ইউরোপীয় শিল্পে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে কয়েক দিনের মধ্যেই
শাংহাই থেকে বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেম্বার অফ কমার্স সতর্ক করে জানায়, চীনের দুর্লভ খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ইউরোপীয় কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম কয়েক দিনের মধ্যেই থামিয়ে দিতে পারে।
চীন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছে। এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরই চীন সাতটি দুর্লভ খনিজ উপাদান ও ম্যাগনেট রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব খনিজ বিদ্যুৎচালিত যানবাহন থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জামসহ বহু শিল্পজাত পণ্যে ব্যবহৃত হয়।
ইউরোপে কাঁচামালের সংকট
বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সভায় ইউরোপীয় চেম্বার সভাপতি জেন্স এস্কেলান্ড জানান, “আমরা এখন ইউরোপে এক সংকটজনক অবস্থায় আছি। কিছু কোম্পানির কাঁচামাল এ সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “এটি খুব দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। অন্যথায় ইউরোপীয় প্রস্তুতকারকদের জন্য ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”
অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা
যদিও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বৈঠকে একে অপরের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে, তবে দুর্লভ খনিজ রপ্তানির জন্য অনুমোদনপ্রক্রিয়া বহাল রয়েছে। এস্কেলান্ড বলেন, এসব লাইসেন্স অনুমোদনের ক্ষেত্রে এখন “গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণে জট” তৈরি হয়েছে।
জুনে চীন–ইইউ বৈঠক
মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুনের শুরুতে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য কর্মকর্তারা প্যারিসে বৈঠকে বসবেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও জুলাইয়ে বেইজিং সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হঠাৎ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা: প্রস্তুতির সুযোগ না থাকায় ঝুঁকিতে কোম্পানিগুলো
ইইউ চেম্বারের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডাম ডানেট জানান, মঙ্গলবার ইউরোপ ও চীনের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোর এক গোলটেবিল আলোচনায় রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুটি গুরুত্ব পায়। সেখানে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তারা অনুমোদন আবেদনের বিপুল চাপ সামাল দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ডানেট বলেন, “যথাযথ রূপান্তর সময় না দিয়েই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোর পূর্বপ্রস্তুতির সুযোগ ছিল না, ফলে ইউরোপে বর্তমানে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে, তা এড়ানো যেত।”
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবারের বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ব্যবসায়ীদের জন্য “ন্যায়সঙ্গত, স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও পূর্বাভাসযোগ্য” নীতিগত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়।
চীনের অর্থনীতিতে হতাশা ও ইউরোপীয়দের উদ্বেগ
এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের আতঙ্ক এমন এক সময় তৈরি হয়েছে, যখন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগের চেয়ে আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চেম্বার পরিচালিত বার্ষিক জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনে ব্যবসা করা কঠিন হয়েছে বলে ৭৩% সদস্য মনে করছেন। পাশাপাশি ৭১% মনে করেন চীনের অর্থনৈতিক মন্থরতা ভবিষ্যতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে।
চেম্বার সভাপতি এস্কেলান্ড বলেন, “মূল সমস্যা হলো, গত দেড় বছরে চীনে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি দেশীয় বাজারের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে।”
জরিপে আরও দেখা গেছে, গত বছর রেকর্ড ৬৩% সদস্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক জটিলতা বা বাজারে প্রবেশাধিকারে প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়িক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। শিল্পভেদে এই হার ভিন্ন—যেমন চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে ১০০%, আর অটোমোটিভ খাতে ৩৯%।