টোকিও — যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মার্কিন তুলা, তেল ও গ্যাস আরও বেশি পরিমাণে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার টোকিওতে নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয় টোকিওতে আয়োজিত নিক্কেই-এর বার্ষিক ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন, তা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যদি মার্কিন পণ্য—বিশেষ করে তুলা ও জ্বালানি—বেশি পরিমাণে কিনে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এতে করে অন্য উৎস থেকে আমদানি কমিয়ে মার্কিন বাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হবে।
“উদাহরণস্বরূপ, আমরা এখন অনেক তুলা কিনি মধ্য এশিয়া থেকে,” বলেন ইউনূস। “ভারত থেকেও কিনি, আরও অনেক দেশ থেকেও। এখন ভাবছি, কেন না এই তুলাগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কেনা হোক, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসে।”
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে তুলার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬১ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি করে, যার একটি বড় অংশ আসে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো মধ্য এশীয় দেশগুলো থেকে। ওই অর্থবছরে দেশের মোট আমদানির প্রায় ১২.৫ শতাংশ ছিল তুলা।
“যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদকরা এখন আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছে,” বলেন ইউনূস, “এবং তারা আমাদের প্রশাসনের কিছু অংশে রাজনৈতিক প্রবেশাধিকার অর্জনে সহায়তা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ‘কটন বেল্ট’ এলাকার রাজ্যগুলো কংগ্রেস ও সিনেটের সদস্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যারা আমাদের পক্ষে সমর্থন জানাতে পারেন।”
জ্বালানি প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ তেলের অধিকাংশ আমদানি করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল আমদানি করা যেতে পারে।
তবে ইউনূস স্বীকার করেন, এখনো বাণিজ্য আলোচনা কবে শুরু হবে বা শুল্ক কতটা হ্রাস পাবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা বিষয়টিকে হুমকি হিসেবে দেখছি না, বরং একটি সুযোগ হিসেবেই দেখছি।”
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হওয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে। আদালত রায়ে জানায়, সংবিধান অনুযায়ী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে এবং প্রেসিডেন্ট একতরফাভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না।
দেশীয় বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউনূস নিক্কেইকে জানান, বর্তমান সরকারের তথ্যমতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশেই ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ চিহ্নিত করে জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই বিপুল অর্থ পুনরুদ্ধার করা গেলে বর্তমান সরকার দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠন করবে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হবে এবং দরিদ্র জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজে লাগানো হবে।
গত সপ্তাহে একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, ইউনূস নাকি এক ছাত্রনেতাকে বলেছিলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে একমত না হয়, তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, “আমি বাংলাদেশে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিইনি। যেহেতু বাংলাদেশে কিছু বলিনি, তাহলে যদি জাপানে এসে কিছু বলি, সেটিই আমার জন্য অনেক বড় ঝামেলার কারণ হবে।”