সাম্প্রতিক পরিস্থিতি: পাঁচ দিনে ভারী আর্থিক ধাক্কা
গত ১৭ মে ২০২৫ থেকে ভারত বাংলাদেশের উপর স্থলবন্দরপথে আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এর ফলে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যের উপর এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলার
ভারতের এই নিয়ন্ত্রণ প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব ফেলছে, যা ভারতের বাজারে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৪২ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাত, যার বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৬১৮ মিলিয়ন ডলার, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আগে এসব পণ্য স্থলপথে সহজেই সরবরাহ করা যেত, কিন্তু এখন সেগুলো সমুদ্রপথে পাঠাতে হচ্ছে, ফলে পরিবহন ব্যয় ও সময় উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ নিজেরই ক্ষতি করছে। তারা ভারতের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না।” তিনি বলেন, স্থলপথের পরিবর্তে সমুদ্রপথে রপ্তানি করলে খরচ বাড়বে, সময়মতো পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে না, এবং এতে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা হ্রাস পাবে।
স্টেকহোল্ডারদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা:
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, সমুদ্রপথে রপ্তানি খরচ বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য পৌঁছাতে দেরি হবে, যার ফলে ভারতীয় ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে এবং অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্প:
ভারতের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (CITI) মনে করছে, এই নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় উৎপাদকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান রাকেশ মেহরা জানান, “বাংলাদেশি পোশাক আমদানির খরচ বেড়ে যাবে এবং এতে ভারতীয় গার্মেন্টস নির্মাতাদের জন্য নতুন বাজার তৈরি হবে।” এই খাত থেকে ১,০০০ থেকে ২,০০০ কোটি রুপির বাড়তি ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা আশা করছেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা:
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ মূলত পাল্টা প্রতিক্রিয়া। এর আগে বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল, যেমন সুতা ও চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতীয় কার্গোর উপর ট্রানজিট ফি। অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং ভারতের একটি “সংকেতমূলক পদক্ষেপ”।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বর্তমান পরিস্থিতি দ্বিপাক্ষিক আস্থা ও সহযোগিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। ভারতের নিষেধাজ্ঞা হয়তো স্বল্পমেয়াদে দেশটির অভ্যন্তরীণ শিল্পে লাভ এনে দিচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই উত্তেজনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। উভয় দেশই লাভবান হতে পারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্য সম্পর্ক থেকে—যার জন্য দরকার আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।