রাঙ্গামাটি থেকে-
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের পাহাড়ি ঢালে প্রতিদিন ভোরে শুরু হয় লক্ষী রানী চাকমার দিন। ঝিরি-ঝর্ণা পেরিয়ে, মাথায় কোদাল আর পিঠে ঝুলি নিয়ে তিনি পৌঁছে যান তাদের পারিবারিক জুম খেতে। এই পাহাড়ি নারী নিজের ঘরের ভরণপোষণ তো করেই চলেছেন, পাশাপাশি ধরে রেখেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা জুম চাষের ঐতিহ্য।
জুম চাষে নারীর অবদান
চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৬০,০০০ পরিবার জুম চাষে নিযুক্ত, যার মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কার, ফসল সংগ্রহ এবং সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জুম চাষের বেশিরভাগ কাজেই নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন, বিশেষ করে বীজ বপন ও ফসল সংরক্ষণে ।
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও খাদ্য নিরাপত্তা
জুম চাষের ফলোয়িং পিরিয়ড বা বিশ্রামকাল পূর্বে ১০-১৫ বছর থাকলেও বর্তমানে তা গড়ে মাত্র ৩ বছরে নেমে এসেছে। এর ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, ফসলের বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জুম চাষে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩৮০ ডলার প্রতি হেক্টর হলেও আয় মাত্র ৩৬০ ডলার, যা কৃষকদের জন্য টেকসই নয় ।
সরকারি সহায়তা ও নীতিগত প্রতিবন্ধকতা
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থাকলেও, জুম চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক সময় বন সংরক্ষণের নামে জুম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা পাহাড়ি জনগণের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ।
ভবিষ্যতের পথ
জুম চাষের টেকসইতা নিশ্চিত করতে এবং পাহাড়ি নারীদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজন:
- প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা: জুম চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
- ভূমির অধিকার নিশ্চিতকরণ: পাহাড়ি জনগণের ভূমির অধিকার স্বীকৃতি ও রক্ষা।
- বিকল্প জীবিকা: পশুপালন, হস্তশিল্প ও ছোট ব্যবসায় সহায়তা প্রদান।
- নারীর ক্ষমতায়ন: নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা।
লক্ষী রানীর মতো হাজারো পাহাড়ি নারী তাদের নীরব শ্রম দিয়ে টিকিয়ে রেখেছেন পাহাড়ের খাদ্য নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তাদের সংগ্রামের স্বীকৃতি ও সহায়তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।