জাপানের পদক্ষেপ
জাপানের কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি ঘোষণা করেছেন, সরকারের মজুদকৃত ৩০০ হাজার টন চালের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৯০,৮২৪ মেট্রিক টন) শুল্কবিহীনভাবে সরাসরি ১৯টি বড় খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে ৫ কেজি ব্যাগে গড় চালের দাম জুনের প্রথম সপ্তাহে আনুমানিক ২,০০০ ইয়েনে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুত দরপত্র জমা, চুক্তি স্বাক্ষর ও সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
মূলনীতির বিশ্লেষণ
১. সরবরাহ নিশ্চিতি
• সরকারের মালিকানাধীন খাদ্য মজুদ সরাসরি খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে বাজারে স্বল্প সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করলে দামের ঊর্ধ্বগতি আটকানো যায়।
২. মধ্যস্বত্ত্ববিহীনতা হ্রাস
• মধ্যস্থতাকারীদের বাদ দিয়ে সরাসরি বড় বিক্রেতার কাছে চাল হস্তান্তর করলে বিক্রয় খরচ ও মুনাফা কমে যায়, ফলে ভোক্তা মূল্য হ্রাস পায়।
৩. মূল্য পূর্বাভাস ও লক্ষ্য নির্ধারণ
• সরকার আগেভাগে লক্ষ্য মূল্য নির্ধারণ ও সময়সীমা ঘোষণা করলে বাজারের প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মজুদকারীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
৪. মান উন্নয়ন উদ্যোগ
• চাল পলিশিংয়ের মতো মান বৃদ্ধির প্রকল্পে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংযুক্ত করে বিক্রেতাদের সুবিধাজনক মান নিশ্চিত করা যায়, যাতে নিম্নমানের চাল বাজারে চলে না আসে।
বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্য করণীয়
১. সরকারি মজুদ মুক্তির ত্বরান্বিত ব্যবস্থা
• তিস্তা, কর্ণফুলী ও অন্যান্য সরকারি সংগ্রহকৃত চাল দ্রুত বিক্রয়ের জন্য বড় সুপারশপ ও বিক্রেতাদের কাছে দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে।
২. দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা
• বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি দরপত্র প্রক্রিয়া চালু করে মধ্যস্বত্ত্ববিহীনতা কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করতে পারে।
৩. গড় মূল্য নির্ধারণ ও সময়সীমা
• সরকার ৫ কেজি চালের লক্ষ্য মূল্য ঘোষণা করলে বাজার মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আগামী এক মাসে ৫ কেজির দাম ৫০০ টাকায় নামানোর মাইলস্টোন নির্ধারণ করা যেতে পারে।
৪. মজুদকারি বিক্রেতা কার্ড
• নির্বাচিত বড় খুচরা বিক্রেতাদের ‘মজুদকারি বিক্রেতা’ কার্ড দিয়ে সরাসরি মজুদ বরাদ্দ করলে ঝামেলা কমে এবং সময়মতো পণ্য পৌঁছবে।
৫. মান নিয়ন্ত্রণ ও ব্র্যান্ডিং
• স্থানীয় চাল মিল ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পলিশিং, প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এতে ভোক্তা প্রত্যাশা বজায় থাকবে এবং নিম্নমানের চালের কালোবাজারি রুদ্ধ করা সম্ভব হবে।
৬. মূল্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা
• জেলা পর্যায়ে সরবরাহ ও মূল্য পর্যবেক্ষণের জন্য মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টাল চালু করতে পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিক্রেতা ও ভোক্তা তথ্য দিলে সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশিত প্রভাব
বাংলাদেশে সরকারি মজুদ বিক্রয়ে প্রশাসনিক জটিলতা, পর্যাপ্ত ওয়্যারহাউস অবকাঠামোর অভাব এবং মধ্যস্থতাকারীদের আপত্তি প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে জাপানের উদাহরণ প্রমাণ করে, সরাসরি বিক্রয় ও দরপত্র পদ্ধতি বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। খুচরা পর্যায়ে চালের দাম নিম্নমধ্যবিত্তের ভোক্তাদের জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইতে সহায়ক হবে। ঢাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রয়োগের পর সাফল্য পর্যবেক্ষণ করে এটি সারা দেশে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। দ্রুত সিদ্ধান্ত ও স্বচ্ছতা হল সফলতার চাবিকাঠি।