সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রবণতা বাড়ছে কেন
সাশ্রয়ী এয়ারলাইন, স্মার্টফোন ও সহজ অনলাইন বুকিং-এর যুগে অনেক পর্যটক আর কারও সঙ্গের অপেক্ষায় থাকছেন না। গত এক দশকে “solo travel” শব্দগুচ্ছ খোঁজার হার গুগলে দ্বিগুণ হয়েছে। ব্রিটেনে ২০১১ সালে যেখানে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ একা ছুটি কাটাতেন, ২০২৪‑এ সেই হার বেড়ে ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে। আজ একা ভ্রমণকারীদের প্রায় ৮৪ শতাংশই নারী।
নিজেকে খুঁজে পাওয়ার তাগিদ
১৭‑শ শতকে ইংরেজ যুবক থমাস কোরিয়াট বন্ধুহীন পায়ে হেঁটে ইউরোপ ঘুরে নতুন স্বাদ ও প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন। আজকের ‘মি‑মুন’‑এও (হোটেল শৃঙ্খল হিলটনের ভাষায়) ভ্রমণকারীরা দূর জায়গার চেয়ে নিজের ভেতরটাই বেশি আবিষ্কার করতে চান। বালি কিংবা বেলিজের সাদা বালুর সৈকতে গিয়ে “নিজের আসল সংস্করণ” খুঁজে পাওয়ার গল্প ছড়াচ্ছে ব্লগে‑ভ্লগে। গবেষণায়ও দেখা যায়, ইচ্ছাকৃত একাকীত্ব সৃজনশীলতা ও মানসিক স্বস্তি বাড়ায়।
স্বাধীনতার রোমাঞ্চ
রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ভাষায়, “ভ্রমণ হলো যাওয়ার জন্যই যাওয়া”। একা ভ্রমণকারীরা রাতারাতি পরিকল্পনা বদলাতে বা হঠাৎ নতুন পথ ধরতে দ্বিধা করেন না। অচেনা বন্ধু বা সঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগও এতে বাড়ে। ‘আরোজ সলো, লিভ অ্যাজ ফ্রেন্ডস’ স্লোগান দেওয়া ট্যুর অপারেটর ফ্ল্যাশ‑প্যাক মহামারির আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ বুকিং পাচ্ছে।
মিলেনিয়াল ও জেন‑জেডের দাপট
মিলেনিয়াল ও জেন‑জেড প্রজন্ম আয়‑এর বড় অংশ ভ্রমণে খরচ করে। অনেকে বিয়ে বা সন্তানের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিচ্ছেন, ফলে হঠাৎ টিকিট কেটে বেরিয়ে পড়া তাঁদের জন্য সহজ। টিকটকে ইনফ্লুয়েন্সাররা একাই বেড়িয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছেন—“অপেক্ষা বন্ধ করো, শুরু করো!”
নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ
আজ একা ভ্রমণকারীদের প্রায় ৮৪ শতাংশই নারী। এক শতাব্দী আগেও নীতিবইয়ে নারীদের চ্যাপারন ছাড়া ভ্রমণ মানা ছিল; এখন অনলাইনে নিরাপত্তা টিপস আছে, আর সাহস‑সাধ্যও আছে। ঠিক কোরিয়াটের মতোই সময় ও সামর্থ্য মিলিয়ে তাঁরা পা ছড়িয়ে দিচ্ছেন দিগ্বিদিক।
মূলত, সাশ্রয়ী ভাড়া, প্রযুক্তি ও আত্ম‑অন্বেষণের আগ্রহ মিলে একা ভ্রমণকে গণমুখী করেছে। বন্ধুরা না মিললেও পথে নতুন বন্ধুত্ব, স্বাধীনতা আর নিজের সঙ্গে একান্ত সময়—সব মিলিয়ে ‘একাই ভ্রমণ’ এখনকার বৈশ্বিক রোমাঞ্চের বড় নাম।