, এবং শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তামাক খাতকে একটি অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

এছাড়া সরকার চাইলে রাজস্বের একটি অংশ জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, সচেতনতা ও বিকল্প কৃষি গবেষণায় ব্যয় করতে পারে, যাতে সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

তামাক চাষ দেশের জন্য একটি দ্বিমুখী সত্য—এটি যেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। তাই হঠাৎ করে উৎপাদন হ্রাস না করে, সুপরিকল্পিত নীতির মাধ্যমে এই খাতকে পুনরায় কার্যকর করে তুললে, রাজস্ব ও কৃষকের আর্থিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

রাজস্বে শক্ত ভরসা তামাক খাত: কৃষকদের জন্য পুনরায় উৎসাহের প্রস্তাব

১২:৩০:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

তামাক চাষে ভাটা পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় একটি নতুন বিতর্ক উঁকি দিচ্ছে—তামাক চাষ কি আবার উৎসাহিত করা উচিত? কারণ, তামাক খাত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। সরকার যদি সুপরিকল্পিতভাবে এই খাতকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাষে উৎসাহ দেয়, তবে কৃষি, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব—সবগুলো ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তামাক থেকে রাজস্ব: দেশের অর্থনীতির একটি স্তম্ভ

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যে আরোপিত শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর থেকে প্রতিবছর গড়ে ২৮,০০০ থেকে ৩২,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৯ শতাংশ এসেছে এই একক খাত থেকে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রাজস্ব অর্থের একটি বড় অংশ সরকারি বাজেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কৃষি খাতে তামাকের অবদান

তামাক চাষ দেশের প্রায় ৩ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারকে আয় দেয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও বান্দরবানে তামাক চাষের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।

তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের চুক্তিভিত্তিক চাষে বিভিন্ন প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেয়। ফলস্বরূপ, অনেকে এটি অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক মনে করেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে তামাক: রপ্তানির সম্ভাবনা

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৩০০-৫০০ কোটি টাকার তামাক কাঁচামাল ভারতে, চীন, পাকিস্তান ও ইউরোপীয় কিছু দেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিমুখী তামাক চাষে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি নতুন খাত খুলে যেতে পারে।

তামাক চাষে পুনরায় উৎসাহ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি

রাজস্ব ঘাটতি পূরণ:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারের রাজস্ব চাপে পড়েছে। তামাক চাষকে পুনরায় উৎসাহ দিলে একটি স্থিতিশীল রাজস্ব উৎস আবার সক্রিয় হতে পারে।

 কৃষকদের আয় নিরাপত্তা:
বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ও অনুন্নত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে তামাক একটি কার্যকর নগদ ফসল। তাদের জীবিকায় সরাসরি অবদান রাখে।

 চাহিদা এখনো স্থির:
দেশে তামাকজাত পণ্যের চাহিদা এখনো হ্রাস পায়নি। তাই বাজারে চাহিদা ও কৃষি উৎপাদনের ভারসাম্য রক্ষা করা গেলে দেশের ভিতরেই উৎপাদিত কাঁচামাল ব্যবহার করে মূল্য সংযোজন সম্ভব।

 

নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তামাক চাষ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করছি না, বরং নীতিগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাজস্ব আহরণ বজায় রাখার চেষ্টা করছি। যদি এই খাতের উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে একদিকে রাজস্ব কমবে, অন্যদিকে চোরাচালান ও বিদেশি পণ্যের আগ্রাসন বাড়তে পারে।”

পরামর্শ: নিয়ন্ত্রিত উৎপাদনসর্বোচ্চ রাজস্ব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক চাষ একেবারে বন্ধ না করে বরং নিয়ন্ত্রিত উৎপাদনউন্নত বাজার ব্যবস্থা, এবং শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তামাক খাতকে একটি অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

এছাড়া সরকার চাইলে রাজস্বের একটি অংশ জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, সচেতনতা ও বিকল্প কৃষি গবেষণায় ব্যয় করতে পারে, যাতে সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

তামাক চাষ দেশের জন্য একটি দ্বিমুখী সত্য—এটি যেমন জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। তাই হঠাৎ করে উৎপাদন হ্রাস না করে, সুপরিকল্পিত নীতির মাধ্যমে এই খাতকে পুনরায় কার্যকর করে তুললে, রাজস্ব ও কৃষকের আর্থিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।