নতুন যুগের প্রযুক্তির সন্ধানে ৬.৪ বিলিয়ন ডলারের বাজি
গত সপ্তাহে ওপেনএআই ৬.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কিনেছে ব্রিটিশ ডিজাইনার স্যার জনি আইভের ডিজাইন হাউস ‘io’। যদিও এই প্রতিষ্ঠান এখনো কোনো পণ্য বাজারে আনেনি, তবু এমন বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রমাণ করে—আইভের ওপর আস্থা অটুট। কারণ, তিনিই স্টিভ জবসের সঙ্গে মিলে আইফোন, আইপ্যাড ও আইপডের মতো যুগান্তকারী পণ্যের রূপকার।
ওপেনএআই-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান এখন আইভের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি ডিভাইস তৈরির লক্ষ্যে—যার মাধ্যমে তারা স্মার্টফোনকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে চান।
কী হবে এই নতুন ডিভাইস?
নতুন এই ডিভাইসটি সম্পর্কে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এটি দেখতে কেমন হবে বা কীভাবে কাজ করবে—তা ধোঁয়াটে। তবে জনি আইভ এটিকে বর্ণনা করেছেন “বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রযুক্তি” হিসেবে। উদ্দেশ্য একটাই—এই ডিভাইস স্মার্টফোনের জায়গা দখল করবে, যেটি আমরা প্রতিদিন সঙ্গে রাখি।
এই উদ্ভাবন যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে এটি স্মার্টফোন শিল্পের একটি বড় ধাক্কা হতে পারে—একটি খাত, যার বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৭০০ কোটির বেশি ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সমালোচনার ঝুঁকি এবং বাস্তবতা
অনেকে এই উদ্যোগকে অতিরঞ্জিত ভাবছেন। ওপেনএআই আগে কখনো কোনো হার্ডওয়্যার তৈরি করেনি। অন্যদিকে, জনি আইভ বর্তমানে ৫৮ বছর বয়সী, যেখানে আইফোন তৈরির সময় তিনি ছিলেন চল্লিশের কোঠার নিচে।
তবে ইতিহাস বলছে—অভিজ্ঞতা না থাকলেও আইভ-জবস যুগল মিলে আইফোনের মাধ্যমে প্রযুক্তির গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে অ্যাপলও ছিল ফোন নির্মাণে নবাগত। আজকের স্মার্টফোন বাজারও এমন এক স্থবিরতায় পৌঁছেছে, যেখানে পরিবর্তনের জায়গা তৈরি হয়েছে।
স্মার্টফোন এখন আর উদ্ভাবনের প্রতীক নয়
গত এক দশকে স্মার্টফোনে তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। প্রতিবছর গৎবাঁধা উন্নয়ন—আরও কিছু পিক্সেল, সামান্য বেশি ব্যাটারি, আর কিছু অ্যাপ—এই পর্যন্তই। নতুন ফোন কিনলেও সেটি আগেরটির চেয়ে খুব একটা আলাদা কিছু নয়।
এছাড়া, স্মার্টফোন তৈরি হয়েছে মূলত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য। এটি ইমেইল চেক, ছবি বিনিময় ও সামাজিক যোগাযোগে দারুণ হলেও—এআই ব্যবহারের জন্য তা যথার্থ নয়।
জনি আইভ কি পারবে স্মার্টফোনকে হার মানাতে?
জনি আইভ ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন ধরনের ডিভাইসের পথ খুলে দিয়েছে। এখন দরকার একজন বুদ্ধিদীপ্ত ডিজাইনার, যিনি এর রূপ দিতে পারবেন।
এছাড়া, স্মার্টফোনের নেতিবাচক দিকগুলোও সামনে আসছে। স্কুলে নিষেধাজ্ঞা, কিশোরদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে এর বিকল্পের সময় এসেছে। এখনো যদি এই পরিবর্তন না হয়, আগামী এক দশকে আমরা হয়তো নিজেদেরকেই প্রশ্ন করবো—কীভাবে এতটা ক্ষমতা ফোনের হাতে দিয়েছিলাম?
আইভ ও অল্টম্যানের এই যুগলবন্দি হয়তো অনেকের চোখে ‘হাইপ’—তবে তাদের প্রচেষ্টা অমূল্য হতে পারে। “বিশ্বের সবচেয়ে দারুণ প্রযুক্তি” বানানো সহজ কাজ নয়—তবু এই শিল্প একদিন বদলাবেই। আর হয়তো সেই পরিবর্তনের নেতৃত্বে থাকবে সেই মানুষটি—যিনি একসময় স্মার্টফোনকে সৃষ্টি করেছিলেন।