০৯:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে আহত ২০ জন, বাড়িঘর ভাঙচুর ৩৫ বলে শতক হাঁকালেন হাবিবুর, বাংলাদেশের দ্রুততম টি–২০ সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৯২ জন চীনের বিজনেস স্কুলে বৈশ্বিক ট্যালেন্ট ধরে রাখার নতুন উদ্যোগ বাগেরহাট কারাগারে ভারতীয় জেলের মৃত্যু ঝিনাইদহ সীমান্তে ভারত যাওয়ার চেষ্টা: সাত বাংলাদেশি আটক , একজন ছাড়া বাকিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ঝিনাইদহে সংঘর্ষে প্রবাসী নিহত; বাড়িতে আগুন সব থেকে বেশি অবহেলিত নারী ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ইয়াংজি ডেল্টায় ‘লাভকেন্দ্রিক’ জরিমানা নিয়ন্ত্রণে চীনের নতুন আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা

মিয়ানমার সংকট: এশিয়াজুড়ে উদ্বাস্তু স্রোত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • 246

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সামরিক দমন-পীড়নের কারণে উদ্বাস্তু মিয়ানমারবাসী ছড়িয়ে পড়ছে এশিয়ার নানা দেশে
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে কঠোর অভিযান চালানোয় লাখো মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। একদিকে যেখানে নারী ও শিশুদের একটি বড় অংশ নিরাপত্তার আশায় আশ্রয় খুঁজছেঅন্যদিকে মিয়ানমারের বহু সবলকর্মক্ষম যুবক ও তরুণ প্রতিবেশী দেশগুলোতে গিয়েও নানা ধরনের সামাজিকনিরাপত্তাজনিত এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন চাপ: পার্বত্য অঞ্চল ও নাইকোংছড়িতে অস্থিরতা
বাংলাদেশের কক্সবাজারবান্দরবাননাইকোংছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তজুড়ে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা সঙ্কট বিদ্যমান। তার মধ্যে নতুন করে মিয়ানমারের সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের ফলে সশস্ত্র ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ এবং গোলাগুলির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেমিয়ানমারের একাধিক জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য ও সেনাবাহিনীর পালিয়ে আসা সদস্যরা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। তারা কখনো আশ্রয়প্রার্থী সেজে মানবিক সহায়তা নিচ্ছেআবার কখনো অস্ত্র ও মাদক পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এতে সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসা কর্মক্ষম তরুণরা অন্য দেশেও বিশৃঙ্খলার কারণ
জাপানের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছেহাজার হাজার মিয়ানমারের তরুণ এখন কাজের খোঁজে দেশটিতে ঢুকছে। অনেকেই সৎভাবে জীবন গড়ার চেষ্টা করলেওকর্মসংস্থান ও ভাষাজনিত সমস্যার কারণে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে বা হয়ে পড়ছে চরমপন্থার দিকে ধাবিত।

থাইল্যান্ডমালয়েশিয়াসিঙ্গাপুরভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করছেকেউ কেউ আবার পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নিচ্ছে এবং স্থানীয় সমাজে সামাজিক সংঘাত তৈরি করছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা: অস্ত্র পাচার ও বিদ্রোহী ঘাঁটি
বিশেষ করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কিছু সবল মিয়ানমার তরুণ একাধিকবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাগুলোকে তারা অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেএমন অভিযোগও উঠেছে।

এতে করে শুধু সীমান্ত নয়বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও নিরাপত্তা হুমকির নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে। অস্ত্রগুলিমাদক ও বিস্ফোরক পাচারের ঘটনা বাড়ছেযার পেছনে মিয়ানমার থেকে আসা এই সবলঅপ্রতিরোধ্য যুবাদের অংশগ্রহণ ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার ভার ও মানবিক সহনশীলতা চূড়ান্ত সীমানায়
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে। এসব শরণার্থীর মধ্যে চাকরি করার অনুমতি নেইফলে তারা স্থানীয় শ্রমবাজারে অবৈধভাবে প্রবেশ করছেকম মজুরিতে কাজ করছে এবং স্থানীয়দের কর্মসংস্থানে সংকট সৃষ্টি করছে।

এর ফলে কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছেস্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এবং মিয়ানমার থেকে আসা প্রত্যেক নতুন মুখই এখন সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

আঞ্চলিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতেমিয়ানমার সরকারের সামরিক আগ্রাসন শুধু দেশটির ভেতরেই নয়বাইরেও একপ্রকার মানবিক আগ্রাসনের’ সৃষ্টি করছে। হাজারো উদ্বাস্তুযারা কোনো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অধীনে নেইতারা এখন কার্যত পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের জন্য এই সংকট এখন দ্বিমাত্রিকএকদিকে মানবিক দায়অন্যদিকে নিরাপত্তা রক্ষা। কিন্তু সীমিত সম্পদ ও দীর্ঘদিন ধরে চলা রোহিঙ্গা সঙ্কটের চাপে বাংলাদেশ কতদিন এই ভার বহন করতে পারবেতা এখন বড় প্রশ্ন।

মিয়ানমারের সংকট আর শুধু মিয়ানমারের নয়
মিয়ানমার শুধু নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ধ্বংসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেইতাদের সংকট এখন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা অঞ্চলে। বাংলাদেশথাইল্যান্ডভারত থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত এই সঙ্কটের অভিঘাত স্পষ্ট।

বিশেষ করে মিয়ানমারের কর্মক্ষমসবলতরুণ গোষ্ঠীযারা দেশ থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে ঢুকছেতারা অর্থনীতিতে যেমন চাপ দিচ্ছেতেমনি নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যকেও বিঘ্নিত করছে।

এই বাস্তবতা আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং নতুন কূটনৈতিক কৌশলের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করে তুলেছে। এখন প্রশ্ন হলোমিয়ানমারের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে থাকলেওগোটা অঞ্চল কতদিন তাদের ছায়ায় চাপা পড়ে থাকবে?

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)

মিয়ানমার সংকট: এশিয়াজুড়ে উদ্বাস্তু স্রোত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা

০৮:০০:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সামরিক দমন-পীড়নের কারণে উদ্বাস্তু মিয়ানমারবাসী ছড়িয়ে পড়ছে এশিয়ার নানা দেশে
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে কঠোর অভিযান চালানোয় লাখো মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। একদিকে যেখানে নারী ও শিশুদের একটি বড় অংশ নিরাপত্তার আশায় আশ্রয় খুঁজছেঅন্যদিকে মিয়ানমারের বহু সবলকর্মক্ষম যুবক ও তরুণ প্রতিবেশী দেশগুলোতে গিয়েও নানা ধরনের সামাজিকনিরাপত্তাজনিত এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের সীমান্তে নতুন চাপ: পার্বত্য অঞ্চল ও নাইকোংছড়িতে অস্থিরতা
বাংলাদেশের কক্সবাজারবান্দরবাননাইকোংছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তজুড়ে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা সঙ্কট বিদ্যমান। তার মধ্যে নতুন করে মিয়ানমারের সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের ফলে সশস্ত্র ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ এবং গোলাগুলির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেমিয়ানমারের একাধিক জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য ও সেনাবাহিনীর পালিয়ে আসা সদস্যরা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। তারা কখনো আশ্রয়প্রার্থী সেজে মানবিক সহায়তা নিচ্ছেআবার কখনো অস্ত্র ও মাদক পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এতে সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসা কর্মক্ষম তরুণরা অন্য দেশেও বিশৃঙ্খলার কারণ
জাপানের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছেহাজার হাজার মিয়ানমারের তরুণ এখন কাজের খোঁজে দেশটিতে ঢুকছে। অনেকেই সৎভাবে জীবন গড়ার চেষ্টা করলেওকর্মসংস্থান ও ভাষাজনিত সমস্যার কারণে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে বা হয়ে পড়ছে চরমপন্থার দিকে ধাবিত।

থাইল্যান্ডমালয়েশিয়াসিঙ্গাপুরভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করছেকেউ কেউ আবার পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নিচ্ছে এবং স্থানীয় সমাজে সামাজিক সংঘাত তৈরি করছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা: অস্ত্র পাচার ও বিদ্রোহী ঘাঁটি
বিশেষ করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কিছু সবল মিয়ানমার তরুণ একাধিকবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাগুলোকে তারা অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেএমন অভিযোগও উঠেছে।

এতে করে শুধু সীমান্ত নয়বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও নিরাপত্তা হুমকির নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে। অস্ত্রগুলিমাদক ও বিস্ফোরক পাচারের ঘটনা বাড়ছেযার পেছনে মিয়ানমার থেকে আসা এই সবলঅপ্রতিরোধ্য যুবাদের অংশগ্রহণ ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার ভার ও মানবিক সহনশীলতা চূড়ান্ত সীমানায়
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে। এসব শরণার্থীর মধ্যে চাকরি করার অনুমতি নেইফলে তারা স্থানীয় শ্রমবাজারে অবৈধভাবে প্রবেশ করছেকম মজুরিতে কাজ করছে এবং স্থানীয়দের কর্মসংস্থানে সংকট সৃষ্টি করছে।

এর ফলে কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছেস্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এবং মিয়ানমার থেকে আসা প্রত্যেক নতুন মুখই এখন সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

আঞ্চলিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতেমিয়ানমার সরকারের সামরিক আগ্রাসন শুধু দেশটির ভেতরেই নয়বাইরেও একপ্রকার মানবিক আগ্রাসনের’ সৃষ্টি করছে। হাজারো উদ্বাস্তুযারা কোনো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অধীনে নেইতারা এখন কার্যত পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের জন্য এই সংকট এখন দ্বিমাত্রিকএকদিকে মানবিক দায়অন্যদিকে নিরাপত্তা রক্ষা। কিন্তু সীমিত সম্পদ ও দীর্ঘদিন ধরে চলা রোহিঙ্গা সঙ্কটের চাপে বাংলাদেশ কতদিন এই ভার বহন করতে পারবেতা এখন বড় প্রশ্ন।

মিয়ানমারের সংকট আর শুধু মিয়ানমারের নয়
মিয়ানমার শুধু নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ধ্বংসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেইতাদের সংকট এখন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা অঞ্চলে। বাংলাদেশথাইল্যান্ডভারত থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত এই সঙ্কটের অভিঘাত স্পষ্ট।

বিশেষ করে মিয়ানমারের কর্মক্ষমসবলতরুণ গোষ্ঠীযারা দেশ থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে ঢুকছেতারা অর্থনীতিতে যেমন চাপ দিচ্ছেতেমনি নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যকেও বিঘ্নিত করছে।

এই বাস্তবতা আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং নতুন কূটনৈতিক কৌশলের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করে তুলেছে। এখন প্রশ্ন হলোমিয়ানমারের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে থাকলেওগোটা অঞ্চল কতদিন তাদের ছায়ায় চাপা পড়ে থাকবে?