১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

‘চতুর ঐক্যে’ গণতন্ত্র ও অর্থনীতির সংকট

২৬ মে ২০২৫, ঢাকার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘শীর্ষনিউজ ডটকম’-এর যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বিরোধী দলের কিছু নেতার ‘ঐক্য’ বিষয়ক বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। খসরু অভিযোগ করেন, অনেকে নিজের বা দলের সুবিধার জন্য ‘ঐক্য’-এর কথা বলছেন, যা প্রকৃত অর্থে বিভাজন বাড়ায়—ঐক্য নয়।

খসরুর বক্তব্য

আমির খসরু বলেন, প্রকৃত রাজনৈতিক ঐক্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তিনি মন্তব্য করেন, “নিজের স্বার্থে যদি কেউ ঐক্যের কথা বলেন, সেটা আসলে ঐক্য নয়।” আন্দোলনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে এবং সব কৃতিত্ব এককভাবে দাবি করলে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা অতীতে আন্দোলনে জয় এনেছে, তাদের অবদান স্বীকার না করে শুধু শেখ হাসিনাকে সরানোর কথা বললে সেই দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

খসরু আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের গণতন্ত্রকে সম্মান জানানোর বক্তব্য এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হুমকি

বিশ্লেষকেরা  সতর্ক করেছেন, খসরু যে ‘চতুর ঐক্য’-এর চরিত্র জনগনের সামনে উম্মোচিত করেছেন এর থেকে স্পষ্ট এ ধরনের ঐক্যের নাম নিয়ে চতুরতা বাস্তবে বাংলাদেশের নাজুক গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য হুমকি হতে পারে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বিভাজন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের অভাব সংস্কার প্রক্রিয়াকে স্থবির করে ফেলতে পারে এবং মেরুকরণকে আরও গভীর করে তুলতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্দিষ্ট সময়সূচি ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক আলোচনা সরকারের বেসামরিক কর্তৃত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস সংকট আরও বাড়াচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাস্তব প্রভাব ফেলেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে দাঁড়াবে, যেখানে আগের বছরে ছিল ৫.১ শতাংশ।

এডিবি এই পতনের জন্য নীতিগত অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকে দায়ী করেছে। এদিকে আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৩ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তারা এর জন্য জনঅসন্তোষ, কঠোর আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের ঝুঁকি বৃদ্ধিকে দায়ী করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধস নেমেছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট এফডিআই ৭১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৪.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উপসংহার ও করণীয়

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার অপরিহার্য।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে এক সাম্প্রতিক বৈঠকে বিনিয়োগকারীরা স্পষ্ট করেছেন যে, স্বচ্ছ শাসন, সময়মতো নির্বাচন এবং নীতিগত ধারাবাহিকতা ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন।

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, প্রকৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ঐক্য—যা গণতান্ত্রিক আদর্শে ভিত্তিশীল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে চালিত নয়—সেটাই আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক অর্জন রক্ষা ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য একমাত্র পথ।

‘চতুর ঐক্যে’ গণতন্ত্র ও অর্থনীতির সংকট

০৪:০৪:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

২৬ মে ২০২৫, ঢাকার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘শীর্ষনিউজ ডটকম’-এর যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বিরোধী দলের কিছু নেতার ‘ঐক্য’ বিষয়ক বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। খসরু অভিযোগ করেন, অনেকে নিজের বা দলের সুবিধার জন্য ‘ঐক্য’-এর কথা বলছেন, যা প্রকৃত অর্থে বিভাজন বাড়ায়—ঐক্য নয়।

খসরুর বক্তব্য

আমির খসরু বলেন, প্রকৃত রাজনৈতিক ঐক্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তিনি মন্তব্য করেন, “নিজের স্বার্থে যদি কেউ ঐক্যের কথা বলেন, সেটা আসলে ঐক্য নয়।” আন্দোলনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে এবং সব কৃতিত্ব এককভাবে দাবি করলে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা অতীতে আন্দোলনে জয় এনেছে, তাদের অবদান স্বীকার না করে শুধু শেখ হাসিনাকে সরানোর কথা বললে সেই দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

খসরু আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের গণতন্ত্রকে সম্মান জানানোর বক্তব্য এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হুমকি

বিশ্লেষকেরা  সতর্ক করেছেন, খসরু যে ‘চতুর ঐক্য’-এর চরিত্র জনগনের সামনে উম্মোচিত করেছেন এর থেকে স্পষ্ট এ ধরনের ঐক্যের নাম নিয়ে চতুরতা বাস্তবে বাংলাদেশের নাজুক গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য হুমকি হতে পারে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বিভাজন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের অভাব সংস্কার প্রক্রিয়াকে স্থবির করে ফেলতে পারে এবং মেরুকরণকে আরও গভীর করে তুলতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্দিষ্ট সময়সূচি ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক আলোচনা সরকারের বেসামরিক কর্তৃত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস সংকট আরও বাড়াচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাস্তব প্রভাব ফেলেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে দাঁড়াবে, যেখানে আগের বছরে ছিল ৫.১ শতাংশ।

এডিবি এই পতনের জন্য নীতিগত অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকে দায়ী করেছে। এদিকে আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৩ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তারা এর জন্য জনঅসন্তোষ, কঠোর আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের ঝুঁকি বৃদ্ধিকে দায়ী করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধস নেমেছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট এফডিআই ৭১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৪.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উপসংহার ও করণীয়

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার অপরিহার্য।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে এক সাম্প্রতিক বৈঠকে বিনিয়োগকারীরা স্পষ্ট করেছেন যে, স্বচ্ছ শাসন, সময়মতো নির্বাচন এবং নীতিগত ধারাবাহিকতা ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন।

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, প্রকৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ঐক্য—যা গণতান্ত্রিক আদর্শে ভিত্তিশীল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে চালিত নয়—সেটাই আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক অর্জন রক্ষা ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য একমাত্র পথ।