রচনার সত্যতা প্রমাণে শিক্ষার্থীদের এআই নির্ভরতা
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা কেবল লেখার জন্য নয়, বরং প্রমাণের জন্যও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা নিচ্ছে যে তাদের রচনাগুলো মানুষই লিখেছে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা একই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন চুরি ধরা এবং রচনায় বট ব্যবহারের প্রমাণ খোঁজার জন্য।
নিজ হাতে লেখা প্রবন্ধও সন্দেহের তালিকায়
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাইলস পুলভার্স কখনোই এআই দিয়ে লেখা তৈরি করেন না। কিন্তু জমা দেওয়ার আগে তিনি প্রতিটি প্রবন্ধ এআই ডিটেক্টরের মাধ্যমে যাচাই করেন। অনেক সময় তার আসল লেখাও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হয়। তখন তিনি তা আবার লেখেন, যতক্ষণ না সফটওয়্যার সেটি মানবসৃষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে।
তিনি বলেন, “আগে আমি নিশ্চিত থাকতে পারতাম যে আমার লেখা মেনে নেওয়া হবে। এখন দেখি আমার আসল লেখাও সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা পড়ে। এটা বিরক্তিকর, তবে ২০২৫ সালের বাস্তবতা।”
শিক্ষকরা আরও সতর্ক, ছাত্ররা আরও প্রতিরক্ষামূলক
শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা এআই ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষকরা আরও সতর্ক হয়ে উঠছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি বেসরকারি স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক লেটিশিয়া ভিয়াসেনিওর বলেন, “আমি ক্লাসেই যতটা সম্ভব রচনালেখার কাজ দিই। বাড়ির কাজ দিলে অর্ধেক শিক্ষার্থী এআই ব্যবহার করে।”
নিজেকে প্রমাণে কৌশলী হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের
শুধু সততার ভিত্তিতে রচনা লিখলেই চলছে না। এখন অনেককে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তারা নিজেরাই লিখেছে। মারকাস উলার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, তার এক বন্ধুকে গুগল ডকুমেন্টসের সম্পাদনা ইতিহাস দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে সে নিজে লিখেছে।
১৬ বছর বয়সী উলার বলেন, “আমি এখন নিয়মিত এআই ডিটেক্টরে রচনা যাচাই করে দেখি। এটা ভালো সাবধানতা।”
ভদ্র বা শুদ্ধ ভাষাও হতে পারে সন্দেহের কারণ
অনেক সময় সুন্দর ভাষায় লেখা, ব্যাকরণগত শুদ্ধতা বা কিছু নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহারের জন্যও লেখাকে সন্দেহ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘delve’, ‘tapestry’, বা ‘valuable insight’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করলেই কিছু সফটওয়্যার তা বটের লেখা হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলে।
‘Undetectable AI’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভান লিওস বলেন, “ভদ্রভাবে বা প্রাঞ্জলভাবে লিখলেও আজকাল শাস্তি পেতে হয়।”
ভিন্ন ভিন্ন ডিটেক্টরের ভিন্ন ভিন্ন রায়
১৬ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী হ্যারিসন চেকেটস জানান, তিনি একবার নিজ হাতে লেখা ইংরেজি প্রবন্ধ পাঁচটি আলাদা এআই ডিটেক্টরে চালিয়ে দেখেন। কেউ বলেছে এটি পুরোপুরি মানবসৃষ্ট, কেউ বলেছে বট লিখেছে। তিনি এরপর থেকে আর এসব টুল ব্যবহার করেন না। তাঁর মতে, “শিক্ষকরাই আসল এআই ডিটেক্টর। তারা বুঝতে পারেন কে কীভাবে লিখেছে।”
ভুল সন্দেহের বিপরীতে আত্মপক্ষ সমর্থন
ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ক্লেয়ার ক্রিগার তার প্রতিটি রচনা জমা দেওয়ার আগে ডিটেক্টরে যাচাই করেন। তবে এতে এক ধরনের মিথ্যা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় বলেও মনে করেন তিনি। একবার একটি টুল বইয়ের উদ্ধৃতি অংশকেও বটের লেখা বলে চিহ্নিত করে। পরে শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি প্রমাণ দেন লেখাটি তার নিজের লেখা।
এআই নিয়ে অতিরিক্ত শঙ্কায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
গত বছর ইউনিভার্সিটি অব নর্থ জর্জিয়ার এক শিক্ষার্থীকে এআই ব্যবহারের সন্দেহে একাডেমিক প্রোবেশনে রাখা হয়। তিনি জানান, তিনি শুধু বানান ও ব্যাকরণ ঠিক করতে গ্র্যামারলি ব্যবহার করেছিলেন। পরে তিনি গ্র্যামারলির সঙ্গে মিলে শিক্ষামূলক ভিডিও বানিয়েছেন, যেখানে দেখানো হয় কীভাবে গ্র্যামারলি ব্যবহার করা উচিত।
গ্র্যামারলি বর্তমানে একটি ‘লেখকতা যাচাই’ টুল তৈরি করেছে, যেখানে পুরো লেখার প্রক্রিয়া ট্র্যাক করা হয়—কোন অংশ টাইপ করা হয়েছে, কোনটা পেস্ট করা হয়েছে এবং কোন অংশ এআই সাহায্যে সম্পাদিত।
যখন লেখাটি শেষ হয়, তখন একটি রিপোর্ট তৈরি হয়, যা শিক্ষকদের দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করতে পারে লেখাটি কিভাবে লেখা হয়েছে।
‘লেখার ওপর নজরদারি রাজ্য’ তৈরি হয়েছে
গ্র্যামারলির শিক্ষা শাখার প্রধান জেনি ম্যাক্সওয়েল বলেন, এখনকার শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন যাতে তাদের লেখা মানবসৃষ্ট শোনায়। প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ গ্র্যামারলির এআই ও প্লেজিয়ারিজম ডিটেক্টর ব্যবহার করছেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, “এটা এখন এক ধরনের লেখালেখির পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে।”