০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বঙ্গোপসাগরে অস্থিরতা: প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার আশঙ্কা

ঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ পূর্ব ভারতের কিছু অংশে প্রবল বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বর্তমান অবস্থা

২৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের এই নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বর্তমানে সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং দিঘা থেকে ১১০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। ২৯ মে বিকালের মধ্যে এটি সাগর দ্বীপ ও খেপুপাড়া এলাকার মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) দেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলায় সতর্কতা জারি করেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সম্ভাব্য প্রভাব

আবহাওয়া পরিস্থিতি:

  • বৃষ্টিপাত: ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাগুলোতে ৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে।
  • বায়ু প্রবাহ: উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে ৬০ কিমি পর্যন্ত বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
  • সমুদ্র পরিস্থিতি: বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও সংলগ্ন মধ্যাঞ্চলে সাগর অতি প্রক্ষেপ বা অত্যন্ত উত্তাল থাকবে বলে পূর্বাভাস। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত জেলেদেরকে সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বন্যার ঝুঁকি:

ভারী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসের সম্মিলিত প্রভাবে নিচু উপকূলীয় এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বঙ্গোপসাগরের উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়

বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট বহু বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের নজির রয়েছে:

  • ঘূর্ণিঝড় সিডর (২০০৭): ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনে ৩,০০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটায় এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি করে।
  • ঘূর্ণিঝড় নারগিস (২০০৮): মিয়ানমারে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১,৩৮,০০০ জন মারা যান, যা এ অঞ্চলের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।
  • ঘূর্ণিঝড় আম্ফান (২০২০): সুপার সাইক্লোন আম্ফান ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটায়।

এই অতীতের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের প্রতি কতটা সংবেদনশীল এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতির গুরুত্ব কতটা।

উপসংহার

বর্তমান গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পূর্ব ভারতের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দাদেরকে সতর্ক থাকার ও সরকারী নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় আমাদের জন্য একটি শিক্ষা—প্রস্তুতি, সচেতনতা ও সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়াই পারে এর ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে ভালোভাবে মোকাবেলার উপায় খুঁজে পেতে পারি।

বঙ্গোপসাগরে অস্থিরতা: প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার আশঙ্কা

০৬:৩৪:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

ঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ পূর্ব ভারতের কিছু অংশে প্রবল বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বর্তমান অবস্থা

২৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের এই নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বর্তমানে সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং দিঘা থেকে ১১০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। ২৯ মে বিকালের মধ্যে এটি সাগর দ্বীপ ও খেপুপাড়া এলাকার মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) দেশের ১৪টি উপকূলীয় জেলায় সতর্কতা জারি করেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সম্ভাব্য প্রভাব

আবহাওয়া পরিস্থিতি:

  • বৃষ্টিপাত: ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাগুলোতে ৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে।
  • বায়ু প্রবাহ: উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে ৬০ কিমি পর্যন্ত বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
  • সমুদ্র পরিস্থিতি: বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও সংলগ্ন মধ্যাঞ্চলে সাগর অতি প্রক্ষেপ বা অত্যন্ত উত্তাল থাকবে বলে পূর্বাভাস। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত জেলেদেরকে সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বন্যার ঝুঁকি:

ভারী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসের সম্মিলিত প্রভাবে নিচু উপকূলীয় এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বঙ্গোপসাগরের উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়

বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট বহু বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের নজির রয়েছে:

  • ঘূর্ণিঝড় সিডর (২০০৭): ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনে ৩,০০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটায় এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি করে।
  • ঘূর্ণিঝড় নারগিস (২০০৮): মিয়ানমারে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১,৩৮,০০০ জন মারা যান, যা এ অঞ্চলের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।
  • ঘূর্ণিঝড় আম্ফান (২০২০): সুপার সাইক্লোন আম্ফান ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটায়।

এই অতীতের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের প্রতি কতটা সংবেদনশীল এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতির গুরুত্ব কতটা।

উপসংহার

বর্তমান গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পূর্ব ভারতের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দাদেরকে সতর্ক থাকার ও সরকারী নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় আমাদের জন্য একটি শিক্ষা—প্রস্তুতি, সচেতনতা ও সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়াই পারে এর ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে ভালোভাবে মোকাবেলার উপায় খুঁজে পেতে পারি।